ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৮০

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৮০ হলো দেশের অন্যতম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াতে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনকল্পে প্রণীত একটি আইন।[১] এটি মূলত বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত ১৯৮০ সালের আইন নং XXIII থেকে ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ নং VIII পর্যন্ত বলবৎ আইনের ৩৭ নং আইন।[২] এটি জাতীয় সংসদে ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বরে পাশ হয়, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যাবলি পরিচালনায় স্বায়ত্ত্বশাসন লাভ করে।[৩] এই আইনের মাধ্যমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে, সেটি হলো ইসলামি শিক্ষার সাথে সাধারণ শিক্ষার সমন্বয় করা।[৪]

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৮০
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পিডিএফ
জাতীয় সংসদ, বাংলাদেশ
সূত্র১৯৮০ সালের আইন নং XXIII থেকে ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশ নং VIII পর্যন্ত বলবৎ আইনের ৩৭ নং আইন
কার্যকারী এলাকাইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
প্রণয়নকারীজাতীয় সংসদ, বাংলাদেশ
গৃহীত হয়২৭ ডিসেম্বর, ১৯৮০
স্বাক্ষরকারীজাতীয় সংসদ সদস্য
প্রশাসনইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
অবস্থা: বলবৎ

সংশোধনের ইতিহাস সম্পাদনা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমে ওআইসির শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।[৫] এটি ১৯৮০ সালে নব-প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদের সাথে গবেষণা শাখা হিসাবে সংযুক্ত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিলো মুসলিম উম্মাহকে ইসলামের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী জীবন যাপনে সহায়তা করার জন্য সমসাময়িক সমস্যা চিহ্নিত করা এবং আধুনিক বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক ও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে ইসলামের শিক্ষাগুলো অধ্যয়ন ও ব্যাখ্যা করা।[৬]

তবে এটিকে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৮০ সালের আইনে স্বায়ত্বশাসন প্রদান করা হয়।[৭] এটি পরিচালিত হবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের দিকনির্দেশনায়। দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপাচার্যকে নিয়োগ প্রদান করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তবে ২০১০ সালের সংশোধনীতে প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের দায়িত্ব পালন শুরু করেন।[৮] ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর জিয়াউর রহমান কুষ্টিয়ার শান্তিডাঙ্গা নামক স্থানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপরে জিয়াউর রহমান সরকার ১৯৮০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর Act No. XXXI of 1980 আইন বলে কুষ্টিয়াতে ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করে।[৯]

তবে তার মৃত্যুর পর এরশার হুসাইন সরকার ১৯৮২ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ (৪২)-এর ৪ (বি) ধারা মোতাবেক গাজীপুর জেলার বোর্ড বাজারে ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে। এবং একই বছরে Ordinance No. XLIII of 1982 মোতাবেক ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার বিলুপ্তি ঘোষণা করে।[১০] এবং এরশাদ সরকার গাজীপুরের বোর্ডবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয়বার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি ১৯৮৩ সালের ২ অক্টোবর SVIII/7U-3/83/919-Edn স্মারক মোতাবেক ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার পুনঃস্থাপন করেন।[১১]

এরপর বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসাকে আধুনিকরন করার জন্য Islamic University (Amendment) Act, 2006 দ্বারা ২০০৬ সনের ৪৩ নং এবং ২০১০ সনের ১৫ নং আইন মোতাবেক বাংলাদেশের সকল ফাজিলকামিল মাদ্রাসাকে অধিভুক্ত করা হয়।[১২][১৩] এই আইনের মাধ্যমে ১০৮৭ টি ফাজিল (স্নাতক) ও ১৯৪টি কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা অধিভুক্তি লাভ করে।[১৪] এতো মাদ্রাসার কার্যক্রম চালানোর জন্য ২০১২ সালে ঢাকা কল্যাণপুরে নিজস্ব রেস্ট হাউজে একটি লিয়াজো অফিস খোলা হয়।[১৫]

আইনের অনুচ্ছেদ সম্পাদনা

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আইনে মোট ৫১টি অনুচ্ছেদ রয়েছে, এবং এদের মধ্যে তিনটিতে আবার উপ-অনুচ্ছেদ রয়েছে।[১৬] আইনের সবগুলো অনুচ্ছেদ হলো:

