অপারেশন লালগড়

মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সশস্ত্র অভিযান

অপারেশন লালগড় পিপলস কমিটি এগেইনস্ট পুলিশ অ্যাট্রোসিটিস (পিসিএপিএ) নামে একটি গোষ্ঠীর পাশাপাশি একটি সশস্ত্র উপজাতীয় আন্দোলন সংগঠিত করতে সক্রিয় মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ভারতের একটি সশস্ত্র অভিযান ছিল। এই অভিযান পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে ও মাওবাদীদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার লালগড়ে পরিচালনা করা হয়।[১][২] পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার তিনটি মাওবাদী প্রভাবিত জেলায় অপারেশনের ক্ষেত্রটি ১৮ টি থানায় সম্প্রসারিত করার কথা বলা হয়।[৩]

পটভূমি সম্পাদনা

ঘটনার শিকড় ২০০৮ সালের ২ই নভেম্বরের একটি ঘটনার মধ্যে ছিল। শালবনিতে জিন্দাল স্টিল প্ল্যান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন থেকে ফেরার পথে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৎকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাম বিলাস পাসওয়ান ও জিতিন প্রসাদের কনভয় মাওবাদীদের ল্যান্ডমাইন হামলার শিকার হয়। যদিও মন্ত্রীরা অক্ষত ছিলেন, তবে এটি কনভয়ের একটি পুলিশ জিপকে বিধ্বস্ত করে এবং ছয় পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়।[৪] সিপিআই (মাওবাদী) একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে এবং স্পষ্টভাবে বলে যে তারা আদিবাসীদের জমিতে ইস্পাত কারখানার বিরোধিতা করেছে ও বিস্ফোরণের লক্ষ্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ছিলেন। হত্যার চেষ্টার পরে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ লালগড় এলাকা জুড়ে অভিযান চালায়। ক্ষমতাসীন দল সিপিআই (মার্কসবাদী) এর প্রভাবের কারণে, পুলিশি অত্যাচার, নির্বিচারে অভিযান ও নৃশংস মারধরের ফলে অনেক লোক, প্রধানত মহিলারা গুরুতর আহত হয়। মানুষ মারধর, নির্যাতন, নারী শ্লীলতাহানি ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছিল।[৫]

চাঁদাবাজি ও হামলা সম্পাদনা

চাঁদাবাজি ও মাওবাদীদের আক্রমণের সম্মুখীন হয়ে সরকারি কর্মীরাও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। লালগড়ের বাসিন্দারা দ্য হিন্দুকে জানিয়েছিল, যে ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট স্কিমের কর্মীদের প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল; ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসের স্কুলের শিক্ষক ও কর্মীরা বলেছিলেন, যে তারা স্থানীয় মাওবাদীদের দ্বিগুণ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

অক্টোব মাসে সরকারি ডাক্তার হনিরন মুর্মু ও কর্মী নার্স ভারতী মাঝির হত্যার পর, লালগড় এলাকায় স্বাস্থ্যসেবার প্রায় কোনও পরিষেবা ছিল না।

২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী থেকে তৃণমূল কংগ্রেস-ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস জোটের নিকট ক্ষমতার পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, এই জোট ৪২ টি আসনের মধ্যে মোট ২৫ টি আসনে জয়লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ অংশ নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সংঘর্ষের সাক্ষী ছিল এবং বেশিরভাগই মেদিনীপুর ও হুগলি জেলায় ঘটেছিল।[৬] লালগড় এলাকায়, জনগণ কর্তৃক সিপিআইএম পার্টি কার্যালয় ও নেতাদের বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়, যারা মাওবাদীদের কাছ থেকে সমর্থন পাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।[৭] ওইসব দলীয় কার্যালয় থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করায় হামলার মাত্রা বেড়ে যায়।[৮][৯] সিপিআইএম সমর্থকদের অনেকেই হয় কমিটিতে যোগ দিয়েছিলেন নতুবা হামলার ভয়ে এলাকা ছেড়েছিলেন। জনগণ পুলিশকে সামাজিকভাবে বয়কট করে, এবং তাদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় থেকে বিরত রাখে, যা পুলিশকে লালগড় এলাকায় তাদের ক্যাম্প ছেড়ে এটিকে ভার্চুয়াল মুক্ত অঞ্চলে পরিণত করতে বাধ্য করে।[২][১০]

অপারেশন — প্রথম পর্ব সম্পাদনা

পশ্চিমবঙ্গ সরকার লালগড়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ভারত সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েছিল।[১১][১২] মাওবাদীদের সাথে লড়াই করার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) পাঁচ কোম্পানি ও কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ফর রেজোলিউট অ্যাকশন (কোবরা) বাহিনীর দুই কোম্পানি সৈন্য ২০০৯ সালের ১৭শে জুন মেদিনীপুরে পৌঁছেছিল।[২] জেলা আধিকারিক, ডেপুটি জেনারেল অব পুলিশ (পশ্চিমবঙ্গ) ও স্বরাষ্ট্র সচিব অর্ধেন্দু সেনের মধ্যে একটি বিশেষ বৈঠকে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। অপারেশন শুরু করার চূড়ান্ত আদেশ দেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।[১৩]

অপারেশন — দ্বিতীয় পর্ব সম্পাদনা

গোয়ালতোড় রুট থেকে লালগড়ের দিকে অপারেশনের দ্বিতীয় পর্ব ২০০৯ সালের ২৬শে জুন শুরু হয়।[১৪][১৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Nag Choudhury, Subrata (১৯ জুন ২০০৯)। "Operation Lalgarh begins, 'human walls' stormed"। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  2. "Security forces advance into Maoist-held Lalgarh"The Hindu। Chennai, India। ১৮ জুন ২০০৯। ৪ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  3. "Security forces begin final push to end Lalgarh siege"। Zee News। ১৯ জুন ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  4. "Buddha, Paswan escape landmine blast"। NDTV। ২ নভেম্বর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "Lalgarh in 2002: A Saga of Police Brutality Years Before the Conflagaration"। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  6. "WB governor expresses concern over post-poll violence"The Economic Times। ৯ জুন ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  7. Mahato, Sukumar (১৬ জুন ২০০৯)। "PCPA overruns Lalgarh & Salboni, police pull out"The Times of India। ২৪ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  8. "Trinamool softens police boycott stand in Khejuri"The Indian Express। ১৭ জুন ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  9. "Tension prevails in Khejuri, cops recover more arms"। CNN-IBN। ১৩ জুন ২০০৯। ১৬ জুন ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  10. "Khejuri boycotts police"The Telegraph। ১৩ জুন ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  11. "Tribals stop paramilitary from entering Lalgarh, reinforcement rushed"। Press Trust of India। ১৫ জুন ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ [অকার্যকর সংযোগ]
  12. "PC asks Bengal govt to reclaim Maoist-hit areas"Deccan Herald। ১৮ জুন ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  13. Pronob, Mondal (১৯ জুন ২০০৯)। "Quick work during day, shots ring out at night"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  14. Bose, Raktima (২৭ জুন ২০০৯)। "Heavy firing near Lalgarh"The Hindu। Chennai, India। ৪ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 
  15. "Security forces begin operation to flush out Maoists"The Times of India। ২৬ জুন ২০০৯। ২৪ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা