আলবা মাদন্না

রাফায়েল অঙ্কিত চিত্র

আলবা মাদন্না ইতালীয় চিত্রশিল্পী রাফায়েলের দ্বারা কাঠের সমর্থনে ক্যানভাসের উপর তেলের দ্বারা চক্রাকারে আঁকা একটি চিত্রাঙ্কন[২] আনুমানিক ১৫১১ খ্রিস্টাব্দে তৈরী এই চিত্রে ইতালির একটি গ্রামে[৩]মাতা মেরি, শিশু যীশু খ্রীষ্ট এবং বাপ্তিস্মদাতা যোহনকে দেখানো হয়েছে।[১]

আলবা মাদন্না
ইংরেজি: Alba Madonna
আলবা মাদন্না
আলবা মাদন্নার বর্তমান ছবি
শিল্পীরাফায়েল
বছরআনুমানিক ১৫১১
ধরনতৈলচিত্র, কাঠ থেকে ক্যানভাসে স্থানান্তরিত[১]
আয়তন৯৪.৫ সেমি ব্যাস (৩৭+ ইঞ্চি)
অবস্থানন্যাশনাল গ্যালারি অফ আর্ট, ওয়াশিংটন, ডি.সি.
স্থানাঙ্ক৩৮°৫৩′২৯″ উত্তর ৭৭°১′১২″ পশ্চিম / ৩৮.৮৯১৩৯° উত্তর ৭৭.০২০০০° পশ্চিম / 38.89139; -77.02000
ওয়েবসাইটআধিকারিক ওয়েবসাইট

প্রায় দেড়-শতাব্দী ইতালিতে থাকার পর এটি স্পেনে ডিউক অফ আলবার সংগ্রহে চলে যায়, যেখানে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত এটি ছিল।তারপর রাশিয়ার রাজা নিকোলাস প্রথম এই চিত্রশিল্প কিনে নেন, তারপর এটি সেন্ট পিটার্সবার্গের হার্মিটেজ জাদুঘরে সম্রাটের সংগ্রহ হিসেবে শোভাবর্ধন করতে থাকে। ১৯৩১ সালে মার্কিন ব্যবসায়ী এন্ড্রু মেলন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে এটি কিনে নেন। ১৯৩৭ সাল থেকে এটি ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গ্যালারি অফ আর্টে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়।[১]

বর্ণনা

সম্পাদনা

যোহন বাপ্তাইজক যিশুর হাতে একটি ক্রুশ ধরিয়ে দিচ্ছেন,শিশু যিশু এই ক্রুশটি ধরতে চাচ্ছেন। তিনটি চরিত্রই ছবির মধ্যে ক্রুশের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আছেন,ক্রুশকে খ্রিষ্টানরা যিশুখ্রিষ্টের ক্রুশারোহনের একটি চিহ্ন মেনে থাকেন।[১] তিনটি চরিত্রই গোলাকার চিত্রটির বাম দিকের অংশে বেশি করে আছে,যদিও ডান দিকে মেরির বাম হাতে থাকা বইটি এবং মেরির পরনের কাপড়ের অংশ দ্বারা চিত্রটিকে পরিপূর্ণ করা হয়েছে। চিত্রটিকে শিখরীর মতো নিচে থেকে উপর পরিপূর্ণ করা হয়েছে।[৪] ১৫০৮ খ্রিস্টাব্দে রাফায়েল ফ্লোরেন্স ছেড়ে রোমে বসবাসের জন্য চলে যান। তখন খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় গুরু পাওলো গিওভিওর নির্দেশে চক্রাকারে অঙ্কিত এই চিত্রটি একটি ৯৪.৫ সেমি (৩৭.২ ইঞ্চি)ব্যাসবিশিষ্ট চক্রাকার কাঠের উপর তৈরী করেন।[৫]এই চিত্রটি রাফায়েলের প্রথমদিকের চিত্রকর্মের একটি উদাহরণ,যদিও এই চিত্রটি মাইকেলেঞ্জেলোর আঁকা সিস্টাইন চ্যাপেলের দ্বারা প্রেরনাপ্রাপ্ত।[৬]

চিত্র ঐতিহাসিক এন্ড্রু গ্রাহাম ডিক্সন এই চিত্রকর্মকে "একটি অবিশ্বাস্য শ্বাসরুদ্ধকর সুন্দরতম কাজ " বলে আখ্যায়িত করেছেন।[৭]

উৎপত্তি

সম্পাদনা

১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে পাওলো গিয়বিও যাজক নিযুক্ত হন,তিনি এই চিত্রটি নসেরার একটি গির্জায় দান করেন।১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে গাসপার মেন্ডেজ ডে হারো এই ছবিটিকে কিনে স্পেনে নিয়ে যান।তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে তার মেয়ে এই চিত্রটি লাভ করেন,যিনি পরবর্তীতে (১৭১১ সালে) ডিউক অফ আলবা উপাধিতে ভূষিত হন।অষ্টাদশ শতকে এটি আলবার ঘরেই ছিলো,যা থেকে তা আলবা নামটি পেয়েছে।[৮]

