অজিতকুমার ঘোষ
ড. অজিতকুমার ঘোষ (১ জানুয়ারি ১৯১৯ - ২২ অক্টোবর ২০০৫) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি নাট্যগবেষক ও সাহিত্য সমালোচক। [১][২]
অজিতকুমার ঘোষ | |
---|---|
জন্ম | শায়েস্তানগর নোয়াখালী, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) | ১ জানুয়ারি ১৯১৯
মৃত্যু | ২২ অক্টোবর ২০০৫ কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ভারত | (বয়স ৮৬)
ভাষা | বাংলা |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
উল্লেখযোগ্য রচনাবলি | বাংলা নাটকের ইতিহাস নাট্যতত্ত্ব ও নাট্যমঞ্চ |
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার | সরোজিনী স্বর্ণ পদক দীনবন্ধু পুরস্কার |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাঅজিতকুমার ঘোষের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার শায়েস্তানগরে। পিতা রাজেন্দ্রলাল ঘোষ। তিনি রায়পুর বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক, দৌলতপুর কলেজ থেকে আই.এসসি পাশ করেন। তারপর কলকাতায় এসে বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরাজী অনার্স নিয়ে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে বি.এ.পাশ করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ পাশ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাযশোহরের তৎকালীন মাইকেল মধুসূদন কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এবং অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি বাংলা নাটক নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'বাংলা নাটকের ইতিহাস' গ্রন্থ রচনা আরম্ভ করেন এবং চার বৎসর পর ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের পর কলকাতায় চলে আসেন এবং সুরেন্দ্রনাথ কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। ষোল বৎসর এখানে সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে অধ্যাপনা করে ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। ইতিমধ্যে তিনি হাস্যরস ও হাস্যতত্ত্ব নিয়ে শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে গবেষণা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে গবেষণাপত্রটি নিবন্ধাকারে "বঙ্গ-সাহিত্যে হাস্যরসের ধারা" নামে প্রকাশিত হয়। তিনি শরৎচন্দ্রের জীবন ও সাহিত্য নিয়েও কয়েক বছর গবেষণা করেন এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি. লিট উপাধি লাভ করেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের রিডার এবং ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপক হন। অবসর গ্রহণের সময় তিনি বিভাগীয় প্রধান ও কলা অনুষদের অধ্যক্ষ ছিলেন।
তিনি নাট্যসমালোচনার সঙ্গে নাটক পরিচালনা করেন এবং অভিনয়ে অংশ নেন। তিনি ১৩৯৫ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাস থেকে ১৩৯৮ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাস পর্যন্ত বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
- বাংলা ভাষায়-
- নাটকের কথা (১৯৫৯)
- জীবন শিল্পী শরৎচন্দ্র (১৯৮৪)
- নাট্যতত্ত্ব ও নাট্যমঞ্চ (১৯৯১)
- বাংলা নাট্যাভিনয়ের ইতিহাস (১৯৮৫)
- ঠাকুরবাড়ির অভিনয় (১৯৮৮)
- নাট্যকার শচীন সেনগুপ্ত (১৯৯৪)
- রঙ্গমঞ্চে বাংলা নাটকের প্রয়োগ (১৯৯৪)
- নাট্যকার মন্মথ রায় (২০০১)
- সূর্যোদয়ের দেশে (২০০১)
- ইংরাজী ভাষায়-
- দীনবন্ধু মিত্র এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইন্ডিয়ান লিটারেচর (বাংলায় ৬ খণ্ড)
- মডার্ন ইন্ডিয়ান লিটারেচর (বাংলায় ৩ খণ্ড)
যশোহরে অধ্যাপনাকালে তিনি 'যশোহর কলেজ পত্রিকা ' এবং রবীন্দ্রভারতীতে রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনা করতেন।
সম্মাননা
সম্পাদনাঅধ্যাপক অজিতকুমার ঘোষ সাহিত্যকর্মের জন্য বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। সংবর্ধনা লাভ করেন "শিল্পী সংস্থা", "বঙ্গ-সংস্কৃতি কেন্দ্র" যোগেশ দত্ত মাইম আকাডেমি থেকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেয়েছেন সরোজিনী বসু স্বর্ণপদক এবং ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দীনবন্ধু পুরস্কার।
জীবনাবসান
সম্পাদনাঅজিতকুমার ঘোষ ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর কলকাতায় প্রয়াত হন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
- ↑ শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ৫। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9।