ইজ্জুদ্দীন আল-কাসসাম ব্রিগেড
ইজ্জুদ্দীন আল-কাসসাম ব্রিগেড (আরবি: كتائب الشهيد عز الدين القسام) : ইজ্জুদ্দীন আল-কাসসামের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছে, প্রায়শ সংক্ষিপ্ত রূপ আল-কাসসাম, EQB)[৯] হলো ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সশস্ত্র শাখা।[১০][১১]
ইজ্ আদ-দীন আল-কাসসাম ব্রিগেড كتائب الشهيد عز الدين القسام | |
---|---|
নেতা | মুহাম্মাদ দেইফ মারওয়ান ইসসা |
অপারেশনের তারিখ | ১৯৯৩–বর্তমান |
সদরদপ্তর | গাজা |
সক্রিয়তার অঞ্চল | ফিলিস্তিন ইসরায়েল |
মতাদর্শ | ফিলিস্তিনি আত্ম-সিদ্ধান্ত সুন্নি ইসলামবাদ,[১] ইসলামী মৌলবাদ,[২] ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ |
উল্লেখযোগ্য আক্রমণ | Mehola Junction bombing, Sbarro restaurant suicide bombing, Matza restaurant suicide bombing, Patt Junction Bus Bombing, Kiryat Menachem bus bombing |
এর অংশ | হামাস |
মিত্র |
|
বিপক্ষ | ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী |
খণ্ডযুদ্ধ ও যুদ্ধ | ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত |
দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় থেকে এটি ইসরাইলের আক্রমণের প্রধান লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এই সংগঠনটির শক্তি সামর্থ্য বহু রাষ্ট্রকে বিস্মিত করে দিয়েছে। ইজ্জুদ্দীন আল-কাসসামকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা,[১২] অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড,[১৩] ইংল্যান্ড[১৪] ও মিশর[১৫] নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ব্রিগেড নেতা মোহাম্মদ দেইফকেও নির্বাহী আদেশ ১৩২২৪ এর অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশেষভাবে মনোনীত গ্লোবাল টেররিস্ট হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে।[১৬][১৭]
নামকরণ
সম্পাদনাব্রিটিশ অধিভুক্ত ফিলিস্তিনের ইজ্জুদ্দীন আল-কাসসাম নামক কাদেরিয়া তরিকার একজন পীর সাহেবের নামানুসারে এই সংগঠনের নামকনরণ করা হয়েছে। ১৯৩০ সালে আল-কাসসাম ''ব্ল্যাক হ্যান্ড" নামে ব্রিটিশ এবং ইহুদী আধিপত্যবাদ বিরোধী একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।[১৮]
লক্ষ ও উদ্দেশ্য
সম্পাদনাEQBএর তথ্যানুসারে :
কুরআন এবং রাসূল (স) এর সুন্নাহ আর মুসলিম শাসক ও বিদ্বানদের নীতি অণুসরনে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করা এবং ফিলিস্তিনি জনগনের আধিকারের পূনঃপ্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা।
আল-কাসসামের উদ্দেশ্য হল ফিলিস্তিনের জনগনকে জয়নবাদী ইহুদীদের দখলদারিত্বের হাত থেকে মুক্ত করা এবং ফিলিস্তিনী জনগণের সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যা জয়নবাদীরা হরণ করেছে। সেই সাথে আল-কাসসাম নিজেকে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতীক মনে করে।[১৯]
সংগঠনের গঠন
সম্পাদনাইজ্জুদ্দীন আল-কাসসাম ব্রিগেড হামাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও তারা হামাসের অঙ্গ সংগঠন তবুও তাদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার রয়েছে।[২০] হামাসের বক্তব্য অণুসারেঃ "ইজ্জুদ্দীন আল-কাসসাম ব্রিগেড একটা বিচ্ছিন্ন সশস্ত্র সংগঠন এবং এর নিজস্ব নেতা রয়েছে যারা হামাসের আদেশ গ্রহণ করে না এবং তথ্য ও অগ্রগতির কথাও হামাস নেতাদের জানানো হয় না।"[২১][২২]
যোদ্ধাদের পরিচিতি এবং সংগঠনে এদের অবস্থান মৃত্যু পর্যন্ত গোপন থাকে। এমনকি যখন তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তখন তারা কালো মুখোশ পরিধান করে আর তার উপর সবুজ বেল্ট দিয়ে বাধা থাকে। ইজ্জুদ্দীন আল-কাসসাম ব্রিগেড স্বাধীন অণুশাখা মডেলে কাজ করে যার কারণে অনেক সিনিয়র নেতারাও অন্য শাখার খবর জানে না। এই শাখাগুলো নেতাদের মৃত্যুর পর নিজেরাই নেতা নির্বাচন করে। আল আকসা ইন্তিফাদার সময়ে বিমান হামলায় অনেক নেতা মারা যায়। এদের মধ্য রয়েছে সালাহ শাহাদী ও আদনান আল গুলের মত বড় নেতা। সংগঠনটির বর্তমান এবং দীর্ঘমেয়াদী নেতা মুহাম্মাদ দেইফ যিনি পাচঁবার গুপ্তহত্যা থেকে বেচে গেছেন বলে কথিত আছে।[২৩]
কার্যকলাপ
