২০১২ রামু সহিংসতা

বাংলাদেশে একটি ধর্মীয় সহিংসতা

২০১২ সালের রামু সহিংসতা বলতে বোঝায়, বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায়[] স্থানীয় জনতা কর্তৃক ২০১২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে বৌদ্ধ বিহার, মন্দির ও ঘরবাড়িতে ধারাবাহিক হামলা।[] বৌদ্ধ পুরুষ নামে একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্টের টাইমলাইনে কোরআন অবমাননাকারী একটি ছবি ট্যাগ করার প্রতিক্রিয়ায় জনতা ১২ টি বৌদ্ধ মন্দির ও মঠ এবং ৫০ টি বাড়ি ধ্বংস করে।[][][] ছবিটির প্রকৃত পোস্টিং কোন বৌদ্ধধর্মাবলম্বী দ্বারা করা হয়নি, যাদের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছিল।[] এই অভিযোগ থেকে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা নির্দোষ ছিলেন।[] এই সহিংসতা পরে কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলাচট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে,[] যেখানে বৌদ্ধ বিহার ও হিন্দু মন্দিরকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করা হয়।

আনুমানিক ২৫,০০০ জনের বেশি জনতা[] বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের উপর পরিচালিত সহিংসতায় অংশ নিয়েছিল এবং এই হামলার সাথে জড়িত থাকার জন্য ৩০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩০শে সেপ্টেম্বর একটি সরকারী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এটি ১ অক্টোবর আলোচনায় বসেছিল এবং সমস্যাগ্রস্ত উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন ও দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছিল।[১০]

কক্সবাজারের রামুতে একটি বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১২ই মে সুপ্রিম কোর্ট বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদকে চার সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। সরকারি তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তোফায়েল আহমেদ রামুর ঘটনার প্রধান সন্দেহভাজন ছিলেন।[১১]

প্রতিক্রিয়া

সম্পাদনা

বার্মা,[১২] ভারত,[১৩] শ্রীলঙ্কা,[১৪]থাইল্যান্ডে[১৪] বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও হিন্দু গোষ্ঠী বাংলাদেশে বৌদ্ধ-বিরোধী সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে কেউ কেউ বাংলাদেশি দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি পিটিশন প্রদান করা হয়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পূর্বে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে বাংলাদেশি প্রতিবাদকারীদের দ্বারা দূতাবাসের কিছু জানালা ভাঙচুর করা হয়, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।[১৪]

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ই অক্টোবর বৌদ্ধবিরোধী সহিংসতার নিন্দা জানান, তিনি ঘটনাটি পূর্বনির্ধারিত বলে বিশ্বাস করেন বলে উল্লেখ করেন এবং এই বিষয়ে সকলকে সংযমের আহ্বান জানান।[১৫]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Violencia religiosa en Bangladesh por imagen ofensiva publicada en Facebook"BBC Mundo 
  2. "Desa-desa Buddha di Bangladesh diserang"BBC Indonesia। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২। 
  3. "ভুয়া খবর ঘিরে বাংলাদেশে পাঁচটি বড় ঘটনা"। www.bbc.com। বিবিসি বাংলা। ১৪ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২১ 
  4. "Extremists 'linked'"The Daily Star। ১ অক্টোবর ২০১২। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২১ 
  5. "Khaleda for neutral probe, tough action"The Daily Star। ১ অক্টোবর ২০১২। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২১ 
  6. "Bangladesh rampage over Facebook Koran image"BBC News। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২। 
  7. "Bangladesh Buddhists pick up pieces after mob rampage"BBC News। Ramu, Cox's Bazar District। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। 
  8. "5 Buddhist temples attacked in Ukhia"bdnews24.com। ২ সেপ্টেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২১ 
  9. "Rioting mob torches temples in Bangladesh"ABC News। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২। ১০ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২১ 
  10. Juberee, Abdullah; Atikuzzaman, A.K.M. (২ অক্টোবর ২০১২)। "Mobs torch two more monasteries in Cox's Bazar"The New Age। ৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২১ 
  11. "SC cancels key Ramu attacker's bail"The Daily Star 
  12. "Burmese Buddhists protest attacks"The Scotsman। ৬ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. "Buddhists, Hindus in Tripura protest against attack on Bangladesh temples"। News Track India। ৯ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২১ 
  14. "Bangladesh embassy stoned during monks' protest" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। Agence France-Presse। ৪ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২১ 
  15. "Attack on Buddhist Temples premeditated: Prime Minister Sheikh Hasina"Asian Tribune। ৭ অক্টোবর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০২১