হরিণ

স্তন্যপায়ী, তৃণভোজ়ী, চতুষ্পদী প্রাণী
(Deer থেকে পুনর্নির্দেশিত)

হরিণ কেরভিডায়ে পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা স্তন্যপায়ী প্রাণী। বল্গা হরিণ, মায়া হরিণ, সম্বর হরিণ এবং চিত্রা হরিণ এদের কিছু উদাহরণ। চাইনিজ ওয়াটার ডিয়ার এবং মাদি রেইনডিয়ার জন্ম নেয় এবং প্রতিবছর নিজের শিং নিজে নিজেই কেটে ফেলে। এইভাবে তারা নিজেদেরকে শিং ওয়ালা পশুদের কাছ থেকে একেবারেই বদলে ফেলে যেমন, এন্টিলোপ; এরা সাধারণ হরিণদের মতোই। এশিয়ার মাস্ক ডিয়ার এবং আর্দ্র ‌আফ্রিকার ওয়াটার চেভ্রোটেইন (অথবা মাউস ডিয়ার)দের কে আসল হরিণ ধরা হয়না কেননা তারা কেরভিডায়ে পরিবার বাদ দিয়ে নিজেদের আলাদা আলাদা পরিবার গঠন করে। নিচে এদের গঠন করা পরিবারের নাম দেওয়া হল- মাস্ক ডিয়ার= মোসচিডেই এবং ওয়াটার চেভ্রোটেইন= ট্রাগুলিডেই।

হরিণ
সময়গত পরিসীমা: Early Oligocene–Recent
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: স্তন্যপায়ী
বর্গ: Artiodactyla
উপবর্গ: Ruminantia
পরিবার: Cervidae
Goldfuss, 1820
Subfamilies

Capreolinae/Odocoileinae
Cervinae
Hydropotinae
Muntiacinae

ঢাকা চিড়িয়াখানাতে হরিণ

প্রস্তরযুগ থেকেই হরিণকে বিভিন্ন গুহায় আকাঁ ছবি বা ছাচে দেখা গেছে । ইতিহাসে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পৌরানিক কাহিনি, ধর্মীয় গাথা এবং সাহিত্যে এদের বর্ণনা আছে। অর্থনৈতিক দিক থেকেও তাদের গুরুত্ব ছিল যেমন মাংস হিসেবে, চামড়ার ব্যবহারে এবং ছুরির বাটে শিং ব্যবহারে। মধ্য যুগ থেকে হরিণ শিকার জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং এখনও তা রয়েছে।

বর্ণনা সম্পাদনা

 
লেজের বৈচিত্র্য:- ১) সাদা লেজের হরিণ, ২) mule deer, ৩) কাল লেজের হরিণ, IV) এল্ক, V) লাল হরিণ

যদিও একই রকম দেখতে তবুও এন্টিলোপ থেকে এদের পার্থক্য রয়েছে অনেক যেমন তাদের শিং নিয়মিতই গজায়। [১] হরিণের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আছে লম্বা, শক্তিশালী পা, লম্বা কান এবং হ্রস লেজ।[২] শারীরিকভাবে হরিণের অনেক বৈচিত্র্য দেখা যায়। সবচেয়ে বড় হরিণ হল চামরি গাই যেটা প্রায় ২.৬ মিটার (৮.৫ ফু) লম্বা এবং ওজন হয় ৮০০ কিলোগ্রাম (১,৮০০ পা)।[৩][৪] এল্করা কাঁধ থেকে লম্বায় হয় ১.৪–২ মিটার (৪.৬–৬.৬ ফু) এবং ওজন হয় ২৪০–৪৫০ কিলোগ্রাম (৫৩০–৯৯০ পা)।[৫] বিপরীতভাবে উত্তরের পুডু হল বিশ্বের সবচেয়ে ছোট হরিণ। এটা কাঁধ থেকে প্রায় ৩২–৩৫ সেন্টিমিটার (১৩–১৪ ইঞ্চি) লম্বা হয় এবং ওজন হয় প্রায় ৩.৩–৬ কিলোগ্রাম (৭.৩–১৩.২ পা)। দক্ষিণের পুডুগুলো উত্তরের চেয়ে একটু লম্বা আর ওজনদার হয়।[৬] বেশিরভাগ প্রজাতিতেই পুরুষ হরিণরা স্ত্রী হরিণের চেয়ে বড় হয়[৭] এবং, রেইনডিয়ার ছাড়া সব পুরুষেরই শিং আছে।[৮]

