ইসলামি দেশগুলোর জন্য স্বাধীন ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা

আবুল হাসান আলী হাসানী নদভীর বই

ইসলামি দেশগুলোর জন্য স্বাধীন ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা (আরবি: نحو التربية الاسلامية الحرة) ভারতীয় দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত আবুল হাসান আলী হাসানী নদভীর রচিত একটি আরবি বই। এটি মূলত নদভীর দুইটি বক্তব্য ও একটি নিবন্ধের সংকলন। প্রথম বক্তব্যটি তিনি সৌদি আরবের শিক্ষামন্ত্রীর আমন্ত্রণে রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করেন। দ্বিতীয় নিবন্ধটি তিনি লিখেছিলেন কুয়েতে অনুষ্ঠিত আরব দেশগুলোর শিক্ষামন্ত্রীদের একটি সম্মেলনের জন্য। তৃতীয় বক্তব্যটি তিনি নদওয়াতুল উলামার শিক্ষা বিষয়ক বৈঠকে পাঠ করেন। ১৯৭৬ সালে আল মুখতারুল ইসলামী কায়রো থেকে এই সংকলনটি প্রকাশিত হয়।

ইসলামি দেশগুলোর জন্য স্বাধীন ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা
বাংলা সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকআবুল হাসান আলী হাসানী নদভী
মূল শিরোনামআরবি: نحو التربية الاسلامية الحرة
দেশভারত
ভাষাআরবি
বিষয়ইসলামি শিক্ষা
প্রকাশিত১৯৭৬
প্রকাশকআল মুখতারুল ইসলামী কায়রো
মিডিয়া ধরনশক্তমলাট
পৃষ্ঠাসংখ্যা১০৪
ওসিএলসি৯৪৯৪০১৩৪২
এলসি শ্রেণীএলসি৯০৩ .এন৩৪৬৪ ১৯৯৮
ওয়েবসাইটabulhasanalinadwi.org

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

নদভী ১৯৫০ থেকে মুসলিম বিশ্ব বিশেষ করে আরব দেশগুলোতে ইসলামি শিক্ষার বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেন। শুরু থেকেই তিনি এই ফলাফলে উপনীত হয়েছিলেন যে, ইসলামি দেশগুলোর বিশেষ করে আরব দেশগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি, বিশ্বাসের দোদোল্যমানতা, মানসিক অস্থিরতা, চারিত্রিক অধঃপতন ও ইসলামের নেতৃত্বসুলভ যোগ্যতার ব্যাপারে অনাস্থা ও তার ভবিষ্যত সম্পর্কে হতাশা সেই শিক্ষাব্যবস্থারই ফলাফল বা দান, যেটি পাশ্চাত্য থেকে কোনো প্রকার মৌলিক পরিবর্তন ও গবেষণামূলক চিন্তা-ভাবনা ব্যতিরেকে আমদানি করা হয়েছে। শুরু থেকেই তার জানা ছিল, শিক্ষাব্যবস্থা এমন একটি পোশাক, যাকে এই জাতি ও প্রজন্মের আকার, গঠন, সাইজ, তার অতীত-বর্তমান ও আবহাওয়া অনুপাতে তৈরি হওয়া উচিত, যার মাঝে এই জাতি-প্রজন্ম জন্মলাভ করেছে এবং তারই মাঝে তাকে বাঁচতে ও মরতে হবে। তা ছাড়া এক্ষেত্রে তার শুধু আকারের প্রতি লক্ষ্য রাখাই যথেষ্ট নয়, মূল্যের প্রতি নজর রাখাও জরুরি। শুধু তাই নয় মিল্লাতে ইসলামিয়ার মূল্য (ওজন ও উপকারিতা) তার আকারের (সংখ্যা ও রাজনৈতিক অবস্থান) চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষ্যণীয়। এই শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমানকে অতীতের সঙ্গে, তারপর এদুটিকে ভবিষ্যতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তোলার কার্যকর ও স্থায়ী উপায়। আর তার লক্ষ্য সেই বিশ্বাস ও বাস্তবতার ওপর সেই প্রজন্মের বিশ্বাস ও সম্পর্ককে শুধু সুদৃঢ় করাই নয়, বরং তাদের জন্য ইলমি ভিত্তি ও প্রমাণাদি সরবরাহ করা, তাদের সৎকর্মপরায়ণ ও শেষ্ঠতর প্রমাণিত করা, যেগুলো দ্বারা এই জাতিটির ভিত রচিত হয়েছে এবং তাকে তাদের পতাকাবাহী বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে যে শিক্ষাব্যবস্থা এই লক্ষ্যটিকে না শুধু পূর্ণতা দান করে, বরং তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন শিক্ষাব্যবস্থা এই জাতি ও প্রজন্মের সবচেয়ে বড় শত্রু, তার প্রিয় সম্পদের লুটেরা ও জীবনসংহারী হলাহল। এই বিষয়টির ওপর বিভিন্ন সময়ে তিনি লিখনী ও বক্তৃতার মাধ্যমে নিজের মতামত প্রকাশ করতে থাকেন। তার মতে ইসলামি দেশগুলোতে রাজনৈতিক ও সামরিক বিপ্লবগুলো, সরকার ও জনগণের মধ্যকার স্নায়ু লড়াই ও পারস্পরিক অনাস্থার সবচেয়ে বড় কারণটি হলো, মিল্লাতের বিশ্বাস, চিন্তা চেতনা, অনুভূতি ও চাহিদা এক; আর দেশগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা আরেক। ব্যাপার কেবল এটুকুই নয় যে, এই সরকারগুলোর বাইরে থেকে আমদানিকৃত শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে জনগণের বিশ্বাস চেতনার কোনো সম্পর্ক নেই; বরং এই শিক্ষাব্যবস্থা তাদের মূল উপড়ে ফেলতে চায় এবং পরে তার ধ্বংসাবশেষের ওপর একটি নতুন ইমারত নির্মাণ করে চায়। এভাবে মুসলিম দেশগুলোর অবয়ব সেই বাহনের মতো হয়ে গেছে, যার সঙ্গে পরস্পরবিরোধী দুই দিকে ঘোড়া বা ইঞ্জিন জুড়ে দেওয়া হয়েছে।[১]

