আজমল আলী চৌধুরী (১৯১৬–১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১) ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ এবং পাকিস্তানের সাবেক কেন্দ্রীয় শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ ও বাণিজ্য মন্ত্রী। তিনি পাকিস্তানের চতুর্থ জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) ছিলেন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং ১৯৪৭ সালের সিলেট গণভোটের সময়ের অবদানের জন্য তিনি শেরে সিলেট হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি উর্দুকে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা করার পক্ষে ছিলেন।[১] বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করার পর তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন।[২][৩][৪]

শেরে সিলেট
আজমল আলী চৌধুরী
পাকিস্তানের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৯৬৫ – ১৯৬৯
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯৬৫ – ১৯৬৯
পূর্বসূরীমুশাহিদ বায়ামপুরী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মআজমল আলী চৌধুরী
১৯১৬
সিলেট, ব্রিটিশ ভারত
(বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১(1971-12-18) (বয়স ৫৪–৫৫)
সিলেট
রাজনৈতিক দলনিখিল ভারত মুসলিম লীগ
মুসলিম লীগ (পাকিস্তান)
সম্পর্কমাহবুব আলী খান (চাচাতো ভাই)
প্রাক্তন শিক্ষার্থীমুরারিচাঁদ কলেজ

প্রাথমিক ও পারিবারিক জীবন সম্পাদনা

আজমল আলী চৌধুরী ১৯১৬ সালে সিলেট শহরের আমজদ আলী সড়কের একটি বাসায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা খান বাহাদুর আমজদ আলী চৌধুরী ছিলেন সিলেটে সরকারি আইনজীবী ১৯৩০-এর দশকে আদালতে মৃত্যুবরণ করেন, এবং মায়ের নাম হাবিবুন্নেসা খাঁনম। তাঁর নানা আসাদ্দর আলী খাঁন ছিলেন সিলেটের প্রথম মুসলিম সিভিল সার্জন এবং সৈয়দ আমীর আলীর জামাই।

তার ভাই ওয়ারিশ আলী চৌধুরী আসাম সিভিল সার্ভিসের সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তান হুকুমতের একজন কেন্দ্রীয় সচিব। তার বোন, খায়রুন্নেসা খাঁনম, পূর্ব বাংলার একজন স্কুল পরিদর্শক এবং পরে করাচি বেঙ্গলি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি আবুল মাল আবদুল মুহিতের চাচা আলী আশরফ বিন মুহম্মদ নাদির আম্বরখানীর স্ত্রী ছিলেন।[৫]

আজমল আলী চৌধুরী শিক্ষালাভ করেন সিলেটের মুরারীচাঁদ কলেজে ও উত্তর ভারতের বারাণসীতে। তিনি সিলেটের বাংলা নাটকে একটি চরিত্রে অভিনয় করেন।[৬] রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান ছিলেন তার চাচাতো ভাই।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

আজমল আলী চৌধুরী ১৯৩৭ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর সদস্য হিসাবে যোগদান করেন। তিনি আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটি এবং কাউন্সিলর ছিলেন। ৩ আগস্ট ১৯৪১ সালে তিনি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছে সিলেটের সারদা মেমোরিয়াল হলে একটি সভার কথা জানিয়ে চিঠি পাঠান যেখানে সিলেটবাসী জিন্নাহর নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেছিল।[৭]

১৯৪৪ সালে তিনি উনিসিপ্যাল ​​কমিশনার নির্বাচিত হন এবং নবাব মোহাম্মদ ইসমাইল খানের কাছে একটি চিঠিতে উল্লেখ করেন যে কীভাবে তিনি জানুয়ারিতে অল-আসাম মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।[৮] ১৯৪৬ সালে আসামের তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক আসামের মুসলমানদের উচ্ছেদের বিরোধিতা করার কারণে তিনি গ্রেফতার হয়ে ছিলেন।[৯] মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সিলেট সফরের সময় আলী চৌধুরীর বাড়িতে থাকতেন।[১০] পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর তিনি পূর্ববঙ্গ মুসলিম লীগ, মুসলিম লীগ গণসংযোগ কমিটি এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ কাউন্সিলের ওয়ার্কিং কমিটিতে যোগদান করেন।[৯]

