অ্যালকিন

রাসায়নিক যৌগ

জৈব রসায়নে, অ্যালকিন বা অলিফিন হলো অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন যাতে অবশ্যই একটি বা একাধিক কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন (>C=C<) থাকবে।[]

ইথিলিন অণুর মডেল

সরলতম অ্যালকিনের উদাহরণ হল ইথিন(C2H4)।

রাসায়নিক বন্ধন

সম্পাদনা

অ্যালকিনে কমপক্ষে একটি কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন (C=C) থাকবেই। একটি C=C দ্বিবন্ধনের মধ্যে একটি বন্ধন সিগমা বন্ধন এবং আরেকটি পাই বন্ধন দিয়ে গঠিত হয়। দ্বিবন্ধন সর্বদাই একটি সিগমা বন্ধনের থেকে শক্তিশালী এবং আকারে ছোট হয়ে থাকে। একটি দ্বিবন্ধনে জড়িত থাকা দুইটি কার্বন পরমাণু sp2 হাইব্রিড বন্ধনের হয়ে থাকে।

 
ইথিনের অরবিটাল চিত্র

বাহ্যিক কক্ষের ইলেকট্রন জোড়ার বিকর্ষনের তত্ত্ব (Valence shell electron pair repulsion অথবা VSEPR theory)থেকে জানা যায় দ্বিবন্ধনে থাকা দুইটি কার্বন পরমাণুর মধ্যের কোণের পরিমাপ হবে প্রায় ১২০°। যদিও এই কোনের মাপ পার্শবর্তী গ্রুপের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রোপিলিনের C–C–C কোণের মাপ ১২৩.৯°।

প্রাকৃতিক ধর্ম

সম্পাদনা

অ্যালকেনের ধর্ম জানার আগে অ্যালকেনের নামকরণ জানতে হবে। IUPAC পদ্ধতিতে অ্যালকেনের নামকরণ এই রকম-

  1. সরল শিকলবিশিষ্ট অ্যালকেনে এক কার্বন বিশিষ্ট অ্যালকেন (CH4)কে মিথেন,দুই কার্বন বিশিষ্ট অ্যালকেন(CH3–CH3)কে ইথেন, তিন কার্বন বিশিষ্ট অ্যালকেন(CH3–CH2–CH3)কে প্রোপেন এবং চার কার্বন বিশিষ্ট অ্যালকেন(CH3–CH2–CH2–CH3)কে বিউটেন নাম দেওয়া হয়েছে।
  1. অ্যালকেনের ক্ষেত্রে কার্বন সংখ্যার গ্রিক সংখ্যাসূচক শব্দের শেষে এন(ane)যোগ করে নামকরণ করা হয়।


অ্যালকিনের প্রাকৃতিক ধর্ম অ্যালকেনের মতই হয়। এরা গন্ধহীন, বর্ণহীন এবং দাহ্য পদার্থ। অ্যালকিনের প্রাকৃতিক অবস্থা (গ্যাসীয়, তরল, কঠিন)তার আণবিক ভরের ওপর নির্ভর করে। যেমন, সরলতম অ্যালকিন ইথিন, প্রোপিন, বিউটিন ইত্যাদি স্বাভাবিক উষ্ণতা ও চাপে গ্যাসীয়, পাঁচ থেকে পনের কার্বন বিশিষ্ঠ শাখাহীন অ্যালকিনেরা তরল এবং পনেরর বেশি কার্বন-সহ অ্যালকিনেরা মো্মের মত কঠিন পদার্থ হয়ে থাকে।[]

রাসায়নিক ধর্ম

সম্পাদনা

অ্যালকিনের মধ্যে কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধন থাকার জন্যে এরা অ্যালকেনের থেকে সক্রিয় হয় এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বেশি সক্ষম হয়ে থাকে।

সংযোজন বিক্রিয়া

সম্পাদনা

অ্যালকিনে উপস্থিত পাই বন্ধনের জন্যে এরা সংযোজন বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে দ্বিবন্ধন থেকে একক বন্ধনের যৌগে রূপান্তরিত হয়।

 

নিম্নে অ্যালকিনের কয়েকটি সংযোজন বিক্রিয়ার উদাহরণ দেওয়া হলঃ

হাইড্রোজিনেশান
সম্পাদনা

হাইড্রোজিনেশান বিক্রিয়ার অ্যালকিন থেকে অ্যালকেন তৈরী হয়। এই বিক্রিয়া উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রাতে (২০০° সেলসিয়াস) ধাতব অণুঘটকের উপস্থিতি করা হয়। প্ল্যাটিনাম, প্যালেডিয়াম, নিকেল ইত্যাদি অণুঘটক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই বিক্রিয়ার একটি উদাহরণ হল, ইথিন থেকে ইথেনের উৎপাদন।

