আইশা রাতেব (ফেব্রুয়ারি ২২, ১৯২৮ - মে ৪, ২০১৩) একজন মিশরীয় আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, এবং মিশরের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রদূত। তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন এর অধ্যাপক ছিলেন।[১]

আইশা রাতেব
জন্মফেব্রুয়ারি ২২, ১৯২৮
মৃত্যুমে ৪, ২০১৩ , ৮৫ বছর
গিজা
মৃত্যুর কারণকার্ডিয়াক অ্যারেস্ট
অন্যান্য নামআয়সা রাতেব সৌদ
নাগরিকত্বমিশর
মাতৃশিক্ষায়তনকায়রো বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাআইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ
পরিচিতির কারণমিশরের প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত

জীবনী সম্পাদনা

রাতেব কায়রো-এর একটি মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[২]

শিক্ষা সম্পাদনা

যখন তিনি কলেজে ভর্তি হন, তিনি প্রথমে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়-এর সাহিত্যে পড়াশোনা করেছিলেন, কিন্তু অধ্যয়নের মাত্র এক সপ্তাহ পরে আইন বিভাগে স্থানান্তরিত হন।[২] ১৯৪৯ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন, আরও শিক্ষা লাভের জন্য প্যারিসে স্বল্প সময়ের জন্য যান এবং ১৯৫৫ সালে আইন বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।[২]

১৯৪৯ সালে কনসিল দে'এতাত (মিশরের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগীয় সংস্থা)-এ বিচারক হওয়ার জন্য রেতাব আবেদন করেছিলেন, এবং তার লিঙ্গের কারণে প্রত্যাখ্যাত হন।[৩] সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী, হুসেন সেরি পাশা, বলেন একজন মহিলা বিচারক হওয়া মানে "সমাজের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে" যাওয়া।[২] তিনি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন কারণ তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।[৪] তার এই ধরনের মামলা মিশরে প্রথম ছিল, এবং যখন তিনি মামলায় হেরে যান, রাষ্ট্র কাউন্সিলের প্রধান আব্দেল-রাজেক আল-সানহৌরী স্বীকার করেছিলেন যে তিনি শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণে হেরেছিলেন,[৫] মিশরীয় বা শরিয়া আইনের ভিত্তিতে নয়।[৬] মামলাটি এবং আল-সানৌউরির লিখিত মতামত অন্যান্য মহিলাদের উত্সাহিত করেছিল, যদিও ২০০৩ সালে তাহানী আল-গেবালি বিচারক হিসাবে নিযুক্ত হওয়ার আগে কোন মহিলা বিচারক হননি।[৭] ২০১০-এ, মিশরীয় প্রধানমন্ত্রী মহিলা বিচারকদের অনুমতি দেওয়ার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে একটি পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেন।[৮] ২০১৫ সালের জুলাই মাসে, ২৬ জন মহিলা অবশেষে বিচারক হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।[৬]

রাজনৈতিক কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৭১ সালে আরেব সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন, যেখানে তিনি মিশরের নতুন সংবিধান লিখতে সাহায্য করেছিলেন।[২] কমিটির সকল সদস্যের মধ্যে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন যিনি প্রতিবাদ করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আনোয়ার আল-সাদাতকে সংবিধান মঞ্জুরের যে অসাধারণ ক্ষমতা দেওয়া হয়ছিল তার বিরুদ্ধে[২]

পরে, মিশরের দ্বিতীয় নারী হিসেবে তিনি ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত বিমা ও সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৯] তার সময়কালে তিনি দেশের নারীদের জন্য সংস্কার পাস করতে সক্ষম হন। অন্ধবিশ্বাসী শাইখরা তার খ্যাতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করার সময়য়েও তিনি এটি করতে সক্ষম হন।[১০] রাতেব বহুবিবাহের উপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করেন এবং বিচারক দ্বারা সাক্ষ্য দেওয়া হলে বিবাহবিচ্ছেদ কেবল বৈধ হবে তা নিশ্চিত করেন।[১১] তিনি দারিদ্র্য নিরসনে সহায়তা করার জন্যও কাজ করেন এবং অক্ষম ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য আইন পাস করেন।[২] যখন সরকার অপরিহার্য পণ্যগুলিতে ভর্তুকি উত্থাপন করেছিল, এটি এমন একটি পদক্ষেপ যার ফলে মিশরের দরিদ্রতম নাগরিকরাও প্রভাবিত হবে, ১৯৭৭ সালে রুটি বিদ্রোহের সময় তিনি প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন।[২]

১৯৯ সালে, মিশরের প্রথম নারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে আরেবকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।[৯][১২] তিনি ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ডেনমার্কে রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত জার্মান ফেডারেল প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।[১]

তিনি সাবেক মিশরীয় প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের সমালোচনা করেছিলেন কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে তার শাসন ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে একটি বৃহৎ বিভাজন সৃষ্টি করেছে।[৯]

মৃত্যু সম্পাদনা

২০১৩ সালে হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট-এর কারণে গিজায় তার আকস্মিক মৃত্যু ঘটে।[১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Arab Women by First Name - All"Dubai Women's College। ১৪ জুন ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  2. Reda, Angele (২৪ মে ২০১৩)। "Aisha Rateb (1928-2013)"Watani। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  3. Hatem, Mervat F. (১৯৯৪)। "Privatization and the Demise of State Feminism in Egypt"। Mortgaging Women's Lives: Feminist Critiques of Structural Adjustment। United Nations। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 1856491013 
  4. "Aisha Rateb"Egypt Today। ২০ নভেম্বর ২০১৩। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  5. Elbendary, Amina (জানুয়ারি ২০০৩)। "Women On the Bench"Al-Ahram (620)। ২ জানুয়ারি ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  6. Messieh, Nancy; Gaber, Suzanne (২২ জুলাই ২০১৫)। "A Win for Women in Egypt's Courts"Atlantic Council। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  7. Khalil, Ashraf (২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৩)। "Egypt's First Female Judge May Remain 'The Only'"Women's eNews। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  8. Kenyon, Peter (৩ এপ্রিল ২০১০)। "Female Judges In Egypt Battle Against Old Ideas"NPR। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  9. Sami, Aziza (৯ মে ২০১৩)। "Obituary: Aisha Rateb (1928-2013) Women's Struggle: One Champion Down" (1147)। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  10. Sadat, Jehan (১৯৮৭)। A Woman of Egypt। New York: Simon & Schuster। পৃষ্ঠা 360আইএসবিএন 0743237080 
  11. "Egypt's First Female Ambassador Dies at 85"Aswat Masriya। ৫ মে ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  12. Sullivan, Earl L. (১৯৮৬)। Women in Egyptian Public Life। Syracuse, New York: Syracuse University Press। পৃষ্ঠা 82আইএসবিএন 0815623542