ইব্রাহিম উজানি
কারী ইব্রাহিম উজানি (১৮৬৩ – ১৯৪৩) ছিলেন অবিভক্ত বাংলার একজন দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া উজানি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির খলিফা ছিলেন। তার খলিফা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক। সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক থেকে বাংলাদেশে চরমোনাই আধ্যাত্মিক ধারার প্রসার ঘটে।
কারী ইব্রাহিম উজানি | |
---|---|
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৮৬৩ নলুয়া, নোয়াখালী |
মৃত্যু | ১৯৪৩ (বয়স ৭৯–৮০) উজানি, চাঁদপুর |
ধর্ম | ইসলাম |
সন্তান | ১১ ছেলে, ৭ মেয়ে |
পিতামাতা |
|
জাতিসত্তা | বাঙালি |
আখ্যা | সুন্নি |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
প্রধান আগ্রহ | তাসাউফ, সমাজ সংস্কার |
যেখানের শিক্ষার্থী | মাদ্রাসা আস-সাওলাতিয়া |
এর প্রতিষ্ঠাতা | জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া উজানি মাদ্রাসা |
মুসলিম নেতা | |
যার দ্বারা প্রভাবিত | |
যাদের প্রভাবিত করেন |
জীবনী
সম্পাদনাইব্রাহিম ১৮৬৩ সালে নোয়াখালী জেলার নলুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতার নাম মুহাম্মদ পানাহ মিয়া। তিনি নিজ এলাকায় আরবি ও ফার্সির প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় কিছুদিন লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি মক্কা গমন করে মাদ্রাসা আস-সাওলাতিয়ায় ভর্তি হন। এ মাদ্রাসায় তিনি প্রসিদ্ধ কারী বরকসুসের কাছে কেরাত শিক্ষালাভ করেন। এসময় মক্কার শাসক তার কুরআন তিলাওয়াত শুনে তাকে মাদ্রাসা আস-সাওলাতিয়ায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আদেশ দেন। তিনি সেখানে ১২ বছর শিক্ষকতা করেছেন।[২] শিক্ষকতাকালে মক্কার এক মেয়ের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ৩০ বছর বয়সে তিনি মক্কা থেকে সস্ত্রীক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।
চাঁদপুর জেলার রামগঞ্জ থানার দৌলতপুর গ্রামের এক মাহফিলে তার কুরআন তিলাওয়াত শুনে স্থানীয় এক ব্যক্তি তার কন্যাকে তার সাথে বিবাহ দেন, তখন থেকে তিনি সেখানে বসবাস শুরু করেন। সেখানে মসজিদ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০১ সালে তিনি জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া উজানি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।[৩] তিনি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির নিকট বায়আত গ্রহণ করেছিলেন। বায়আত গ্রহণের ১৮ দিন পর তিনি খেলাফত লাভ করেন।[৪] সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক তার শিষ্য ছিলেন। তার থেকে চরমোনাই আধ্যাত্মিক ধারা প্রসার লাভ করে।
তিনি ১১ ছেলে ও ৭ মেয়ের জনক। ১৯৪৩ সালে তিনি উজানির নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।[৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনাউদ্ধৃতি
সম্পাদনা- ↑ নিজামপুরী ২০১৩, পৃ. ২৯।
- ↑ ইসহাক ২০০৬, পৃ. ৬।
- ↑ "কচুয়ার উজানীর বার্ষিক মাহফিল শুরু"। ইনকিলাব। ৫ জানুয়ারি ২০১৭।
- ↑ নিজামপুরী ২০১৩, পৃ. ৩০।
- ↑ নিজামপুরী ২০১৩, পৃ. ৩১।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- জাকারিয়া, মুহাম্মদ (২০২১)। বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসার ও সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পীর-মাশায়িখের অবদান: একটি পর্যালোচনা (পিডিএফ) (গবেষণাপত্র)। বাংলাদেশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৬১–১৬৯। ১৮ জুন ২০২৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০২২।
- আমীরুল ইসলাম, মাওলানা (২০১২)। সোনার বাংলা হীরার খনি ৪৫ আউলিয়ার জীবনী। ৫০, বাংলাবাজার, ঢাকা: কোহিনূর লাইব্রেরী। পৃষ্ঠা ১৮–২৩।
- আলতাফ হোসেন, প্রফেসর (২০১৬)। বিশ্ব সেরা ১০০ মুসলিম মনীষী। বাংলাবাজার, ঢাকা: দি স্কাই পাবলিশার্স। পৃষ্ঠা ২৭৫–২৭৭। আইএসবিএন 9848260641।
- ইসহাক, সৈয়দ মুহাম্মদ (২০০৬)। হযরত মাওলানা ক্বারী ইবরাহীম সাহেব (রহ)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী। বাংলাদেশ: আল-এছহাক পাবলিকেশন্স।
- এস এম আমিনুল ইসলাম, মাওলানা; ইসলাম, সমর (জানুয়ারি ২০১৪)। বাংলার শত আলেমের জীবনকথা। বাংলাবাজার,ঢাকা-১১০০: বইঘর। পৃষ্ঠা ৭১—৭৫। আইএসবিএন 9847016800481।
- জাফর, আবু (২০১৭)। ভারতীয় উপমহাদেশের সুফি-সাধক ও ওলামা মাশায়েখ। বাংলাবাজার, ঢাকা: মীনা বুক হাউস। পৃষ্ঠা ৬৩—৬৭। আইএসবিএন 9789849115465।
- জাহাঙ্গীর, সালাউদ্দিন (২০১৭)। বাংলার বরেণ্য আলেম — ১ম খণ্ড (১ম সংস্করণ)। মধ্য বাড্ডা, আদর্শ নগর, ঢাকা: মাকতাবাতুল আযহার। পৃষ্ঠা ১১০–১১৮।
- নিজামপুরী, আশরাফ আলী (২০১৩)। দ্যা হান্ড্রেড (বাংলা মায়ের একশ কৃতিসন্তান) (১ম সংস্করণ)। হাটহাজারী, চট্টগ্রাম: সালমান প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ২৯–৩১। আইএসবিএন 112009250-7।
- মাযহারুল ইসলাম ওসমান কাসেমী, মুফতি (২০১৫)। বিখ্যাত ১০০ ওলামা-মাশায়েখের ছাত্রজীবন (৩য় সংস্করণ)। ইসলামী টাওয়ার, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০: বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স। পৃষ্ঠা ১১৬–১১৯। আইএসবিএন 98483916605।