১। সংক্ষিপ্ত শিরনামা

২। সংজ্ঞা

৩। বিশ্ববিদ্যালয়

৪। এখতিয়ার

৫। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা ও কার্যাবলী

৬। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান

৭। ভিজিটর

৮। চ্যান্সেলর

৯। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসারগণ

১০। ভাইস-চ্যান্সেলর

১১। ভাইস-চ্যান্সেলরের ক্ষমতা ও কার্যাবলী

১১ক। প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর

১২। কোষাধ্যাক্ষ

১৩। অন্যান্য অফিসার নিয়োগ

১৪। রেজিস্ট্রার

১৫। কন্ট্রোলার অব একজামিনেশনস্‌

১৬। হিসাব পরিচালক

১৭। অফিসারদের ক্ষমতা ও কার্যাবলী

১৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ

১৯। সিন্ডিকেট

২০। সিন্ডিকেটের ক্ষমতা ও কার্যাবলী

২১। [একাডেমিক] কাউন্সিল

২২। একাডেমিক কাউন্সিলের ক্ষমতা ও কার্যাবলী।

২২ক। মাদ্রাসা সংক্রান্ত একাডেমিক কমিটি

২২খ। মাদ্রাসা সংক্রান্ত একাডেমিক কমিটির ক্ষমতা ও কার্যাবলী

২৩। ফ্যাকালটিস

২৪। বিভাগসমূহের চেয়ারম্যানগণ

২৫। পাঠক্রম কমিটি

২৫ক। কারিকুলাম কমিটি

২৬। বোর্ডস অব এ্যাডভান্সড স্টাডিজ

২৭। অর্থ-কমিটি

২৮। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটি

২৯। বাছাই বোর্ডসমূহ

৩০। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্তৃপক্ষ

৩১। সংবিধিসমূহ

৩২। সংবিধি প্রণয়ন

৩৩। অধ্যাদেশসমূহ

৩৪। অধ্যাদেশ প্রণয়ন

৩৪ক। ফাজিল ও কামিল মাদ্‌রাসার সহিত সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ প্রণয়ন

৩৫। প্রবিধিসমূহ

৩৬। আবাসস্থল

৩৭। ছাত্রাবাসমূহ

৩৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমে ভর্তি

৩৯। পরীক্ষাসমূহ

৪০। চাকুরীর শর্তাবলী

৪১। বার্ষিক প্রতিবেদন

৪২। বার্ষিক হিসাব

৪৩। কর্তৃপক্ষ এবং সংস্থাসমূহের গঠন সম্পর্কিত মতবিরোধ

৪৪। কমিটিসমূহের গঠন

৪৫। আকস্মিক সৃষ্ট শূন্যপদ পূরণ

৪৬। পদসমূহ শূন্য হওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ এবং সংস্থাসমূহের কার্যবিবরণী অবৈধ হইবে না

৪৭। চ্যান্সেলরের নিকট আপীল

৪৮। অবসরভাতা, ইত্যাদি

৪৯। চ্যান্সেলরের বিশেষ ক্ষমতাসমূহ

৪৯ক। মাদ্‌রাসা শিক্ষা তহবিল

৫০। অসুবিধা দূরীকরণ

৫১। অন্তর্বর্তীকালীন বিশেষ বিধান

সমালোচনা সম্পাদনা

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার পরে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রথমবারের মত স্বায়ত্তশাসনকে সংকুচিত করা শুরু করে। তিনি এই আইনে সিনেট বোর্ডের অস্তিত্ব নেই, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্যের অধিক ক্ষমতাচর্চার সুযোগ রয়েছে, শিক্ষকদের অনির্ণেয় উশৃঙ্খলতা-অসদাচরণের অভিযোগ তুলে চাকুরিচ্যুতির সুযোগ এরকম নানা বিষয়ের সমালোচনা করেন। তিনি বলেছেন, স্বায়ত্তশাসিত চার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পার্থক্য রয়েছে।[১৭]

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "All Legislation of Bangladesh"www.lexadin.nl। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৮ 
  2. "Act No. XXIII of 1980 to Ordinance No. VIII of 1982 - Laws of Bangladesh"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৭ 
  3. নিউজ, সময়। "প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির ৪৩ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় | বাংলাদেশ"Somoy News। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৭ 
  4. "উচ্চ শিক্ষার অভিযাত্রায় মাইলফলক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়"The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৭ 
  5. Karim, Sheikh Mohammad Towhidul (২০১৮)। "The Ombudsman Act 1980: Redressing Administrative Grievances in Bangladesh"International Journal of Law and Management60: 172। 
  6. "ISLAMIC UNIVERSITY ACT, 1980 [Bangladesh]"Islamic Studies। Islamic Research Institute, International Islamic University, Islamabad। 26 (3): 283–302। ১৯৮৭। আইএসএসএন 0578-8072 
  7. Karim, Sheikh Mohammad Towhidul (২০১৮-০১-০১)। "The Ombudsman Act 1980: redressing administrative grievances in Bangladesh"International Journal of Law and Management60 (1): 172–184। আইএসএসএন 1754-243Xডিওআই:10.1108/IJLMA-04-2017-0090 
  8. Correspondent, Staff (২০০৯-০৭-০৮)। "Bill placed to change law"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৮ 
  9. হোসেন, প্রফেসর তোজাম্মেল। "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও জিয়াউর রহমান"dainikdinkal। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৭ 
  10. "The Institute of Islamic Education and Research (Repeal) Ordinance, 1982 (Ordinance NO. XLIII OF 1982)"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৮ 
  11. সিদ্দিকী, এ.বি.এম সাইফুল ইসলাম। "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৭ 
  12. "২০১০ সনে প্রণীত আইনসমূহ - লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ"legislativediv.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. bdnews24.com (২৫ জানু ২০১০)। "Bill tabled for IU to regulate higher madrasa education"bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৭ 
  14. bdnews24.com (২৬ জুলাই ২০০৫)। "Coalition partners disagree over upgrading Fazil, Kamil degrees"bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৮ 
  15. সিদ্দীকী, আ.ব.ম.সাইফুল ইসলাম (২০ ফেব্রু ২০১৬)। ও- প্রত্যাশা "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন যুগ : প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা"The Daily Sangram। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৭ 
  16. "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৮০"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৭ 
  17. ইসলাম, অভিনু কিবরিয়া (১৩ মে ২০১৯)। "'স্বায়ত্তশাসিত' থেকে 'সরকারি': বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় আইনগুলোর পশ্চাৎমুখী বিবর্তন"bdnews24। ১৭ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা