২০২১-এ মিয়ানমারে গণ আন্দোলন
২০২১ সালে মিয়ানমারের গণ আন্দোলন অথবা, ২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলন (ইংরেজি: 2021 Myanmar protests) বা "বসন্ত বিপ্লব" নামে বর্তমানে সর্বাধিক পরিচিত, হলো ২০২১ সালে সংঘটিত মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান-পন্থী রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড ও সামরিক শাসন-বিরোধী মিয়ানমারের এক অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রপন্থী জাতীয়তাবাদী নাগরিক আন্দোলন যা আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে শুরু হয়। ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারিতে [১] মিয়ানমারের সেনাপ্রধান ও তাতমাডো-র কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল মিন অং হ্লাইং এর নেতৃত্বে একটি সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়, যাতে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা ও একই সঙ্গে মিয়ানমারের দ্য ফ্যাক্তো সরকারপ্রধান অং সান সু চি-কে আটক করে সেনাবাহিনী তাদের জোড়পূর্বক গৃৃহবন্দী করে রাখে। অতঃপর সমগ্র মিয়ানমার জুরে এবং মিয়ানমার প্রবাসী ও অন্যান্য দেশের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের দ্বারা মিয়ানমারের বাইরে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়।
২০২১ সালে মিয়ানমারের গণ আন্দোলন | |||
---|---|---|---|
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের এবং ২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিক্রিয়া অংশ | |||
তারিখ | ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ - বর্তমান | ||
অবস্থান | |||
কারণ | ২০২১-এ মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান | ||
লক্ষ্য |
| ||
পদ্ধতি | আইন অমান্য আন্দোলন, বিদ্রোহ, বিক্ষোভ | ||
অবস্থা | চলমান | ||
পক্ষ | |||
| |||
নেতৃত্ব দানকারী | |||
অ-কেন্দ্রীভূত নেতৃৃত্ব | |||
ক্ষয়ক্ষতি | |||
নিহত | ১৮০+[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] | ||
গ্রেপ্তার | ২০০০+ |
আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মিয়ানমারের সামরিক সরকারের পদত্যাগ এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি-সহ অন্যান্য নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের নিঃশর্তে মুক্তি। বহির্বিশ্ব ও এই সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধীতাকারী দেশসমূহ, বিশেষত জাতিসংঘ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা এই আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে।
ক্রমবর্ধমান গণ আন্দোলন প্রতিহত করতে মিয়ানমারের সেনাসমর্থিত রাষ্ট্রীয় কাউন্সিল সকল ধরনের টেলিভিশন, রেডিও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য ইন্টারনেট-ভিত্তিক পরিসেবা বন্ধ করে দেয়। রাজনৈতিক প্রভাব মোকাবেলা ও স্থিতিশীলতা আনতে মিয়ানমারে জরুরী অবস্থাও জারি করা হয়[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]।
ইয়াংগুনের বিক্ষোভকারীরা ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে "Free Daw Aung San Suu Kyi" (ডও অং সান সু চি-কে মুক্ত করো) লিখিত ব্যানার নিয়ে আন্দোলন করেন। আন্দোলনের এই পদ্ধতিটি পরবর্তীতে অনেক আন্দোলনকারী ব্যপকভাবে গ্রহণ করেন। কিছু গণতন্ত্রপন্থী ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বিখ্যাত মিল্ক টি জোট (Milk Tea Alliance)-এ যোগ দিয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্র মতে, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত ১৭০০+ ব্যক্তিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এই আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকার জন্য আটক করেছে। ৬৯ জন বিক্ষোভকারী মৃত্যুবরণ করেছেন বলেও জানা গেছে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। ৩ মার্চ, ২০২১ তারিখে একদিনে সর্বোচ্চ আট-ত্রিশ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]।
এই আন্দোলনের প্রতীক হচ্ছে লাল রং, যা মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল এনএলডি. এর দলীয় পতাকার রং ও প্রতীক[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সকালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। এই ঘটনার পর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি, মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি উইন মিন্ট এবং ক্ষমতাসীন দল এনএলডি এর অধিকাংশ নেতাদের গৃহবন্দী করে ফেলে। এর কয়েক ঘণ্টা পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী এক বছরের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ও তাতমাডো-র প্রধান ও সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ জেনারেল মিন অং হ্লাইং এর হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত মায়াওয়াদি টিভি চ্যানেলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি মিন্ট সুয়ি এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেন যে, "আইন, প্রশাসন ও ন্যায়বিচার" এর উদ্দেশ্যে মিন অং হ্লাইং এর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]।
বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধানগণ মিয়ানমারে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থান ও গণ আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ৭ ফেব্রুয়ারিতে পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষকে জনসাধারণের সেবা, ন্যায়বিচার ও জাতীয় স্থিতিশীলতা আনার আহ্বান জানান এবং মিয়ানমারের আন্দোলনরত জণগণ এর সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন। ১০ ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন চলমান বিক্ষোভের ব্যপারে প্রকাশ্যে বলেন, "অবশেষে, প্রতিবাদ বাড়ার সাথে সাথে যারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মেনে নেওয়া যায় না, এবং আমরা তাদের পক্ষে সমর্থন জানাবো। বার্মার জণগণও এটাকে সমর্থন করবে, সমগ্র বিশ্ব তাদের কণ্ঠস্বর শুনছে ও তাদের আন্দোলন দেখছে"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]।
১৪ ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অভিযোগ করেন, সামরিক জান্তার ক্রমবর্ধমান শক্তির অপব্যবহার ও বড় বড় শহরে সাঁজোয়া যানবাহন মোতায়েন করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সম্মান করার এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতিশোধের শিকার না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। তিনি নিরাপত্তা কর্মীদের দ্বারা ভয়, সহিংসতা ও হয়রানির প্রতিবেদনকে "অগ্রহণযোগ্য" বলেও উল্লেখ করেন। তিনি মিয়ানমারের রাস্তায় রাস্তায় সেনা ও সশস্ত্র যানবাহন মোতায়েনকে নিন্দা জানিয়েছেন এবং কর্তৃপক্ষকে "সর্বোচ্চ সংযম" প্রয়োগের আহ্বান জানান। এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন টুইট করে বলেন, "আমরা মিয়ানমারের জনগণের পাশে আছি এবং আমরা এই অভ্যুত্থানের জন্য দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করবো"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]।
২১ ফেব্রুয়ারি ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ তাতমাডো-র ফেইসবুক নীড়পাতা বন্ধের ঘোষণা দেয় এবং মন্তব্য করে যে, "সেনাবাহিনী সহিংসতার উস্কানিতে নিষেধাজ্ঞার মান লঙ্ঘন করেছে"[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Anti-Coup Protest on Streets of Myanmar's Second City"। US News। ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১।