বিষয়বস্তু সম্পাদনা

তার উপরোক্ত চিন্তাধারা তিনি সেই ভাষণটিতে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ও জোরালোভাবে উপস্থাপন করেন, যেটি সৌদি আরবের শিক্ষামন্ত্রী হাসান আবদুল্লাহর আমন্ত্রণে ১৯৬৮ সালের ১৩ নভেম্বর রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিসর হলে প্রদান করেছিলেন। এই ভাষণে তিনি পশ্চিমা শিক্ষাবিদদের উক্তি দ্বারা প্রমাণিত করেছেন, শিক্ষাব্যবস্থা সেই তৈরী পোশাক বা পণ্যের মতো নয়, যেগুলো চাইলেই কোনো একটি দেশ থেকে আমদানি করা যায়। আর কোনো জাতি যখন এই রীতি অবলম্বন করে, সেই জাতি তার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আপন জাতিগত বৈশিষ্ট থেকে বঞ্চিত হয়ে যায় কিংবা কঠিন মানসিক দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তারপর তিনি আরবদের অনুভূতি ও পরিবেশ পরিস্থিতিকে সামনে রেখে বললেন, আপনারাই দেখুন; ইসরাইলে ধর্মীয় শিক্ষা ও নিজস্ব জাতীয় বৈশিষ্ট্যের সুরক্ষায় কতটা গুরুত্ব আছে এবং এব্যাপারে তারা কতখানি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও অনুভূতিশীল। তারপর তিনি প্রমাণ করেন, অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও উচ্চতর শিক্ষা কখনোই রোগের প্রতিকার নয়। এগুলো উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষগুলোকে কখনও নৈতিক অধঃপতন ও প্রবৃত্তিপূঁজা থেকে এবং উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত জাতিগুলোকে জাতিপূঁজা, প্রজন্মপূজা ও বিশ্বযুদ্ধগুলো থেকে বিরত রাখতে পারে না। অবশেষে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, মনে রাখতে হবে, জাযিরাতুল আরবের এই ভূখণ্ড, এই সভ্যতা সংস্কৃতি, এই উন্নতি ও এখানকার সরকারগুলো ইসলামের নবী মুহাম্মদের দান ও তার ঋণ। এই ভূখণ্ডের ওপর আজীবনের জন্য ইসলামের মালিকানা ও নেতৃত্বের অধিকার আছে এবং এটি তার দৈর্ঘ্য-প্রস্থসহ তার হেরেম ও দুর্গ। কাজেই এখানে কাউকে বাইরে থেকে আমদানিকৃত দর্শনের প্রচার প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া যায় না। না কাউকে তার সেই ভিত্তিগুলোর গায়ে কুড়াল চালানোর অনুমতি দেওয়া যায়, যেগুলো সাহাবা, ইসলামের দাঈ ও মুজাহিদগণ নির্মাণ করেছিলেন। যে বুদ্ধিজীবি, চিন্তাবিদ ও লেখক এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত হবেন না, তাদের এই ভূখণ্ড থেকে বিদায় জানাতে হবে। নিজেদের মতাদর্শ ও চিন্তাধারার প্রচারের জন্য পুরোটা জগত পড়ে আছে। তারা অন্য কোথাও গিয়ে কাজ করুক। এখানে তাদের এই ধ্বংসাত্মক ও বিশৃঙ্খলামূলক কাজের অনুমতি দেওয়া যায় না। ইকবালের ভাষায়, "সীমানা আর পরিধি দ্বারা তার অস্তিত্ব নয়। আরব বিশ্ব অস্তিত্ব পেয়েছে মুহাম্মাদে আরাবির কল্যাণে।"[১]

এ বিষয়ের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ ছিল সেটি, যেটি তিনি কুয়েতে অনুষ্ঠেয় আরব দেশগুলোর শিক্ষামন্ত্রীদের একটি কমিটির জন্য লিখেছিলেন, যেটি কুয়েতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।[১]

তৃতীয় নিবন্ধটি ছিল, যেটি তিনি নদওয়াতুল ওলামার ১৯৭৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বরের শিক্ষাবিষয়ক বৈঠকে পাঠ করেছিলেন। এই নিবন্ধে তিনি মুসলিম বিশ্ব ও আরব দেশগুলোর অনিঃশেষ মানসিক দ্বন্দ্ব, সরকার জনসাধারণের পারস্পরিক বিরোধ, সামরিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের এই ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম যে, এই দেশগুলোর শিক্ষাব্যবস্থা মুসলিম জাতিসত্তা ও ইসলামি ফিতরাতের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণই নয় শুধু; বরং সংঘাতমূলকও বটে। আর তারই ফলে না এই জাতিগুলো দ্বারা পুরোপুরি উপকৃত হওয়া সম্ভব হচ্ছে, না দেশগুলোর সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে স্থিরতা তৈরি হচ্ছে।[১]

প্রকাশনা সম্পাদনা

এই নিবন্ধগুলোর সংকলন نحو التربية الاسلامية الحرة নামে বৈরুত ও কায়রো থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবং তার একাধিক সংস্করণ বের হয়েছে। ১৯৭৬ সালে আল মুখতারুল ইসলামী কায়রো থেকে এর তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়।[১]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

উদ্ধৃতি সম্পাদনা

  1. নদভী, আবুল হাসান আলী (২০১৫)। কারওয়ানে যিন্দেগী। বাংলাবাজার, ঢাকা: মুহাম্মদ ব্রাদার্স। পৃষ্ঠা ৪৭–৫১। আইএসবিএন 978-984-91840-1-0 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা