অধিকারী ঠাকুরের সেবাশ্রম

জগন্মোহনী বাউল মতবাদ এর একটি শাখা আখড়া

অধিকারী ঠাকুরের সেবাশ্রমটি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার লাউতলী গ্রামে অবস্থিত । এই আখড়াটি জগন্মোহনী বাউল মতবাদ এর একটি শাখা আখড়া । আনুমানিক তিনশত বছর আগে এই আখড়াটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

অধিকারী ঠাকুরের সেবাশ্রম
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাচাঁদপুর জেলা
অবস্থান
অবস্থানফরিদগঞ্জ উপজেলা
দেশবাংলাদেশ

নামকরণ

সম্পাদনা

জানা যায় তৎকালীন শ্রীহট্র জেলার বর্তমান সিলেট জেলা থেকে কয়েকজন গোসাঁই লাউতলী গ্রামে দর্শন দেন । তারা মূলত জগন্মোহনা বাউল মতবাদ অনুসারী ছিলেন । তাদের মূল উদ্দেশ্যে ছিল নিরাকার নির্গুণ ব্রক্ষের উপাসনা ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা, তাদের আমন্ত্রণ দেখে হাজার হাজার ভক্ত শিষ্য তাদেরকে দেখতে আসেন । প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, এই গোসাঁইরা অগাধ জ্ঞানের এবং আধ্যাত্নিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন । উহাদের সাধন গুন আর আধ্যাত্নিক ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়ে অনেক ভক্ত তাদের শিষ্য হয়ে পড়েন । তারা সবাই ছিলেন দীক্ষা গুরুর (রামকৃষ্ণ গোঁসাই) চরণ লাভের অধিকারী, সেই নামকে অক্ষুণ্ণ রাখতে এই আখড়ার নামকরণ করা হয় অধিকারী ঠাকুরের সেবাশ্রম । তারা এই আখড়ায় বসে ধ্যান ও নাম গান করতেন বলে শিষ্য পরম্পরাদের থেকে জানা যায় । এরা সকলে জগন্মোহনী বাউল মতবাদ অনুসারী ছিলেন । উহারা মূর্তি পূজায় বিশ্বাসী ছিলেন না । []

এরা নিরাকার নির্গুণ ব্রক্ষ্মের উপাসক কোন সাকার দেবতার আরাধনা করেনা। কিন্তু কূল গুরু (দীক্ষা গুরু) কে সাক্ষাত ভগবান বলে স্বীকার ও বিশ্বাস করে। এদের মধ্যে শৌচ ও অশৌচ বলে কোন কথা বা প্রথা নেই। আখড়ায় নিত্য দুই বার ভোগ প্রদান করা হয়, এবং ভোগের বস্তু ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এই সকল আখড়ায় যারা রক্ষণা-বেক্ষণের কাজ করেন তাদেরকে সেবাইত বলা হয়, আর সকল ভক্তদের একত্রে সেবাদার বলা হয়। সন্ধ্যার পর সকল ভক্তবৃন্দ একত্রে উপবিষ্ট হইয়া সন্ধ্যা আরতি ও নাম কীর্তন করিয়া থাকে, ভক্তগণের কোন মানসিক সিদ্ধ হইলে তারা আখড়া হরিলুট প্রদান করে, সকল ভক্ত একত্রিত হইয়া ঐ হরি লুটের কাজ সম্পন্ন করে, প্রাপ্ত ঐ মানসিক এর অর্থ দ্বারা আখড়ার ব্যয় নির্বাহ হইয়া থাকে।

চিত্রশালা

সম্পাদনা

প্রসার

সম্পাদনা

আঠারো শতকের পরে এদের প্রসার বিস্তৃতি লাভ করে। ক্রমে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ এসে এই আখড়ার শিষ্যত্ব লাভ করে। এদের মধ্যে গৃহী ভাব দেখিতে পাওয়া যায় অর্থাৎ এরা গৃহে থেকে সাধন ভজন করে থাকে, যদিও এদের মধ্যে এক দলকে উদাসী ভাব দেখিতে পাওয়া যায়। এরা কূল গুরুর নিকট ব্রক্ষ্ম নাম গ্রহণ করিয়া তার অধীনে থেকে সাধন ভজন করে, এবং তার আজ্ঞা অনুসারে সাধন ভজনে প্রস্তুত হয়। এরূপে তাদের পুনরায় জন্ম হয় বলে এরা স্বীকার ও বিশ্বাস করে। কূল গুরু এদের দেবতা স্বরূপ, নিজ গুরু অবয়কে দেবতার ছবি মনে করিয়া এরা সাধন ভজন করে, সাকার দেবতার আরাধনা এদের মতে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। শিষ্যদের কোন মানসিক অভিষ্ট সিদ্ধ হইলে, কূল গুরুর আদেশ অনুসারে মানসিক সিদ্ধ করার জন্য প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়, বিবাহদি কার্য সম্পাদন করার জন্য দীক্ষা বা কূল গুরু যেরূপ, আদেশ করেন, তাহা অনুসারে বিবাহ কার্য সম্পন্ন করা হয়, যে সকল নারীগণ আখড়ার সেবা অর্চ্চনার কাজ করে তাদেরকে ঠাকুরানী বলা হয়, এরা সংসার ধর্ম অবলম্বন করিয়া সেবা অর্চ্চনার কাজ করিয়া থাকে। পুরুষ গোসাঁইদের কূল ব্রক্ষ্মচারী এবং নারী ঠাকুরানীদের ব্রক্ষ্মচারিনী বলা হয়। যে সকল পুরুষ গৃহে থাকিয়া ব্রক্ষচর্য পালন করে, তাদেরকে কূল ব্রক্ষ্মচারী বলা হয়, এরা যথাবিধানে সন্তান জন্মদান করিলেও ধর্মের কোন হেরপের হয়না।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. অক্ষয় কুমার দত্ত, ভারতবর্ষীয় উপাসক প্রথম খন্ড, জগন্মোহনী সম্প্রদায়