আলবার ডিউকের উত্তরাধিকারীরা এই চিত্রটিকে স্পেনে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত এডমান্ড বার্কের কাছে বিক্রি করে দেন,যিনি পরবর্তীতে এই চিত্রটি প্রথমে ফ্রান্স ও পরবর্তীতে ইংল্যান্ডে নিয়ে যান,যেখানে এটি তিনি ১৮২০ সালে লন্ডনের উইলিয়াম গর্ডন কোসেভেল্টের কাছে বিক্রি করে দেন।১৮৩৬ সালে কোসেভেল্ট একে রাশিয়ার রাজা নিকোলাস প্রথমের কাছে বিক্রি করেন,এর পর এটি সেইন্ট পিটার্সবার্গের হারমিটেজ জাদুঘরে রাজকীয় সংগ্রহ হিসেবে শোভা বর্ধন করে।[৯]

হারমিটেজে থাকার সময় ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে গোলাকার এই চিত্রটিকে বর্গাকৃতির ক্যানভাসে স্থানান্তরিত করা হয়। যদিও ছবিটিকে ভালো করে নিরীক্ষণ করলে দেখা যায় যে এর মূল কাঠামোটির মধ্যভাগে এবং ডানের দিকে অনেকগুলো আঁচড়ের মতো দাগ ছিলো যার মধ্যে ডানদিকের একটি দৃশ্যমান দাগ ছবিটিকে বর্গাকৃতির ক্যানভাসে স্থানান্তরিত করার সময় এসেছে বলে ধরা হয়।[১০]

 
রাফায়েলের আঁকা খসড়া চিত্র যেখানে আলবা মাদন্না সহ আরো কিছু চিত্রের খসড়া দৃশ্যমান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আলবা মাদন্না ন্যাশনাল গ্যালারি অফ আর্টের সেই ১০০টি চিত্রগুচ্ছের মধ্যে একটি ছিলো যেগুলোকে রেলে করে নর্থ ক্যারোলিনার অ্যাশভিল্লের একটি বাড়িতে সুরক্ষিত করে রাখা হয়েছিল। সেখানে সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছিল যার মধ্যে গোপনীয়তা বজায় রাখা ও স্টীলের ভারী দরজা লাগানোও অন্তর্ভুক্ত ছিল।১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় চিত্রগুচ্ছগুলোকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "রাফায়েল: আলবা মাদন্না"ন্যাশনাল গ্যালারি অফ আর্ট (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০২৪ 
  2. পি. জোন্স, ক্রিস্টোফার (২৯ জুন ২০২০)। "কীভাবে একটি ছবিকে পড়া যাবে–রাফায়েলের আলবা মাদন্না"মিডিয়াম.কম। ২৮ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০২৪ 
  3. জ্ঞানের বই: বাচ্চাদের বিশ্বকোষ (ইংরেজি ভাষায়)। । গ্রোলিয়ার সোসাইটি। ১৯৫৭। পৃষ্ঠা ৯৫৯। 
  4. হ্যান্স আলমা; মার্সেল বার্নার্ড; ভলকার কুস্টার (২০০৯)। দৃশ্যমান চিত্র এবং ধর্ম। এলআইটি ভারল্যাগ মুনস্টার। পৃষ্ঠা ৩৫। আইএসবিএন 9783825807085 
  5. "গুগল চিত্র ও সংস্কৃতি: রাফায়েলের আলবা মাদন্না"আর্টসএন্ডকালচার.গুগল.কম। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০২৪ 
  6. "আলবা মাদন্না (১৫১০ খ্রি.)(বিবরণ)"ন্যাশনাল গ্যালারি অফ আর্ট (ইংরেজি ভাষায়)। ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০২৪ 
  7. গ্রাহাম ডিক্সন, এন্ড্রু (১৯ ডিসেম্বর ২০০৪)। "আইটিপি ২৪২: আলবা মাদন্না"দা সান্ডে টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। 
  8. "আলবা মাদন্নার বিবরণী ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস"স্মিথসোনিয়ান। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০২৪ 
  9. "আলবা মাদন্নার উৎপত্তি"কন্টেমপরারি আর্ট। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০২৪ 
  10. ক্যারল, ক্রিস্টেনসেন (১৯৮৬)। "রাফায়েলের আলবা মাদন্নার পরীক্ষা এবং ফলাফল"স্টাডিজ ইন দি হিস্টরি অফ আর্টস১৭: ৪৭–৫৪। 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা