আনন্দশঙ্কর

ভারতীয় সুরকার

আনন্দশঙ্কর (১১ ডিসেম্বর ১৯৪২ - ২৬ মার্চ ১৯৯৯) ছিলেন খ্যাতনামা ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী। [১]প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সুরের সংমিশ্রণে ফিউশন ধারার অসাধারণ সুরসৃষ্টি করে বিশ্বে সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেন।

আনন্দশঙ্কর
জন্ম(১৯৪২-১২-১১)১১ ডিসেম্বর ১৯৪২
আলমোড়া, উত্তরপ্রদেশ , ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২৬ মার্চ ১৯৯৯(1999-03-26) (বয়স ৫৬)
পেশাসঙ্গীতজ্ঞ, সুরকার
বাদ্যযন্ত্রঅর্কেস্ট্রা, সেতার
কার্যকাল১৯৭০ –১৯৯৯
লেবেলরিপ্রাইজ, ইএমআই

জন্ম ও সঙ্গীতশিক্ষা জীবন সম্পাদনা

আনন্দশঙ্করের জন্ম ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১১ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অধুনা উত্তরাখণ্ড রাজ্যের আলমোড়ায় তার পিতার কর্মস্থলে। পিতা প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয় শঙ্কর এবং মাতা নৃত্যশিল্পী অমলাশঙ্কর। তার কনিষ্ঠ পিতৃব্য ছিলেন প্রখ্যাত সেতার বাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর। সাংস্কৃতিক পরিবেশে লালিত আনন্দশঙ্কর সঙ্গীতে অনুরক্ত হন। গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া স্কুলে পড়ার সময় তিনি সেতার বাজাতে শেখেন। কিন্তু তিনি তার পিতৃব্য রবিশঙ্করের কাছে তালিম না নিয়ে, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার সুবাদে বারাণসীর প্রখ্যাত সেতারবাদক ড. লালমণি মিশ্রের কাছে সেতারবাদনে দীর্ঘ তালিম নেন। [২]

সঙ্গীতজীবন সম্পাদনা

ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের ছাত্র হয়েও তিনি পাশ্চাত্য সঙ্গীতের বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। ১৯৬০ দশকের শেষের দিকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। লস অ্যাঞ্জেলেসে পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সুর শিক্ষা নেন। সেই সঙ্গে তিনি সেখানে জিমি হেন্ডরিক্স সহ বহু সমসাময়িক গিটারবাদকদের সঙ্গে কাজ ( 'জ্যাম' অর্থাৎ একসঙ্গে বাজান) করেন। তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন যন্ত্রসংগীতের সার্থক মিলন ঘটিয়ে সৃষ্টি করেন ফিউশন মিউজিক। সেখানকার রিপ্রাইজ রেকর্ডস-এর সঙ্গে চুক্তি বদ্ধ হয়ে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উপাদান, জনপ্রিয় সেতারে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে রেকর্ড করলেন দ্য রোলিং স্টোনস' জাম্পিন' জ্যাক ফ্লাশ এবং দ্য ডোরস' লাইট মাই ফায়ার। পাশ্চাত্য যন্ত্রসংগীতের মুর্চ্ছনায় মুগ্ধ হল বিশ্ব। আনন্দশঙ্কর ফিউশন মিউজিকের গুরু হয়ে উঠলেন। তার এই অ্যালবাম ১০০১ অ্যালবামস ইউ মাস্ট হিয়ার বিফোর ইউ ডাই শীর্ষক গ্রন্থ অন্তর্ভুক্ত হল।[৩]

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের দেশে ফিরে আসেন এবং বিবাহ করেন তনুশ্রীশঙ্করকে । গিটারের সঙ্গে মৃদঙ্গ, রকসংগীতের পশ্চাদ্পটে সেতার বা সরোদের মিলন ঘটিয়ে সঙ্গীতজগতে অভিনবত্ব আনেন। প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের নানা বাদ্যযন্ত্রসহযোগে বের করেন অত্যন্ত জনপ্রিয় অ্যালবাম- আনন্দশঙ্কর অ্যান্ড হিজ মিউজিক। ১৯৯০ দশকে 'আনন্দশঙ্কর অ্যান্ড হিজ মিউজিক' অ্যালবামে সংযোজিত হয় ড্যান্সিং ড্রামস এবং মিউজিক অফ ক্যালকাটা [৪]

