হামিদা হোসেন
হামিদা হোসেন (জন্ম: ২৮শে ডিসেম্বর, ১৯৩৬) একজন বিশিষ্ট প্রবীণ বাংলাদেশী মানবাধিকার কর্মী এবং শিক্ষাবিদ।[১] হামিদা হোসেন বিশ্বব্যাপী এ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং নারীদের বিভিন্ন বিষয় সংক্রান্ত প্রবন্ধসহ অনেক বই প্রকাশ করেছেন।[২] তিনি আইনগত চিকিৎসা এবং মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
হামিদা হোসেন | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
মাতৃশিক্ষায়তন | ওয়েলেসলি কলেজ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | মানবাধিকার কর্মী এবং শিক্ষাবিদ |
দাম্পত্য সঙ্গী | কামাল হোসেন |
সন্তান | সারা হোসেন |
পিতা-মাতা |
|
১৯৬৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের সাথে তিনি ইংরেজি ভাষায় মাসিক বর্তমান বিষয়াবলি পত্রিকা ফোরাম প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৭১ সালে মাত্র চার বছরের মাথায় পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। হামিদা হোসেন মাত্র ২ -৩ বছর পর্যন্ত কারিকার মহাসচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশে যাঁরা বর্তমানে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছেন, তিনি তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় নেত্রী।
হোসেন হলেন সেন্টার ফর সেকুলার স্পেস-এর পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য, একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিরুদ্ধে ধর্মীয় চরমপন্থা।[৩] নারী অধিকার এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার জন্য 'অনন্যা শীর্ষ দশ' পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাপরিবার
সম্পাদনাড. হামিদা হোসেন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর, পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের একটি শহর হায়দ্রাবাদে। তার বাবা আব্দুল্লাহ শফি মোহাম্মদ আকন্দ ছিলেন একজন বিচারক। তাদের পারিবারিক উপাধি ছিল "আকন্দ"। হামিদা হোসেনের মাতা তুরস্কে বড় হয়েছেন এবং ১৬ বছর বয়সে বিবাহের পর বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বাবা-মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে হামিদা সবার থেকে কনিষ্ঠ।[৪]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনা১৯৬২ সালে একবার বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলেন, কিন্তু স্থায়ীভাবে এ দেশে ফিরে আসেন ১৯৬৫ সালে। তিনি ১৯৬৫ সালে বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি বাংলাদেশের গণফোরাম রাজনৈতিক দলের একজন সভাপতি।[৫] তাদের একমাত্র কন্যা সারা হোসেন, যিনি পেশায় একজন আইনজীবী ও লেখক।[৬][৭]
শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন
সম্পাদনাহায়দ্রাবাদে স্থানান্তরিত হওয়ার পর তিনি একটি মিশনারী স্কুলে ভর্তি হন। তার শিক্ষার মাধ্যম ছিল ইংরেজি আর দ্বিতীয় ভাষা ছিলো পার্সি। এই স্কুল থেকে ১৯৫১ সালে তিনি মেট্রিক পাশ করেন। এরপর হায়দ্রাবাদ কলেজে ভর্তি হলেও পরবর্তীতে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলেসলি কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ পান। সেখানে তিন বছর পড়াশোনা করেন এবং সত্তরের দশকে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসের ওপর পিএইচডি করেন।[৮]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার পরে তিনি করাচীতেপাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স-এর গবেষণা সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হোসেনকে সেখানে জার্নাল সম্পাদনের দায়িত্ব পালন করতে হতো। অতপর তিনি করাচীতে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের একজন সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের ঢাকা অফিসে যোগ দেন তিনি। এছাড়াও হামিদা হোসেন করাচি হতে প্রকাশিত রাজনৈতিক সাপ্তাহিক পত্রিকা আউটলুক-এ একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে জড়িত ছিলেন, কিন্তু আইয়ুব খানের সামরিক সরকার এক পর্যায়ে এটিকে বাজেয়াপ্ত করে।
১৯৬৮ সালে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান সহ আরও কিছু বন্ধু মিলে 'ফোরাম' নামের একটি রাজনৈতিক সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নিলে হামিদা হোসেন প্রধান সম্পাদকের ভূমিকায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মাত্র চার বছরের মাথায় পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায় এবং পত্রিকাটির সর্বশেষ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল মার্চের ৩য় সপ্তাহতে। হামিদা হোসেন স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধে স্বামী-সন্তান হারানো বিধবা অসহায় মহিলাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি সমগ্র বাংলাদেশ হতে সংগৃহীত কারুশিল্প নিয়ে জাতীয় পর্যায়ের একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। এই আয়োজকটি 'কারিকা' এবং 'হস্তশিল্পী সমিতি' গঠনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
হামিদা হোসেন মাত্র ২ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত কারিকার মহাসচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর রওশন জাহান ও সালমা সোবহানের সাথে মিলে গার্মেন্টস সেক্টরে নারী শ্রমিকদের ওপর একটি গবেষণা সমাপ্ত করেন।[৯] পরবর্তীতে এই গবেষণার প্রতিবেদন হিসেবে ইউনির্ভাসিটি প্রেস অপেক্ষা প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়াও তিনি দেশের নাগরিক উদ্যোগ এবং রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিইব) নামের আরও দুটি প্রতিষ্ঠানে ভাইস চেয়ারপারসন পদে সম্পৃক্ত ছিলেন।[১০]
সূচনালগ্ন থেকে আরাম্ভ করে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রিসার্চ এন্ড এ্যাডভোকেসি পরিচালকের দায়িত্বে প্রায় ২৯ বছর কর্মরত ছিলেন হামিদা হোসেন। এখানে তিনি মানবাধিকার, সামাজিক মর্যাদার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা বিশেষভাবে নারী অধিকার ইত্যাদি সম্পর্কিত গবেষণার কাজও করেছেন।[১১]
আরো দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Dr. Hameeda Hossain" (ইংরেজি ভাষায়)। zoominfo। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Hameeda Hossain" (ইংরেজি ভাষায়)। South Asia Citizens Web। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ "Board of Directors" (ইংরেজি ভাষায়)। Centre for Secular Space। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ "হামিদা হোসেন"। bdnews24.com। ১১ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Two decades of Gono Forum" (ইংরেজি ভাষায়)। Probenews। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২। ২০১৩-১০-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-২২।
- ↑ "Nurul Kabir to continue his defence on Dec 20"। BDNews24 (ইংরেজি ভাষায়)। ১ ডিসেম্বর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৭।
- ↑ "Yunus verdict today"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ মে ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১৮।
- ↑ মোদক, দেবযানী (অক্টোবর ১৯, ২০১৫)। "একজন হামিদা হোসেন"। bonikbarta.com। বণিক বার্তা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ হোসেন, হামিদা। "How far have we truly come?"। thedailystar.net (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "The Daily Star Web Edition Vol. 5 Num 895"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ লাবনী, ফাতেমা বেগম। "হামিদা হোসেন"। gunijan.org.bd। গুণীজন। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৬।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- হামিদা হোসেন ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ মে ২০১৫ তারিখে