সম্পাদনাআন্তর্যাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে জাতিসংঘ বেসামরিক লোকজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করাকে জেনেভা কননেনশনের নিয়মবহির্ভুত বলে মনে করে।[২৪][২৫][২৬] এবং সাধারণ মানুষদের উপর নির্বিচার রকেট হামলা ও আত্মঘাতি বোমা হামলা আত্নর্যাতিক আইনের রীতিবিরুদ্ধ।[২৭] কাসসাম অবশ্য বরাবরই এসব তথ্য আস্বীকার করে আসছে।
অসলো একর্ডের পরপরই হামাসকে সহযোগিতার জন্য সংগঠনটির শসস্ত্র রূপান্তর ঘটে।[২৮] ২০০৩ ও ২০০৪ সালে অধিকৃত জালাবিয়া এলাকায় ব্রিগেডটি ব্যাপকভাবে ইসরাইল হামলার স্বীকার হয়। বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাও মারা যান। তারপরও সংগঠনটি ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে শুরু করে এবং পরবর্তি বছরগুলোতে আক্রমণ করার মতো সক্ষমতা অর্জন করে। এরপর তারা দলে যোগ দেবার মত প্রচুর স্বেচ্ছাসেবীও পেয়ে যায়। একদল গোপনে কাসসামকে বিভিন্ন হাতে বানানো অস্ত্র যেমন আল বানা, বাতর, ইয়াসিন ইত্যাদি সরবরাহ করে। কাসসাম রকেট তাদের আর্টিলারি প্রযুক্তিতে সর্বশেষ সংযোজন।[২০]
২০০৫ সালের প্রথমদিকে কাসসাম ইজরাইলী সরকার এবং ফিলিস্তিনী অথরিটির শান্তি আলোচনার পক্ষে মতামত দেয়। এই সুযোগে কাসসাম নিজেকে আবার জোড়ালোভাবে সংগঠিত করে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ২০০৫ সালের আগস্টে ইজরাইল গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করলে কাসসাম গাজায় ব্যাপক র্যালি করে। এসমস্ত র্যালিতে তারা নিজেদের প্রচুর অস্ত্রের মজুদ আর সৈন্য-সামন্তের ব্যাপকতা প্রদর্শন করে।
ইসরাইলী লক্ষবস্তু আক্রমণের তালিকা
সম্পাদনাদ্বিতীয় ইন্তিফাদার সমাপ্তি
- ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮: ফেব্রুয়ারিতে গাজা উপত্যকা থেকে পশ্চিম নেগেভে ২৫৭টি রকেট ও ২২৮টি মর্টার নিক্ষেপ করা হয়, এতে পাঁচজন আহত হয় এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি সাপির কলেজের ৪৭ বছর বয়সী এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। এর আগে হামাস রকেট হামলার দায় স্বীকার করেছিল।[২৯]
উল্লেখযোগ্য সদস্য
সম্পাদনা- ইয়াহইয়া আয়াশ
- আদনান আল হুল
- সালাহ শাহাদী
- ওয়ালি নাসার
- আহমেদ জাবেরী
- সালামা আহমাদ
- ইমাদ আব্বাস
- নিদাল ফাতহি রাব্বাহ ফারহাত
- আবু ওবায়দাহ (মুখপাত্র)
- ইয়াসিন আল-আসতাল[৩০]
- মারওয়ান ইসসা
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ * "Understanding Islamism" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ মার্চ ২০১৩ তারিখে, Cris is Group Middle East/North Africa Report N°37, March 2, 2005
- "The New Hamas: Between Resistance and Participation". Middle East Report. Graham Usher, August 21, 2005
- "Hamas leader condemns Islamist charity blacklist"। Reuters। আগস্ট ২৩, ২০০৭। ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৮, ২০০৯।
- Hider, James (অক্টোবর ১২, ২০০৭)। "Islamist leader hints at Hamas pull-out from Gaza"। The Times। London। আগস্ট ৫, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৮, ২০০৯।
- "Council on Foreign Relations"। Council on Foreign Relations। জুন ২, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৭, ২০১০।
- ↑
- Islamic fundamentalism in the West Bank and Gaza: Muslim Brotherhood and Islamic Jihad, by Ziyād Abū 'Amr, Indiana University Press, 1994, pp. 66–72
- Anti-Semitic Motifs in the Ideology of Hizballah and Hamas, Esther Webman, Project for the Study of Anti-Semitism, 1994. আইএসবিএন ৯৭৮-৯৬৫-২২২-৫৯২-৪
- ↑ ক খ "Exclusive: Hamas Official Discusses Decline of Iranian Support"। موقع الدكتور عدنان ابو عامر (আরবি ভাষায়)। ২০২৩-০১-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭। zero width space character in
|শিরোনাম=
at position 63 (সাহায্য) - ↑ https://www.state.gov/on-sanctioning-of-four-financial-facilitators-for-hamas/
- ↑ Bechtol, Bruce E.। North Korean Military Proliferation in the Middle East and Africa: Enabling Violence and Instability।
