আলী নেওয়াজ (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯৮) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

আলী নেওয়াজ
মৃত্যু১৯৯৮
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

আলী নেওয়াজের জন্ম ফেনী জেলার সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে। তার বাবার নাম ফেলু মিয়া এবং মায়ের নাম নূর খাতুন। তার স্ত্রীর নাম সাহেদা বেগম। তাদের এক ছেলে, তিন মেয়ে। [২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন আলী নেওয়াজ। কর্মরত ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এ রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাসে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন তিনি। এরপর তিনি ভারতে যান। পরে যুদ্ধ করেন বৃহত্তর সিলেট জেলার ছাতক, গোয়াইনঘাট, রাধানগর, সালুটিকর, গোবিন্দগঞ্জসহ আরও কয়েক স্থানে। গোয়াইনঘাটের যুদ্ধে আলী নেওয়াজ যথেষ্ট রণকৌশল ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। বা ৩ ডিসেম্বর ভোর থেকে তারা গোয়াইনঘাটে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর একযোগে আক্রমণ শুরু করেন। পাকিস্তানি সেনাদের ধোঁকা দিয়ে কৌশলে তারা সুরমা নদী অতিক্রম করে তারা পাকিস্তানি সেনাদের বাংকার লক্ষ্য করে একের পর এক গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে পাকিস্তানি সেনারা চরমভাবে বিস্মিত হয়। কারণ, নদী অতিক্রম করে ঘাট এলাকা হয়ে পশ্চিম দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ পরিচালনা ছিল পাকিস্তানি সেনাদের কাছে কল্পনাতীত ঘটনা। তারা এ ঘটনার জন্য প্রস্তুতই ছিল না। বিস্মিত পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে পালাতে শুরু করে। সকাল হওয়ার আগেই গোয়াইনঘাট মুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

জামালপুর জেলার অন্তর্গত বাহাদুরাবাদ রেলঘাটের পূর্বে দেওয়ানগঞ্জের অবস্থান। এখানে তখন ছিল চিনিকল, রেলওয়ে ওয়ার্কশপ, পাওয়ার হাউস ও বেশ কিছু পাটগুদাম। ১৯৭১ সালে সেখানে পাকিস্তানি সেনারা স্থায়ীভাবে ছিল না। তারা দিনের বেলা ও রাতে বাহাদুরাবাদ বা জামালপুর থেকে এসে টহল দিয়ে চলে যেত। দেওয়ানগঞ্জে মোতায়েন ছিল এক কোম্পানি রাজাকার ও অস্ত্রসজ্জিত একদল বিহারি। ২ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা দেওয়ানগঞ্জে আক্রমণ করেন। এ যুদ্ধে আলী নেওয়াজসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা দুঃসাহসিকতার পরিচয় দেন। তাদের দুঃসাহসিকতায় পাকিস্তানি সহযোগীরা বেশির ভাগ কোনো প্রতিরোধ গড়ে তোলার আগেই পালিয়ে যায়। গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল একযোগে আক্রমণ চালাল দেওয়ানগঞ্জে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগীদের বিভিন্ন অবস্থানে। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলে ছিলেন আলী নেওয়াজ। তারা আক্রমণ করলেন চিনিকল, থানা, পাওয়ার হাউস, রেলস্টেশন, মাদ্রাসা ও পরিদর্শন বাংলোয়। মুক্তিযোদ্ধাদের আকস্মিক আক্রমণে চিনিকলে অবস্থানরত রাজাকার ও সশস্ত্র বিহারিরা কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই পালিয়ে গেল। পাওয়ার হাউস ও রেলস্টেশনে অবস্থানরত রাজাকার ও সশস্ত্র বিহারিরা কিছুক্ষণ প্রতিরোধ চালাল। কয়েক মিনিটের মধ্যে এরাও পালিয়ে গেল। মাদ্রাসায় ছিল রাজাকার ক্যাম্প। মাদ্রাসা ও থানায় অবস্থানরত রাজাকার ও সশস্ত্র বিহারিরা জোর প্রতিরোধ গড়ে তুলল। তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণের প্রচণ্ডতা বাড়িয়ে দিলেন। প্রচণ্ড আক্রমণে রাজাকাররা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। পাঁচজন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করল। এতে প্রতিরোধ সৃষ্টিকারী বাকি রাজাকার ও সশস্ত্র বিহারীদের মনোবল ভেঙে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে রাতের অন্ধকারে যে যেদিকে পারল পালিয়ে গেল। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৬-০৯-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

বহি:সংযোগ সম্পাদনা