আনন্দশঙ্কর চলচ্চিত্র সঙ্গীতকার হিসাবে সুনাম অর্জন করেন। বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সুরারোপ করেন তিনি। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সুরস্রষ্টা ছিলেন তিনি।

স্ত্রী নৃত্যশিল্পী তনুশ্রীশঙ্করের সঙ্গে আনন্দশঙ্কর স্কুল অফ পারফর্মিং আর্টস নামে যন্ত্রসংগীত ও নৃত্যের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। তাদের অনুষ্ঠান দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

  • ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে বিজয় চৌধুরীর বারবধূ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার জন্য বি.এফ জে.এ পুরস্কৃত হন।

জীবনাবসান সম্পাদনা

আনন্দশঙ্কর ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ প্রয়াত হন। তার ও তনুশ্রীশঙ্করের একমাত্র কন্যা সন্তান শ্রীনন্দা শংকর।

নির্বাচিত চলচ্চিত্রসমূহ সম্পাদনা

আনন্দশঙ্কর সুরারোপিত চলচ্চিত্রসমূহ হল-

বছর ফিল্ম পরিচালক ভূমিকা
১৯৭২ কলকাতা ৭১ মৃণাল সেন
১৯৭৩ পদাতিক মৃণাল সেন
১৯৭৪ কোরাস মৃণাল সেন
১৯৭৬ মৃগয়া মৃণাল সেন
১৯৭৮ বারবধূ বিজয় চট্টোপাধ্যায়
১৯৮০ দুই পৃথিবী পীযূষ বসু

ডিসকোগ্রাফি সম্পাদনা

  • আনন্দ শঙ্কর, 1970 (এলপি, রিপ্রাইজ 6398; সিডি, কালেক্টরস চয়েস সিসিএম-545)
  • আনন্দ শঙ্কর এবং তাঁর সঙ্গীত, 1975 (ইএমআই ইন্ডিয়া)
  • ইন্ডিয়া রিমেম্বার্স এলভিস, 1977 (EP, EMI India S/7EPE. 3201)
  • মিসিং ইউ, 1977 (ইএমআই ইন্ডিয়া)
  • এ মিউজিক্যাল ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া, 1978 (ইএমআই ইন্ডিয়া)
  • সা-রে-গা মাচান, 1981 (ইএমআই ইন্ডিয়া)
  • 2001, 1984 (ইএমআই ইন্ডিয়া)
  • প্রলোভন, 1992 (ভারতের গ্রামাফোন কোম্পানি)
  • আনন্দ শঙ্কর: শুভ - শুভ, 1995
  • আনন্দ, 1999 (ইএমআই ইন্ডিয়া)
  • অর্পন, 2000 (ইএমআই ইন্ডিয়া)
  • ওয়াকিং অন, 2000 (রিয়েল ওয়ার্ল্ড 48118-2, বাংলা রাজ্যের সাথে)
  • আনন্দ শঙ্কর: এ লাইফ ইন মিউজিক – দ্য বেস্ট অফ দ্য ইএমআই ইয়ারস, 2005 (টাইমস স্কয়ার TSQ-CD-9052)
  • ইয়ারো এঝুধিয়া কবিদাই ইয়ার ফিল্ম থেকে তামিল ফিল্ম মিউজিক : 1986

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৪১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. Students' Britannica India, Volumes 1–5। Popular Prakashan। ২০০০। পৃষ্ঠা 377। আইএসবিএন 978-0-85229-760-5 
  3. Robert Dimery; Michael Lydon (৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। 1001 Albums You Must Hear Before You Die: Revised and Updated Edition। Universe। আইএসবিএন 0-7893-1371-5 
  4. "Ananda Shankar | Biography & History | AllMusic"। AllMusic। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৮