আবদুল জলিল শিকদার
আবদুল জলিল শিকদার (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০৬) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
আবদুল জলিল শিকদার | |
---|---|
মৃত্যু | ২০০৬ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাআবদুল জলিল শিকদারের জন্ম নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার চাচই গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল হক শিকদার এবং মায়ের নাম পুটি বেগম। তার স্ত্রীর নাম নূরজাহান বেগম। তার সাত ছেলেমেয়ে। [২]
কর্মজীবন
সম্পাদনাইপিআরে চাকরি করতেন আবদুল জলিল শিকদার। ১৯৭১ সালে যশোর ইপিআর সেক্টরের ৫ নম্বর উইংয়ের ‘এ’ কোম্পানির নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। কোম্পানির অবস্থান ছিল সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়াতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সেখান থেকে যশোরে এসে প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। আবদুল জলিল শিকদার ভারতে অবস্থানকালে কিছুদিন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। বিহারের চাকুলিয়ায় প্রথম ব্যাচের মুক্তিযোদ্ধাদের ২৪ দিন প্রশিক্ষণ দেন। এরপর ৯ নম্বর সেক্টরের অধীন হিঙ্গলগঞ্জ সাব সেক্টরে প্রশিক্ষক ও সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা দলকে বাংলাদেশের ভেতরে গেরিলা অপারেশনে পাঠানো, তাদের পরামর্থ ও সহায়তা প্রদান ইত্যাদি কাজই তিনি করতেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৩০ মার্চ থেকে যশোরে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধে যশোর ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের অধীন বেশির ভাগ বাঙালি ইপিআর সদস্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। হেডকোয়ার্টারের অধীন খুলনার ৫ নম্বর উইংয়ের তিন কোম্পানি ইপিআর সদস্য যশোরে সমবেত হয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন। আবু ওসমান চৌধুরীর নির্দেশে ৫ নম্বর উইংয়ের তিন কোম্পানি ইপিআর সদস্যের একাংশ যশোর শহরে, অপর অংশ ঝিকরগাছায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়। দুই দলের সার্বিক নেতৃত্বে থাকেন আবদুল জলিল শিকদার। তার নির্দেশে সুবেদার হাসান উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ‘সি’ কোম্পানি যশোর সেনানিবাসে মর্টারের সাহায্যে আক্রমণ করে। কিন্তু তারা পাকিস্তানি সেনাদের প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণে পিছে হটে নড়াইলের দিকে চলে যায়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা একদল আরেক দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঝিকরগাছার পতন হলে সেখানকার মুক্তিযোদ্ধারা ভারত সীমান্ত-সংলগ্ন বেনাপোলে আশ্রয় নেন। কয়েক দিন পর বেনাপোলও পাকিস্তানি সেনাদের দখলে চলে যায়। তখন মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে অবস্থান নেন। আবদুল জলিল শিকদার খবর পেলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরাট একটি দল সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে রাস্তার দুপাশের বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে তাদের অবস্থানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি এক দল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন ঝিকরগাছার লাউজানিতে। তার দলের দুই প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা সামনের দিকে পাঠালেন পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধে। যশোর-বেনাপোল সড়ক ধরে তারা কিছুদূর অগ্রসর হতেই পড়ে গেলেন পাকিস্তানি সেনাদের সামনে। পাকিস্তানি সেনারা তাদের প্রচণ্ড গতিতে আক্রমণ করল। প্রবল আক্রমণে তারা পিছু হটতে বাধ্য হলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা হাজির হলো আবদুল জলিল শিকদারের প্রতিরক্ষা অবস্থানের সামনে। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দল অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। তার পরও তারা প্রতিরোধ চালিয়ে গেলেন। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ:২২-১০-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।