হাত
হাত হল প্রাইমেট (শ্রেষ্ঠ বর্গভুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী)দের অগ্রবাহু বা অগ্রপদের শেষে অবস্থিত একটি প্রিহেনসিল বা একাধিক আঙুলযুক্ত উপাঙ্গ। এই প্রাইমেটদের মধ্যে আছে মানুষ, শিম্পাঞ্জি, বানর, এবং লেমুর। আরও কয়েকটি মেরুদণ্ডী প্রাণী, যেমন কোয়ালাদের, (যাদের প্রতিটি "হাত" য়ে দুটি বিপরীতমুখী বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ রয়েছে এবং মানুষের আঙুলের ছাপ এর অনুরূপ আঙুলের ছাপ রয়েছে) সম্মুখ প্রত্যঙ্গে থাবার পরিবর্তে যা রয়েছে তাকে "হাত" বলা হয়। বলা হয় র্যাকুনদের সাধারণত "হাত" রয়েছে, যদিও তাদের বিপরীতমুখী বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ নেই।[১]
হাত | |
---|---|
বিস্তারিত | |
শিরা | হাতের ডরসাল শিরাতন্ত্র |
স্নায়ু | উলনার, মিডিয়ান, রেডিয়াল নার্ভ সমূহ |
শনাক্তকারী | |
লাতিন | মানুস |
মে-এসএইচ | D006225 |
টিএ৯৮ | A01.1.00.025 |
টিএ২ | 148 |
এফএমএ | FMA:9712 |
শারীরস্থান পরিভাষা |
কিছু বিবর্তনীয় শারীরস্থানবিদ হাত শব্দটি ব্যবহার করে, অগ্রপদের উপাঙ্গের আঙুলগুলিকে আরও সাধারণভাবে বোঝাতে — উদাহরণ স্বরূপ, পাখির হাতের তিনটি আঙুল, ডাইনোসরের হাতের দুটি লুপ্ত আঙুলের সমজাতীয় হয়ে এসেছে কিনা সে প্রসঙ্গে বলেছেন।[২]
মানুষের হাতে সাধারণত পাঁচটি আঙুল থাকে: চারটি আঙুল এবং একটি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ;[৩][৪] এগুলি সাধারণত সম্মিলিতভাবে পাঁচটি আঙুল হিসাবে উল্লেখ করা হয়, যদিও, এর মাধ্যমে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠকে আঙুলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[৩][৫][৬] এটিতে সিসাময়েড অস্থি বাদ দিয়ে ২৭টি হাড় রয়েছে, এই সংখ্যাটি বিভিন্ন মানুষের মধ্যে আলাদা হয়,[৭] যার মধ্যে ১৪টি হল আঙ্গুল এবং বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের ফ্যালাঞ্জেস (নিকটবর্তী, মধ্যবর্তী এবং দূরবর্তী)। মেটা কারপেল অস্থি আঙ্গুলগুলিকে কব্জির কারপেল অস্থির সাথে সংযুক্ত করে। প্রতিটি মানুষের হাতে পাঁচটি মেটা কারপেল[৮] এবং আটটি কারপেল অস্থি থাকে।
শরীরের কিছু স্নায়ু আঙ্গুলগুলিতে এসে শেষ হয়ে ঘন সন্নিবদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাই আঙুলের অগ্রভাগ বা ডগা হল স্পর্শের প্রতি সবচেয়ে সংবেদনশীল। দেহের অবস্থান নির্ণয় করার সর্বাধিক ক্ষমতাও তাদের রয়েছে; সুতরাং, স্পর্শ অনুভূতি হাতের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত। শরীরের অন্যান্য যুগ্ম অঙ্গগুলির মতো (চোখ, পা, পা) প্রতিটি হাতই বিপরীত মস্তিষ্কের হেমিস্ফিয়ার দ্বারা প্রভাবিত এবং নিয়ন্ত্রিত, যাতে এক হাতের আধিপত্য — একক হাতের কার্য, যেমন লেখা, এর জন্য পছন্দসই হাত কোনটি, স্বতন্ত্র ব্যক্তির মস্তিষ্কের কার্যকারিতা থেকে প্রতিফলিত হয়।
মানুষের মধ্যে, হাতগুলি দেহ ভাষা এবং ইশারা ভাষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করে। তেমনি দুটি হাতে দশটি আঙুল, এবং চারটি আঙুলের বারোটি ফ্যালাঞ্জেস (বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের দ্বারা স্পর্শযোগ্য) থেকে সংখ্যা পদ্ধতি এবং গণনা কৌশল এসেছে।
গঠন