CH2=CH2 + H2 → CH3–CH3

হাইড্রেশান
সম্পাদনা

হাইড্রেশান বিক্রিয়ায় অ্যালকিনের অণুর সাথে জলের অণুর সংযোজন বিক্রিয়া হয়ে অ্যালকোহল তৈরী হয়ে থাকে। যেমন নিম্নের বিক্রিয়ায়, ইথিন থেকে ইথানল তৈরী হয়েছে।

CH2=CH2 + H2O → CH3–CH2OH

হ্যালোজিনেশন
সম্পাদনা

এই বিক্রিয়ায় অ্যালকিন অণুর সাথে হ্যালোজেন অণুর (সাধারনত, ক্লোরিন, ব্রোমিন) সংযোজন হয়। অ্যালকিন ক্লোরিন এবং ব্রোমিনদের সাথে বিক্রিয়া করে ডাই-ক্লোরো, ডাই-ব্রোমো যৌগ উৎপাদন করে থাকে।

CH2=CH2 (g)+ Br2(g) → BrCH2–CH2Br(l)

হাইড্রোজেন হ্যালাইড সংযোজন

অ্যালকিন অণুর সাথে হাইড্রোজেন হ্যালাইড(HX) সংযোজন এর মাধ্যমে অ্যালকাইল হ্যালাইড (R-X) উৎপন্ন হয়।উদাহরণঃ

CH2=CH-CH2-CH3 +HCl→CH2Cl-CH2-CH2-CH3

এখানে বিউটিনএর সাথে হাইড্রোজেন ক্ল্রাইড এর সংযোজন এর ফলে বিউটাইল ক্লরাইড উৎপন্ন হয়েছে

পলিমারকরন বিক্রিয়া

সম্পাদনা

পলিমারকরণ বিক্রিয়াতে অ্যালকিন ও অন্যান্য প্রতিস্থাপিত অ্যালকিনসমূহ উচ্চচাপ, উচ্চতাপ ও প্রভাবকের উপস্থিতিতে এক অণু ওপর অণুর সাথে পরপর যুক্ত হয়ে উচ্চ আণবিক ভর বিশিষ্ট যৌগ গঠন করে। এ উচ্চ আণবিক ভরবিশিষ্ট যৌগটি হল পলিমার এবং মূল মাতৃ যৌগটি হল মনোমার।

 
পলিথিলিন তৈরীর পলিমারকরণ বিক্রিয়া

প্রস্তুতি

সম্পাদনা

শিল্পোৎপাদন পদ্ধতি

সম্পাদনা

কারখানাতে সাধারনত খনিজ-তৈলে প্রাপ্ত বড় হাইড্রোকার্বনকে ভেঙ্গে অ্যালকিনের উৎপাদন করা হয়।

 

ল্যাবরেটরি পদ্ধতি

সম্পাদনা

ল্যাবরেটরিতে অ্যালকিন প্রস্তুতি করতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে। যেমনঃ

দূরীকরণ পদ্ধতি (এলিমিনেশন বিক্রিয়া)

সম্পাদনা
 

C12H26 (500 °C)→ C10H22 + C2H4

কার্বনিল যৌগ থেকে

সম্পাদনা
 

অ্যালকোহল ও সালফিউরিক (গাঢ়) অ্যাসিড থেকে

সম্পাদনা
  • অ্যালকোহল এর সাথে দ্বিগুণ পরিমাণ গাঢ় সালফিউরিক এসিড যোগ করে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অ্যালকাইল হাইড্রোজেন সালফেট উৎপন্ন করা হয়।গ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে অ্যালকিন উৎপন্ন হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Moss, G. P.; Smith, P. A. S.; Tavernier, D. (১৯৯৫)। "Glossary of Class Names of Organic Compounds and Reactive Intermediates Based on Structure (IUPAC Recommendations 1995)"। Pure and Applied Chemistry67 (8–9): 1307–1375। ডিওআই:10.1351/pac199567081307 
  2. Barrows, Susan E.; Eberlein, Thomas H. (২০০৫)। "Understanding Rotation about a C=C Double Bond"J. Chem. Educ.82 (9): 1329। ডিওআই:10.1021/ed082p1329বিবকোড:2005JChEd..82.1329B