১৯৬৫ সালের পাকিস্তানের চতুর্থ জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন।[১১] সিলেটের বিচ লাক্সারি হোটেলে তার সম্মানে সংবর্ধনা এবং বেগম ডলি আজাদের বাসায় নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। এমএনএ নির্বাচিত হওয়ার পর পর তিনি আইয়ুব খানের মুসলিম লীগে যোগদান করেন এবং কেন্দ্রীয় শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ ও বাণিজ্য মন্ত্রী নিযুক্ত হন।[৯]

তিনি উর্দুকে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা করার পক্ষে ছিলেন।[১] বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সমর্থন করার পর তিনি ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন।[৩]

মৃত্যু সম্পাদনা

আজমল আলী চৌধুরী ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে সিলেট শাহ জালাল দরগা এলাকায় নিজ বাসার কাছে মুক্তিবাহিনীর হাতে তিনি নিহত হন। মৃতদেহটি সিলেট সরকারি কলেজের বাইরে প্রদর্শনের জন্য তিন দিন রেখে দেওয়া হয় পরে পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার করে তাকে দাফন করেন। মুক্তিবাহিনী তাকে রাস্তায় নিয়ে যায় যেখানে তাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় এবং তার দেহ বিকৃত করা হয়। তিনি পাকিস্তান ভাঙ্গার বিরোধিতা করেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এবং উর্দুকে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা করার পক্ষে ছিলেন। তিনি সিলেট রেজিস্টার ময়দানে ডঃ আব্দুল মজিদ কর্তৃক আয়োজিত স্বাধীনতা বিরোধী সভায় যোগদান করেন, যেখানে আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলীও উপস্থিত ছিলেন।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. মিসবাহ (সম্পাদনা) (২০১৬)। রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে প্রথম আন্দোলন শুরু হয়েছিল সিলেটে। বাংলাদেশ: কমরেড আসাদ্দর আলী স্মৃতি পরিষদ। 
  2. মাহবুবুর রহমান (৬ ডিসেম্বর ২০১৯)। "আটচল্লিশ বছর আগে, এই ডিসেম্বরে"দৈনিক প্রথম আলো। ৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২২ 
  3. সৈয়দ মোস্তফা কামাল (১৯৯৩)। এম. সি. কলেজ, স্মৃতি বিস্মৃতির জাগ্রত অতীত। বাংলাদেশ: নিউ এমদাদিয়া লাইব্রেরি। পৃষ্ঠা ৩৭। 
  4. "হানাদার বাহিনীর সহযোগী সাবেক পাকিস্তানি মন্ত্রী আজমল আলী চৌধুরীর শান্তি কমিটির সভায় ভাষণদান"সংগ্রামের নোটবুক। ১৫ জানুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২১ 
  5. আবুল মাল আবদুল মুহিতআমার স্মৃতিকথা, ৩৫ ছেলেবেলা ও ছাত্রজীবন - সিলেট মুরারীচাঁদ কলেজে। বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ৩৫। 
  6. "সিলেটে নাটকের ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭। ৬ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০২২ 
  7. শাহেদী, মোহাম্মদ আকরাম (১৯৯৩)। "কায়েদ-ই-আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পেপারস, ১৭ কালীঘাট রোড, সিলেট"কায়েদ-ই-আজম পেপারস প্রজেক্ট, ন্যাশনাল আর্কাইভস অফ পাকিস্তান: ৬। 
  8. জেডএইচ, জাইদি (২০০৬)। "পরিশিষ্টঃ কায়েদ-ই-আজম পেপারস দ্বিতীয় সিরিজ সংস্করণ- ১৩": ৫২৭-৫২৯। 
  9. পাকিস্তান বিষয়ক (১৫ জুলাই ১৯৬৮)। আজমল আলী চৌধুরী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন। ওয়াশিংটন ডিসি। 
  10. চৌধুরী এটিএম মাসুদ (২০০৫)। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কয়েক দশকের স্মৃতি ও সমস্যা। বাংলাদেশ: একাডেমিক প্রেস অ্যান্ড পাবলিশার্স লাইব্রেরি। পৃষ্ঠা ১৭। 
  11. "১৯৬৫-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ৪র্থ জাতীয় পরিষদের সদস্যদের তালিকা" (পিডিএফ)পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারী ২০২১