- ↑ TPS, Baruch Yedid /। "Hamas Distributes Qatari Money Quietly Brought Into Gaza" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ "FDD | Turkish Organizations Under Fire for Alleged Hamas Support"। FDD (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৩-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ "US accuses ex-Venezuela politician of helping recruit Hezbollah, Hamas operatives"। Middle East Monitor (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৬-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ "Izz al-Din al-Qassam Brigades (IQB) – Hamas – Mapping Palestinian Politics – European Council on Foreign Relations"। ECFR (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৩-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ "Al-Quds Brigades says it targets Israeli cities"। www.aa.com.tr। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ "Hamas: The Palestinian militant group that rules Gaza"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৫-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ "Country Reports on Terrorism 2004" (PDF)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৮-০২।
- ↑ "Lists associated with Resolution 1373"। New Zealand Police। ২০ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Georgy, Michael (২০১৫-০১-৩১)। "Egyptian court bans Hamas' armed wing, lists as terrorist organisation"। Reuters। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০১৫।
- ↑ "Specially Designated Nationals and Blocked Persons List" (পিডিএফ)। U.S. Department of the Treasury.। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০২১।
- ↑ "Executive Order 13224"। United States Department of State (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৭।
- ↑ Segev, Tom (১৯৯৯)। One Palestine, Complete। Metropolitan Books। পৃষ্ঠা 360–362। আইএসবিএন 0-8050-4848-0।
- ↑ [২]
- ↑ ক খ al-Qassam Brigades: Details of the organisation ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ আগস্ট ২০১১ তারিখে Australian Government National Security 15 September 2009
- ↑ Kass, Ilana; O'Neill, Bard E. (১৯৯৭)। The Deadly Embrace: The Impact of Israeli and Palestinian Rejectionism on the Peace Process (ইংরেজি ভাষায়)। University Press of America। আইএসবিএন 978-0-7618-0535-9।
- ↑ Kass & O'Neill Pg 268
- ↑ "Profile: Hamas commander Mohammed Deif"। BBC News। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১০।
- ↑ Berger, Yosef Ari Soffer। "Seeking Human Shields, Hamas Tells Gazans to Ignore IDF Warnings"। israelnationalnews.com। Arutz Sheva। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Sidner, Josh Levs, Sara, and Talal Abu-Rahma। "Rockets pound Israel, Gaza as Netanyahu alleges 'double war crime'"। cnn.com। Cable News Network. Turner Broadcasting System, Inc.। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৪।
- ↑ KEINON, HERB। "As casualties in Gaza rise, PM accuses Hamas of double war crime"। jpost.com। The Jerusalem Post। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "Protection of the civilian population"। Protocol Additional to the Geneva Conventions of 12 August 1949, and relating to the Protection of Victims of International Armed Conflicts (Protocol I), 8 June 1977.। International Committee of the Red Cross। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৪।
- ↑ Yousef, Mosab (২০০৯)। Son of Hamas। Tyndale Housing Publisher। পৃষ্ঠা 57।
- ↑ The Hamas war against Israel: A Diary – February 2008 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে Israel Ministry of Foreign Affairs
- ↑ Gunning, Jeroen (২০০৮)। Hamas in politics: democracy, religion, violence। New York, NY: Columbia University Press। পৃষ্ঠা ১৭৯। আইএসবিএন 978-0-231-70044-3।