সম্পাদনাঅনেক স্তন্যপায়ী এবং অন্যান্য প্রাণীর হাতের মত আঁকড়ে ধরার উপাঙ্গ রয়েছে, যেমন থাবা, নখর, এবং ট্যালন, তবে এগুলিকে বৈজ্ঞানিকভাবে আঁকড়ে ধরার হাত হিসাবে বিবেচিত হয় না। এই অর্থে হাত শব্দটির বৈজ্ঞানিক ব্যবহার সামনের থাবাকে পেছনের থাবা থেকে আলাদা করতে নৃতত্ত্ববাদের একটি উদাহরণ। প্রাইমেটদের মধ্যে স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্রমে ঠিক আঁকড়ে ধরার হাতটি দেখা যায়। হাতে অবশ্যই বিপরীতমুখী বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ থাকতে হবে।
প্রতিটি বাহুর দূরবর্তী প্রান্তে হাত অবস্থিত। মাঝে মাঝে বলা হয় নরবানর এবং বানরদের চারটি হাত আছে, কারণ এদের পায়ের পাতা দীর্ঘ এবং পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ বিপরীতমুখী এবং হাতের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের মতো দেখায়, এরফলে এরা পাগুলিকে হাত হিসাবে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। "হাত" শব্দটি কখনও কখনও বিবর্তনবাদী অ্যানাটমিস্টদের মতে, সমসংস্থা নিয়ে গবেষণা করার সময়, অগ্রপদের উপাঙ্গকে বোঝায়, যেমন, তিনটি আঙুলের পাখির হাত এবং ডাইনোসরের হাত।[২]
একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মানুষের হাতের ওজন প্রায় এক পাউন্ড।[৯]
টীকা
সম্পাদনা- ↑ Thomas, Dorcas MacClintock; illustrated by J. Sharkey (২০০২)। A natural history of raccoons। Caldwell, N.J.: Blackburn Press। পৃষ্ঠা 15। আইএসবিএন 978-1-930665-67-5।
- ↑ ক খ Xu এবং অন্যান্য 2009
- ↑ ক খ Mark L. Latash (১৮ মার্চ ২০০৮)। Synergy। Oxford University Press, USA। পৃষ্ঠা 137–। আইএসবিএন 978-0-19-533316-9।
- ↑ Tracy L. Kivell; Pierre Lemelin; Brian G. Richmond; Daniel Schmitt (১০ আগস্ট ২০১৬)। The Evolution of the Primate Hand: Anatomical, Developmental, Functional, and Paleontological Evidence। Springer। পৃষ্ঠা 7–। আইএসবিএন 978-1-4939-3646-5।
- ↑ Goldfinger, Eliot (১৯৯১)। Human Anatomy for Artists : The Elements of Form: The Elements of Form। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 177, 295।
- ↑ O'Rahilly, Ronan; Müller, Fabiola (১৯৮৩)। Basic Human Anatomy: A Regional Study of Human Structure। Saunders। পৃষ্ঠা 93।
- ↑ Schmidt ও Lanz 2003, পৃ. 105
- ↑ Marieb 2004, পৃ. 237
- ↑ "ExRx.net : Body Segment Data"। www.exrx.net।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- Almécija, Sergio (২০০৯)। "Evolution of the hand in Miocene apes: implications for the appearance of the human hand (PhD Thesis)" (পিডিএফ)। Universitat Autònoma de Barcelona। ২৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯।
- Austin, Noelle M. (২০০৫)। "Chapter 9: The Wrist and Hand Complex"। Levangie, Pamela K.; Norkin, Cynthia C.। Joint Structure and Function: A Comprehensive Analysis (4th সংস্করণ)। Philadelphia: F. A. Davis Company। আইএসবিএন 978-0-8036-1191-7।
- Flanagan, J Randall; Johansson, Roland S (২০০২)। "Hand Movements" (পিডিএফ)। Encyclopedia of the human brain। Elsevier Science।
- Jones, Lynette A.; Lederman, Susan J. (২০০৬)। "Structure of the Skin"। Human hand function। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-517315-4।
- Kivella, Tracy L.; Schmitt, Daniel (আগস্ট ২৫, ২০০৯)। "Independent evolution of knuckle-walking in African apes shows that humans did not evolve from a knuckle-walking ancestor"। PNAS। 106 (34): 14241–14246। ডিওআই:10.1073/pnas.0901280106। পিএমআইডি 19667206। পিএমসি 2732797 । বিবকোড:2009PNAS..10614241K।
