লরি ফিশলক
লরেন্স বার্নার্ড ফিশলক (জন্ম: ২ জানুয়ারি, ১৯০৭ - মৃত্যু: ২৫ জুন, ১৯৮৬) লন্ডনের ব্যাটারসী এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৭ সময়কালে ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।[১] ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে দলের পক্ষে খেলেছেন লরি ফিশলক। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতে ব্যাটিংয়ের দিকে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন তিনি।
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | লরেন্স বার্নার্ড ফিশলক | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | ব্যাটারসী, লন্ডন, ইংল্যান্ড | ২ জানুয়ারি ১৯০৭|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২৫ জুন ১৯৮৬ সাটন, লন্ডন, ইংল্যান্ড | (বয়স ৭৯)|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
ব্যাটিংয়ের ধরন | বামহাতি | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বোলিংয়ের ধরন | স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আন্তর্জাতিক তথ্য | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
উৎস: ক্রিকইনফো, ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ |
কাউন্টি ক্রিকেট সম্পাদনা
১৯৩০ সালে সারের কর্মী হিসেবে যোগদান করেন। পরের মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে লরি ফিশলকের। ১৯৩৪ সালের পূর্ব-পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যসংখ্যক খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ হয়নি তার। ঐ বছর ৩১.৪৭ গড়ে ৫৯৮ রান তুলেছিলেন। ১৯৩৫ সালে নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা লাভ করেন। ঐ মৌসুমে প্রথমবারের মতো সহস্রাধিক রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে সক্ষম হন। এ সময় তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন তিনি। পরের বছর নিজেকে আরও গুছিয়ে নেন। ৫৩.২২ গড়ে ২১২৯ রান তুলেন। ফলশ্রুতিতে লর্ডসে জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলায় প্লেয়ার্সের প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে আমন্ত্রিত হন।
দুইটি টেস্ট প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশগ্রহণের পর ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্ট খেলার জন্যে মনোনীত হন। পরবর্তী শীতকালে অস্ট্রেলিয়া গমনের জন্যে দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে, ডানহাতের হাড় ভেঙে যাবার প্রেক্ষিতে ছয় সপ্তাহ খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হয় তাকে। ফলে টেস্ট দলের বাইরে অবস্থান করতে হয় তাকে। ১৯৩৭ সালে সারে দলের পক্ষে ব্যাটিংয়ের অবস্থান পরিবর্তন করে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন। খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ই এ অবস্থানে ব্যাটিং করতেন তিনি। বিশালাকারের ব্যক্তিগত সংগ্রহ করার ইনিংস অব্যাহত রাখেন। ১৯৩৮ সালে টেস্টের প্রস্তুতিমূলক খেলায় অংশগ্রহণের জন্যে মনোনীত হন। ঐ খেলায় সেঞ্চুরি করলেও টেস্ট দলে তাকে রাখা হয়নি।
বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পাদনা
প্রকৌশলী হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন আরএএফের জন্যে বৈমানিক যন্ত্রাংশ তৈরি করতেন। যুদ্ধ শেষ হবার পর ১৯৪৬ সালে চমৎকার মৌসুম অতিবাহিত করেন তিনি। ৫০.৪৭ গড়ে ২২৪১ রান তুলেছিলেন লরি ফিশলক। ফলশ্রুতিতে, ভারতের বিপক্ষে একটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৪৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন।
টেস্ট ক্রিকেট সম্পাদনা
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে চারটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ ঘটে লরি ফিশলকের। ২৫ জুলাই, ১৯৩৬ তারিখে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৯৩৬-৩৭ ও ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে দুইবার অ্যাশেজ সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। উভয়ক্ষেত্রেই হাতে মারাত্মকভাবে চোট পান। ফলে একবার বিদেশ সফর থেকে বঞ্চিত হন।[২] ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে ইংরেজ দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ঐ সফরে নিজস্ব চতুর্থ ও সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৪৮ সালে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৫৩ রান তুলেন। লিচেস্টারের গ্রেস রোডে লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে এ সংগ্রহটি করেছিলেন।
অবসর সম্পাদনা
১৯৫২ সালে ৪৫ বছর বয়সে সর্বশেষ মৌসুম অতিবাহিত করেন। ঐ মৌসুমেও সহস্রাধিক রান তুলেছিলেন তিনি। এরফলে, একাধারে সাতবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভের ন্যায় অগ্রযাত্রার প্রথমটিতে প্রভূতঃ ভূমিকা পালন করেন।[২] এরপর, ক্রয়ডনের জন হুইটগিফট ট্রিনিটি স্কুল ও সেন্ট ডাস্টান্স কলেজে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
জুন, ১৯৮৬ সালে গুরুতর অসুস্থ থাকার পর লন্ডনের সাটনে এক হাসপাতালে চিকিৎসার্থে ভর্তি হন। অতঃপর অপারেশনের পর ২৫ জুন, ১৯৮৬ তারিখে ৭৯ বছর বয়সে লরি ফিশলকের দেহাবসান ঘটে।
মূল্যায়ন সম্পাদনা
চার টেস্টে অংশ নিয়ে আহামরি ধরনের কোন কিছু করতে সক্ষমতা দেখাতে পারেননি। জীবনের সেরা ছয়টি বছর অন্যান্যদের ন্যায় তারও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে নষ্ট হয়ে যায়।
বিখ্যাত ক্রিকেটবিষয়ক লেখক কলিন বেটম্যানের মতে, লরি ফিশলক কাউন্টি ক্রিকেটে সেরা ব্যাটসম্যানের অধিকারী ছিলেন। তবে দূর্ভাগ্যবশতঃ অন্যান্যদের ন্যায় তারও এক ক্রান্তিকালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল। আক্রমণধর্মী ব্যাটিং করতেন তিনি।
ক্রিকেটের পাশাপাশি পেশাদারী ফুটবলে মধ্যমাঠের খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন লরি ফিশলক। ১৯২৯ থেকে ১৯৩২ সময়কালে ক্রিস্টাল প্যালেসের পক্ষে তিন মৌসুমে ১৯ খেলায় অংশ নিয়ে দুই গোল করেছিলেন।[৩] এরপর ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত সাউদাম্পটনের সদস্যরূপে দুই মৌসুম খেলেছিলেন তিনি। পেশাদারী ফুটবলে ধাবিত হবার পূর্বে ডালউইজ হ্যামলেটে খেলেছিলেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন তিনি। পেশাদারী পর্যায়ে অল্ডারশট, জিলিংহাম ও মিলওয়াল দলে খেলেছেন।
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ "Laurie Fishlock"। www.cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ ক খ Bateman, Colin (১৯৯৩)। If The Cap Fits। Tony Williams Publications। পৃষ্ঠা 66। আইএসবিএন 1-869833-21-X।
- ↑ Purkiss, Mike; Sands, Nigel। Crystal Palace: A Complete Record 1905–1989। The Breedon Books Publishing Company। পৃষ্ঠা 324। আইএসবিএন 0907969542।
বহিঃসংযোগ সম্পাদনা
- ইএসপিএনক্রিকইনফোতে লরি ফিশলক (ইংরেজি)
- ক্রিকেটআর্কাইভে লরি ফিশলক (সদস্যতা প্রয়োজনীয়) (ইংরেজি)
- Video of Fishlock training with Southampton in 1934