ঈশ্বর পুরী ছিলেন একজন সন্ন্যাসী, এবং তিনি মাধ্ব সম্প্রদায়ের মাধবেন্দ্র পুরীর শিষ্য ছিলেন। তিনি ভারতের গয়াতে চৈতন্যের সাথে সাক্ষাৎ করেন যেখানে মহাপ্রভু পুরীকে তার গুরু হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। ঈশ্বরপুরী মহাপ্রভুর অনুরোধে সদয়ভাবে সম্মত হন, বেশ কয়েক দিন পরে মহাপ্রভুকে তাঁর শিষ্য হিসাবে গ্রহণ করেন এবং তাঁকে গোপাল-মন্ত্রে দীক্ষা প্রদান করেন।[১][২]

ঈশ্বর পুরী মহারাজ
ব্যক্তিগত তথ্য
ধর্মহিন্দুধর্ম
ক্রমব্রাহ্ম সম্প্রদায়
দর্শনদ্বৈতবেদান্ত এবং হরে কৃষ্ণ মন্ত্র
ধর্মীয় জীবন
গুরুমাধবেন্দ্র পুরী গোস্বামী

শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে কৃষ্ণদাস কবিরাজ বর্ণনা করেছেন :

'ভক্তিরূপ কল্প বৃক্ষের প্রথম অঙ্কুর'
শ্রী মাধবেন্দ্র পুরীতে উদ্ভাসিত হয়েছিল , এবং সেই অঙ্কুরটি শ্রী ঈশ্বর পুরীর মধ্যে একটি চারা হয়ে ওঠে। '
তখন, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু, যিনি নিজেও মালী ছিলেন,
সেই চারাটি একটি বিশাল বৃক্ষের কাণ্ড -ভক্তির কল্প বৃক্ষ হয়ে উঠে। - (চৈ.চ. আদি ৯/১০-১১)

জীবন সম্পাদনা

জন্ম সম্পাদনা

শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত অনুসারে :

 শ্রী ঈশ্বর পুরী জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই ধরাধামে আবির্ভূত হন। তিনি তাঁর গুরু শ্রী মাধবেন্দ্র পুরীর সেবা করেছিলেন অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে, বিশেষ করে শ্রী পুরীপাদের জীবনের শেষ সময়ে।" - (চৈ. চ. অন্ত্য ৮/২৬)

মহাপ্রভুর ঈশ্বর পুরী থেকে দীক্ষা গ্রহণ সম্পাদনা

তীর্থ ভ্রমণের সময়, ঈশ্বর পুরী গয়াতে চৈতন্য মহাপ্রভুর সাথে দেখা করেছিলেন।

চৈতন্য মহাপ্রভুর সাথে সাক্ষাতের পরপরই ঈশ্বর পুরীকে সম্বোধন করলেন,

"আপনার পাদপদ্ম দেখে আমার গয়া যাত্রা সফল হল। যদি কেউ এই পবিত্র স্থানে পিন্ড নিবেদন করে, তবে তার পিতৃপুরুষের মুক্তি হয়। কিন্তু শুধু আপনার দর্শনে কোটি কোটি পিতৃপুরুষের মুক্তি হয়। তাই আপনার উপস্থিতি এই পবিত্র তীর্থের চেয়েও অধিকতর মঙ্গলজনক। সমস্ত পবিত্র তীর্থই আপনার পাদ পদ্মের ধূলি প্রার্থনা করে। অতএব, হে পুরীপাদ, আমি আপনার পাদপদ্মে আমাকে জড় অস্তিত্বের সমুদ্রের ওপারে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রার্থনা করি যাতে আমি কৃষ্ণের চরণকমলের অমৃত পান করতে পারি।" - (চৈ.ভা আদি ১/১৭/৪৯-৫৫)

শ্রীল ঈশ্বর পুরী উত্তর দিলেন,

"দয়া করে শোনো, আমি বুঝতে পেরেছি যে তুমি পরমেশ্বর ভগবানের অবতার। আজ সকালে আমি একটি খুব শুভ স্বপ্ন দেখেছি এবং এখন তা বাস্তবে রূপ পেয়েছে। প্রথম যেদিন আমি তোমাকে নবদ্বীপে দেখি, আমি সর্বদা তোমার কথা ভাবতে থাকি। তোমাকে দেখে আমি তেমনই আনন্দ পাই, কৃষ্ণকে দেখে যতটা আনন্দ পাই।"

একথা শুনে মহাপ্রভু মাথা নিচু করে হেসে উত্তর দিলেন,

"এটা আমার বড় সৌভাগ্য।"

অন্য একদিন মহাপ্রভু শ্রী ঈশ্বর পুরীর কাছে আসেন এবং অনুরোধ করেন তিনি যেন তাকে ঐশ্বরিক মন্ত্র দিয়ে দীক্ষা দেন।

"এই দীক্ষার প্রতীক্ষায় আমার মন খুব অস্থির হয়ে উঠছে।" শ্রীল পুরীপাদ অত্যন্ত আনন্দের সাথে উত্তর দিলেন, "মন্ত্রের কথা কি বলব, আমি তোমাকে আমার জীবন দিতে প্রস্তুত।" - (চৈ. ভা. আদি ১৭/১০)

এরপর শ্রীল ঈশ্বর পুরী দিব্য হরে কৃষ্ণ মন্ত্রে চৈতন্য মহাপ্রভুকে দীক্ষা দেন।

ঈশ্বর পুরীর মহাপ্রভু স্থান পরিদর্শন সম্পাদনা

একদিন সকালে শ্রীল ঈশ্বর পুরী যেখানে মহাপ্রভু অবস্থান করছিলেন সেখানে এসেছিলেন। মহাপ্রভু তাকে দেখে অত্যন্ত খুশি হলেন এবং দণ্ডবৎ করার পর তিনি তাকে দুপুরের আহারের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। ঈশ্বর পুরী উত্তর দিলেন , "তোমার হাত থেকে খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করতে পারা আমার জন্য বড় সৌভাগ্যের বিষয়।" মহাপ্রভু নিজেই রান্না করেন এবং তারপর খুব যত্ন সহকারে তাঁর গুরুকে প্রসাদ পরিবেশন করেন। পরে তিনি তার শরীরে চন্দন মাখিয়ে তার গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেন। এইভাবে পরমেশ্বর ভগবান নিজেই শিখিয়েছেন কীভাবে একজনকে তার গুরুর সেবা করা উচিত। মহান ভক্তদের সেবা ব্যতীত ভগবানের প্রেম লাভ করা সম্ভব নয়। গুরুর সেবাই ভক্তির দ্বার।

গয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের সময়, মহাপ্রভু তাঁর গুরুর জন্মস্থান কুমারহট্টের পথে এসেছিলেন এবং সেখানে আনন্দে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে শুরু করেন, তাঁর চোখের জলে মাটি ভিজে যায়। অবশেষে তিনি সেই পবিত্র স্থান থেকে কিছু ধূলিকণা সংগ্রহ করে তার উপরের বস্ত্রের কোণে বেঁধে বললেন, "এই ধুলো আমার কাছে আমার জীবনের মতোই প্রিয়।" তারপর তিনি নবদ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।[৩]

এরপর মহাপ্রভু সন্ন্যাস গ্রহণ করেন এবং মায়ের আদেশে জগন্নাথ পুরীতে আসেন। ততদিনে ঈশ্বর পুরী এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি তাঁর দুই শিষ্য শ্রী গোবিন্দ এবং কাশীশ্বর ব্রহ্মচারীকে নীলাচলে ভগবান শ্রীচৈতন্যের সেবা করতে পাঠান।[৪]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Edwin Bryant, Maria Ekstrand (২৩ জুন ২০০৪)। The Hare Krishna Movement: The Postcharismatic Fate of a Religious Transplant। Columbia University Press। পৃষ্ঠা 67। আইএসবিএন 9780231508438। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৪ 
  2. Charles R. Brooks (১৪ জুলাই ২০১৪)। The Hare Krishnas in India। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 46। আইএসবিএন 9781400859894। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৪ 
  3. J. Gordon Melton, Martin Baumann (২১ সেপ্টেম্বর ২০১০)। Religions of the World: A Comprehensive Encyclopedia of Beliefs and Practices, 2nd Edition 6 volumesABC-CLIO Publications। পৃষ্ঠা 535। আইএসবিএন 9781598842043। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  4. Swami B.P. Puri (২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। The Heart of Krishna। Simon and Schuster। আইএসবিএন 9781683832157। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