আসানসোল জংশন রেলওয়ে স্টেশন
আসানসোল রেলওয়ে স্টেশন হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার একটি রেলওয়ে স্টেশন। এই স্টেশনটি আসানসোল শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকাকে রেল-পরিষেবা প্রদান করে থাকে।
আসানসোল | |
---|---|
ভারতীয় রেল জংশন স্টেশন | |
অবস্থান | স্টেশন রোড, আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান জেলা, পশ্চিমবঙ্গ ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৪১′২৯″ উত্তর ৮৬°৫৮′২৯″ পূর্ব / ২৩.৬৯১৩১° উত্তর ৮৬.৯৭৪৭৯২° পূর্ব |
উচ্চতা | ৯৬ মিটার (৩১৫ ফু) |
মালিকানাধীন | ভারতীয় রেল |
পরিচালিত | পূর্ব রেল, দক্ষিণ পূর্ব রেল |
লাইন | হাওড়া-দিল্লি মেন লাইনের বর্ধমান-আসানসোল বিভাগ ও আসানসোল পাটনা বিভাগ গ্র্যান্ড কর্ড ও হাওড়া-গয়া-দিল্লি লাইনের আসানসোল-গয়া বিভাগ আসানসোল-টাটানগর-খড়গপুর লাইন |
প্ল্যাটফর্ম | ৭ |
নির্মাণ | |
গঠনের ধরন | স্ট্যান্ডার্ড (অন গ্রাউন্ড স্টেশন) |
পার্কিং | পাওয়া যায় |
সাইকেলের সুবিধা | পাওয়া যায় |
অন্য তথ্য | |
অবস্থা | কার্যকর |
স্টেশন কোড | ASN |
বিভাগ | আসানসোল |
ইতিহাস | |
চালু | ১৮৬৩-৬৪ |
বৈদ্যুতীকরণ | ১৯৫৭-৬২ |
আগের নাম | ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি, বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে |
অবস্থান | |
বিবরণ
সম্পাদনাখনি শিল্পক্ষেত্র
সম্পাদনাসমিত রায়চৌধুরীর “গোমো লোকো শেড অ্যান্ড সিএলডব্লিউ ট্রিপ রেকর্ড” থেকে প্রাপ্ত বিবরণ অনুসারে, “দুর্গাপুর (হাওড়া থেকে ১৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত) থেকে ধানবাদ পর্যন্ত এবং তার বাইরের সমগ্র অঞ্চলটিতে শিল্পায়ন হয়েছে। কারখানা ছাড়া এখানে অনেক কয়লাখনি আছে। এগুলির কয়েকটি এখন বন্ধ। কয়েকটির খনিগর্ভের গভীরে আগুন জ্বলছে। খনি অঞ্চলটি বিরাট এলাকা জুড়ে পরিব্যাপ্ত। এটি মূলত এই ট্র্যাকের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। ট্র্যাকের খানিক অংশ কাটা অংশের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। এই এলাকাটির স্তর ট্র্যাক অপেক্ষা উঁচু। এর ফলে ট্রাকের মিলনস্থলে ছোটো ছোটো পাথরের সেতু দেখা যায়।”[১]
ইতিহাস
সম্পাদনাঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কার, টেগোর অ্যান্ড কোম্পানি দামোদর নদের নারায়ণকুড়ি ঘাট থেকে কলকাতায় কয়লা সরবরাহ করত। কিন্তু নদীর জল সারাবছর পর্যাপ্ত না থাকায় মাঝেমধ্যেই ঠিকমতো সরবরাহের কাজে বিঘ্ন ঘটত। লাভজনক একটি কয়লা পরিবহন ব্যবসা চালু করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি ১৮৫৫ সালে কলকাতা থেকে হুগলি পর্যন্ত প্রসারিত রেল লাইনটিকে রানিগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারিত করে। এরপর ১৮৬৩ সালে সেই লাইনটিকে আসানসোল পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়।[২][৩][৪]