গায়ের রং সাধারণত লাল আর বাদামির মিশ্রণ হয়,[৯] যদিও tufted deer দেখতে গাঢ় চকোলেটের মত হয়[১০] অথবা এল্কের মত ইষৎ ধূসর হয়।[৫] brocket deer এর বিভিন্ন জাত ধূসর থেকে লালচে বাদামি রংয়ের হয়।[১১] বিভিন্ন জাতের হরিণ যেমন চিতল,[১২] fallow হরিণ[১৩] এবং সিকা হরিণের[১৪] বাদামি চামড়ায় সাদা ছোপ দেখা যায়। জায়গার উপর ভিত্তি করে রেইনডিয়ারের চামড়ায় উল্লেখযোগ্য বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়।[১৫] হরিণদের বছরে দুবার লোম ঝরে;[৯][১৬] যেমন লাল হরিণদের লাল চিকন গ্রীষ্মকালীন লোম ঝরে ধীরে ধীরে বাদামি ছাই রঙ্গা ঘন লোমে পরিণত হয় শরৎকালে যা আবার বসন্তের দিকে গ্রীষ্মকালের লাল লোমে পরিণত হয়।[১৭]photoperiod দ্বারা লোম ঝরে পড়া প্রভাবিত।[১৮]

হরিণরা ভাল ঝাপ দিতে পারে আর সাতারও কাটতে পারে। পত্রভোজী এই প্রাণী চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট পাকস্থলী আছে। কিছু হরিণ মাংসও খায় যদি তারা তা পেয়ে থাকে যেমন Rùm দ্বীপের হরিণরা।[১৯][২০]

হরিণ শাবকের প্রথম পদক্ষেপ

প্রায় সব হরিণেরই মুখাবস্থিত গ্রন্থি আছে চোখের সামনের অংশে। এই গ্রন্থিতে শক্তিশালী গন্ধক ফেরোমন রয়েছে, যা ব্যবহার করা হয় হরিণের নিজস্ব এলাকা চিহ্নিত করার কাজে। কিছু প্রজাতির হরিণের এই গ্রন্থি রাগান্বিত বা উত্তেজিত হলে খুলে যায়। সব হরিণের গলব্লাডার ছাড়া একটি লিভার আছে। এদের tapetum lucidum রয়েছে যার ফলে এরা রাতেও ভাল দেখতে পারে।