- Knight, Kathryn (২০১২)। "Fighting Shaped Human Hands"। The Journal of Experimental Biology। 216 (2): i.1–i। ডিওআই:10.1242/jeb.083725।
- Lovejoy, C. Owen; Suwa, Gen; Simpson, Scott W.; Matternes, Jay H.; White, Tim D. (অক্টোবর ২০০৯)। "The Great Divides: Ardipithecus ramidus Reveals the Postcrania of Our Last Common Ancestors with African Apes"। Science। 326 (5949): 73, 100–106। ডিওআই:10.1126/science.1175833। পিএমআইডি 19810199। বিবকোড:2009Sci...326..100L।
- Marieb, Elaine N (২০০৪)। Human Anatomy & Physiology (Sixth সংস্করণ)। Pearson PLC। আইএসবিএন 978-0-321-20413-4।
- Marzke, Mary। "Evolution of the hand and bipedality"। Massey University, NZ। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Morgan, Michael H.; Carrier, David R. (জানুয়ারি ২০১৩)। "Protective buttressing of the human fist and the evolution of hominin hands"। J Exp Biol। 216 (2): 236–244। ডিওআই:10.1242/jeb.075713। পিএমআইডি 23255192।
- Putz, RV; Tuppek, A. (নভেম্বর ১৯৯৯)। "Evolution of the hand"। Handchir Mikrochir Plast Chir। 31 (6): 357–61। ডিওআই:10.1055/s-1999-13552। পিএমআইডি 10637723।| accessdate =
- Reardon, Sara (ডিসেম্বর ১৯, ২০১২)। "Human hands evolved so we could punch each other"। New Scientist। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭।
- Ross, Lawrence M.; Lamperti, Edward D., সম্পাদকগণ (২০০৬)। Thieme Atlas of Anatomy: General Anatomy and Musculoskeletal System। Thieme। আইএসবিএন 978-1-58890-419-5।
- Schmidt, Hans-Martin; Lanz, Ulrich (২০০৩)। Surgical Anatomy of the Hand। Thieme। আইএসবিএন 978-1-58890-007-4।
- Tocheri, Matthew W.; Orr, Caley M.; Jacofsky, Marc C.; Marzke, Mary W. (২০০৮)। "The evolutionary history of the hominin hand since the last common ancestor of Pan and Homo"। J. Anat.। 212 (4): 544–562। ডিওআই:10.1111/j.1469-7580.2008.00865.x। পিএমআইডি 18380869। পিএমসি 2409097 । (Abstract, PubMed) (PDF ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে, Smithsonian)
- Tubiana, Raoul; Thomine, Jean-Michel; Mackin, Evelyn (১৯৯৮)। Examination of the Hand and Wrist (2nd সংস্করণ)। Taylor & Francis। আইএসবিএন 978-1-85317-544-2।
- Xu, X; Clark, JM; Mo, J; Choiniere, J; Forster, CA; Erickson, GM; Hone, DWE; Sullivan, C; Eberth, DA; Nesbitt, S; Zhao, Q; Hernandez, R; Jia, CK; Han, FL; Guo, Y (২০০৯)। "A Jurassic ceratosaur from China helps clarify avian digital homologies" (পিডিএফ)। Nature। 459 (7249): 940–944। ডিওআই:10.1038/nature08124। পিএমআইডি 19536256। বিবকোড:2009Natur.459..940X।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Hand anatomy (eMedicine)
- Film Board of Canada documentary Faces of the Hand (Requires Adobe Flash)
- The Common Hand ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ জুলাই ২০১৬ তারিখে article in the May 2012 National Geographic
টেমপ্লেট:Muscles of upper limb