রেলপথ স্থাপনের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানির প্রয়োজন হয় পরিকাঠামো উন্নয়নের। রানিগঞ্জ অঞ্চলের তৎকালীন জমিদার পরিবার (সিয়ারসোল রাজ) জমি দিতে অস্বীকার করেছিল। অধুনা কাশীপুরের জমিদার (পঞ্চকোট রাজ) শেরগড়ে জমি দিতে রাজি হন। আসানসোল সেই সময় এই অঞ্চলের অংশ ছিল। ১৮৬৩-৬৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি পঞ্চকোট রাজের থেকে একটি বড়ো জঙ্গল কেনেন। সেখানেই আসানসোল শিল্পাঞ্চলের উন্নয়ন শুরু হয়।[৩][৪]
এরপর আসানসোল আরও গুরুত্ব অর্জন করে। ১৮৬৬ সালে কলকাতা-দিল্লি পথে যে পথটি পরবর্তীকালে সাহেবগঞ্জ লুপ নামে পরিচিত হয়, সেই পথে প্রথম ট্রেন চলে। ১৮৭১ সালে আসানসোল ও ঝাঝা হয়ে একটি তুলনামূলক কম পথের লাইন চালু হয়। প্রথম দিকে এটিকে কর্ড বলা হত। কিন্তু বেশিরভাগ ট্রেন এই পথে চলতে শুরু করলে এই লাইনটির নাম পালটে মেন লাইন রাখা হয়। আগেকার মেন লাইনটির নাম হয় সাহেবগঞ্জ লুপ। ১৯০১ সালে সীতারামপুর-গয়া-মুঘলসরাই গ্র্যান্ড কর্ড লাইন নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হলে (এই লাইনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ১৯০৬ সালে এবং চালু হয়েছিল ১৯০৭ সালে), কলকাতা ও দিল্লির মধ্যে দূরত্ব আরও কমে যায়। আসানসোল এই সময় থেকে মেন ও কর্ড লাইনের জংশন হিসেবে কাজ করতে থাকে। প্রকৃত জংশন স্টেশন সীতারামপুর ছিল তুলনামূলকভাবে ছোটো স্টেশন।[৪][৫]
কলকাতা ও দিল্লিকে রেলপথে যুক্ত করার জন্য ব্যাপক কর্মকাণ্ড চলাকালীন ১৮৮৭ সালে বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে আসানসোল কয়লা বলয় পর্যন্ত নিজস্ব ট্র্যাক সম্প্রসারিত করে। এই ভাবে আদ্রা আসানসোলের সঙ্গে যুক্ত হয়।[২]
আসানসোল রেলপথে যুক্ত হওয়ার পর এই অঞ্চলের বিকাশ ও বৃদ্ধি গতি পেয়েছিল।[৩]
বৈদ্যুতিকরণ
সম্পাদনা১৯৫০-এর দশকে রেলপথের বৈদ্যুতিকরণের কাজ ব্যাপক গতি পেয়েছিল। প্রথম দিকে ৩ কেভি ডিসি ট্র্যাকশন স্থাপিত হলেও, রেল পরবর্তীকালে ২৫ কেভি এসি ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বর্ধমান-মুঘলসরাই বিভাগের বৈদ্যুতিকরণের কাজ শেষ হয়েছিল ১৯৫৭ সালে। ১৯৬০ সাল নাগাদ হাওড়া-গয়া অংশটির বৈদ্যুতিকরণের কাজ শেষ হয়।[৬] টাটানগর-আদ্রা-আসানসোল বিভাগের বৈদ্যুতিকরণের কাজ শেষ হয় ১৯৫৭-১৯৬২ পর্যায়ে।[৭]
লোকো শেড
সম্পাদনাভারতীয় রেলের প্রাচীনতম বৈদ্যুতিক লোকো শেডটি আসানসোলে অবস্থিত। এখানে ডব্লিউএজি-৫ ও ডব্লিউএএম-৪ বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন রাখা হয়।[৮]
আসানসোল বিভাগ
সম্পাদনা১৯২৫ সালে গঠিত আসানসোল বিভাগ ভারতীয় রেলের প্রাচীনতম বিভাগগুলির অন্যতম। হাওড়া-দিল্লি মেন লাইনের উপর এই বিভাগের এক্তিয়ার এলাকা খানা জংশনের ডিসট্যান্ট সিগন্যাল থেকে ঝাঝার ডিসট্যান্ট সিগন্যাল পর্যন্ত প্রসারিত। গ্র্যান্ড কর্ডের উপর এই বিভাগের এক্তিয়ার এলাকা প্রধানখুন্তার ডিসট্যান্ট সিগন্যাল পর্যন্ত প্রসারিত। এর এক্তিয়ার এলাকার ব্রাঞ্চ লাইনগুলি হল: অন্ডাল-সাঁইথিয়া, অন্ডাল-তপসী-বারাবনী-সীতারামপুর, মধুপুর-গিরিডি, জসিডি-বৈদ্যনাথধাম ও জসিডি-দুমকা। এই বিভাগের মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ৫৬৫ কিলোমিটার। খানা থেকে সীতারামপুর পর্যন্ত এই পথে চারটি লাইন (দুটি আপ ও দুটি ডাউন) রয়েছে। দৈনিক ১০০টি মেল/এক্সপ্রেস ট্রেন ও ২১২টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন এই পথে যাতায়াত করে। প্রতিদিন ১৪৪,০৭০ জন যাত্রী এই পথ ব্যবহার করেন।[৯]
যাত্রী চলাচল
সম্পাদনাভারতীয় রেলের সর্বোচ্চ একশোটি বুকিং স্টেশনের অন্যতম হল আসানসোল।[১০] আসানসোল রেলওয়ে স্টেশনের উপর দিয়ে ১৫২টি ট্রেন (সাপ্তাহিক ও দ্বি-সাপ্তাহিক ট্রেন সহ) চলাচল করে।[১১] হাওড়া রাজধানী ও দুরন্ত এক্সপ্রেস সব ট্রেন এই স্টেশনে থামে।
সুযোগ-সুবিধা
সম্পাদনাআসানসোল রেলওয়ে স্টেশনে ৩টি দ্বিশয্যা-বিশিষ্ট শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত প্রতীক্ষালয়, ২টি দ্বিশয্যাবিশিষ্ট অশীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত প্রতীক্ষালয় এবং একটি আটশয্যা-বিশিষ্ট ডরমিটরি আছে। প্লাটফর্ম নম্বর ২ আর ৭ এ চলন্ত সিঁড়ির সুবিধা রয়েছে।[১২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Gomoh loco shed and CLW trip record"। Indian Railway Reports। IRFCA।
- ↑ ক খ "The Chronology of Railway Development in Eastern India."। railindia। ১৬ মার্চ ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ ক খ গ "Asansol"। railindia। ৭ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ ক খ গ "Indian Railway History Timeline"। ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ "Hazaribagh District (1918)"। IRFCA। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ "Electric Traction - I"। IRFCA (Indian Railways Fan Club)। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ Ghose, Arabinda। "Platinum Jubilee of Railway Electrification in India"। Press Information Bureau। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ "Sheds and Workshops"। IRFCA। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ "Eastern Railway"। Asansol Division। Eastern Railway। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১১।
- ↑ "Indian Railways Passenger Reservation Enquiry"। Availability in trains for Top 100 Booking Stations of Indian Railways। IRFCA। সংগ্রহের তারিখ ৫ আগস্ট ২০১৩।
- ↑ "Trains at Asansol Junction"। IRFCA। ৩ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১২।
- ↑ "Retiring Room Details"। Eastern Railway। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১৩।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাউইকিভ্রমণ থেকে আসানসোল জংশন রেলওয়ে স্টেশন ভ্রমণ নির্দেশিকা পড়ুন।
পূর্ববর্তী স্টেশন | Indian Railways | পরবর্তী স্টেশন | ||
---|---|---|---|---|
Eastern Railway zone | ||||
শেষ স্টেশন | South Eastern Railway zone |