জীব বিদ্যা সম্পাদনা

 
হরিণ ছানা

খাদ্যাভ্যাস সম্পাদনা

হরিণরা বিচরণকারী জীব, তারা প্রধানত পাতা খায়। তাদের পাকস্থলি ছোট, জাবর কাটার উপযোগী এবং উচ্চ পুষ্টির প্রয়োজন। গৃহপালীত প্রাণী বা ভেড়ার মত তারা বেশি পরিমানে নিম্ন মানের আঁশযুক্ত খাদ্য খায় না বরং সহজে হজম হয় এমন খাবার যেমন কচি পাতা, নরম ঘাস, অঙ্কুরিত চারা, নরম ফল, গাছের ডাল, ছত্রাক এবং শৈবাল খায়। কম আঁশযুক্ত খাবারগুলো স্বল্প গাজন আর ছেছন প্রক্রিয়া শেষে খাদ্যনালী দিয়ে দ্রুত চলে যায়। হরিনের অনেক বেশি খনিজ পদার্থ বিশেষ করে ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট প্রয়োজন হয় শিংয়ের বৃদ্ধির জন্য যা পরে পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তার দিকে গড়ায়। অন্যদিকে কিছু রিপোর্টে দেখা গেছে হরিণরা মাংশাসি হচ্ছে যেমন Northern bobwhite'রা।[২১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Kingdon, J. (২০১৫)। The Kingdon Field Guide to African Mammals (2nd সংস্করণ)। London, UK: Bloomsbury Publishing। পৃষ্ঠা 499। আইএসবিএন 978-1-4729-2531-2 
  2. Jameson, E. W.; Peeters, H. J., Jr. (২০০৪)। Mammals of California (Revised সংস্করণ)। Berkeley, USA: University of California Press। পৃষ্ঠা 241আইএসবিএন 978-0-520-23582-3 
  3. Long, C. A. (২০০৮)। The Wild Mammals of Wisconsin। Sofia, Bulgaria: Pensoft। পৃষ্ঠা 439আইএসবিএন 9789546423139 
  4. Prothero, D. R.; Schoch, R. M. (২০০২)। Horns, Tusks, and Flippers: The Evolution of Hoofed Mammals। Baltimore, USA: Johns Hopkins University Press। পৃষ্ঠা 61–84। আইএসবিএন 978-0-8018-7135-1 
  5. Kurta, A. (১৯৯৫)। Mammals of the Great Lakes Region (1st সংস্করণ)। Michigan, USA: University of Michigan Press। পৃষ্ঠা 260–1। আইএসবিএন 978-0-472-06497-7 
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Geist নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7. Armstrong, D. M.; Fitzgerald, J. P.; Meaney, C. A. (২০১১)। Mammals of Colorado (2nd সংস্করণ)। Colorado, USA: University Press of Colorado। পৃষ্ঠা 445। আইএসবিএন 978-1-60732-048-7 
  8. Kingdon, J.; Happold, D.; Butynski, T.; Hoffmann, M.; Happold, M.; Kalina, J. (২০১৩)। Mammals of AfricaVI। London, UK: Bloomsbury Publishing। পৃষ্ঠা 116। আইএসবিএন 978-1-4081-8996-2 
  9. Feldhamer, G. A.; McShea, W. J. (২০১২)। Deer: The Animal Answer Guide। Baltimore, USA: Johns Hopkins University Press। পৃষ্ঠা 1–142। আইএসবিএন 978-1-4214-0387-8 
  10. Francis, C. M. (২০০৮)। A Field Guide to the Mammals of South-East Asia। London, UK: New Holland। পৃষ্ঠা 130আইএসবিএন 978-1-84537-735-9 
  11. Trolle, M.; Emmons, L. H. (২০০৪)। "A record of a dwarf brocket from Lowland Madre De Dios, Peru" (পিডিএফ)Deer Specialist Group News (19): 2–5। 
  12. Schmidly, D. J. (২০০৪)। The Mammals of Texas (Revised সংস্করণ)। Austin, Texas (USA): University of Texas Press। পৃষ্ঠা 263–4। আইএসবিএন 978-1-4773-0886-8। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  13. Hames, D. S.; Koshowski, Denise (১৯৯৯)। Hoofed Mammals of British Columbia। Vancouver, Canada: UBC Press। পৃষ্ঠা 113। আইএসবিএন 978-0-7748-0728-9 
  14. Booy, O.; Wade, M.; Roy, H. (২০১৫)। Field Guide to Invasive Plants and Animals in Britain। London, UK: Bloomsbury Publishing। পৃষ্ঠা 170। আইএসবিএন 978-1-4729-1153-7 
  15. Bowers, N.; Bowers, R.; Kaufmann, K. (২০০৪)। Mammals of North America। New York, USA: Houghton Mifflin। পৃষ্ঠা 158–9। আইএসবিএন 978-0-618-15313-8 
  16. Hooey, T. (২০০৪)। Strategic Whitetail Hunting। Krause Publications। পৃষ্ঠা 39আইএসবিএন 978-1-4402-2702-8 
  17. Ryder, M. L.; Kay, R. N. B. (১৯৭৩)। "Structure of and seasonal change in the coat of Red deer (Cervus elaphus)"। Journal of Zoology170 (1): 69–77। ডিওআই:10.1111/j.1469-7998.1973.tb05044.x 
  18. Lincoln, G. A.; Guinness, F. E. (১৯৭২)। "Effect of altered photoperiod on delayed implantation and moulting in roe deer" (পিডিএফ)Reproduction31 (3): 455–7। ডিওআই:10.1530/jrf.0.0310455। ৯ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  19. Owen, James (২৫ আগস্ট ২০০৩)। "Scottish Deer Are Culprits in Bird Killings"। National Geographic News। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০০৯ 
  20. Dale, Michael (১৯৮৮)। "Carnivorous Deer"। Omni Magazine: 31। 
  21. Ellis-Felege, S. N.; Burnam, J. S.; Palmer, W. E.; Sisson, D. C.; Wellendorf, S. D.; Thornton, R. P.; Stribling, H. L.; Carroll, J. P. (২০০৮)। "Cameras identify White-tailed deer depredating Northern bobwhite nests"। Southeastern Naturalist7 (3): 562–564। ডিওআই:10.1656/1528-7092-7.3.562