হরকিষেণ সিংহ (২৫শে নভেম্বর ১৯২৮ - ২০শে মার্চ ২০২০)[৩] ছিলেন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের (চণ্ডীগড়, ভারত) অধ্যাপক ইমেরিটাস (সাম্মানিক আজীবন অধ্যাপক)। তিনি একজন স্বীকৃত ঔষধসংক্রান্ত শিক্ষাবিদ, ওষধি রসায়ন গবেষক এবং বিজ্ঞান ইতিহাসবিদ ছিলেন। নিজ ক্ষেত্রে তাঁর অর্ধ শতাব্দীরও বেশি অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি ভারতের কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, সৌগার বিশ্ববিদ্যালয়, এবং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন।

হরকিষেণ সিংহ
জন্ম(১৯২৮-১১-২৫)২৫ নভেম্বর ১৯২৮
লায়লাপুর জেলা, ভারত
মৃত্যু২০ মার্চ ২০২০(2020-03-20) (বয়স ৯১)
জাতীয়তাভারতীয়
শিক্ষাB.Pharm. পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, চণ্ডীগড় (১৯৫০), এম.ফার্ম. কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫২), পিএইচ.ডি. কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৫৬), ডি.এসসি. (সম্মানসূচক ডিগ্রী) বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৪),ডি.এসসি. (সম্মানসূচক ডিগ্রী) পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, চণ্ডীগড় (২০১৬)
পেশাঔষধসংক্রান্ত রসায়নবিদ
উল্লেখযোগ্য কর্ম
স্নায়বিকপেশীজনিত বাধক ক্যান্ডোকুরোনিয়াম (চানডোনিয়াম)
দাম্পত্য সঙ্গীজ্ঞান কাউর
সন্তানতৃপ্ত পি সিং (পুত্র) ডাঃ মনজিৎ কাউর (কন্যা)
পুরস্কারপদ্মশ্রী (২০১৭)[১][২]
ওয়েবসাইটwww.profharkishansingh.com

কর্মজীবন এবং গবেষণা সম্পাদনা

তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয় ছিল জৈব রসায়ন, ওষধি রসায়ন এবং প্রাকৃতিক পণ্য নিয়ে। তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রায় ৫০টি স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরাল গবেষণাপত্র সম্পন্ন হয়েছিল। তাঁর ১২৫টি বৈজ্ঞানিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ১৪টি অধিকারপত্র (পেটেন্ট) পেয়েছিলেন। তাঁর গবেষণা দলটি চিকিৎসাগতভাবে কার্যকরী কাঠামোর পেশী শিথিলকারী ক্যান্ডোকুরোনিয়াম আয়োডাইড (আইএনএন) (চানডোনিয়াম আয়োডাইড, এইচএস-৩১০) উদ্ভাবনে সফল হয়েছিল, যেটি একটি কৃত্রিম অ্যাজাস্টেরয়েড। ডঃ সিংহ ভারত, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সম্মেলনে তাঁর গবেষণার উপর বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি হার্ভার্ড স্কুল অফ মেডিসিনে এবং বেইজিংয়ে আণবিক কাঠামোর আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমন্ত্রিত বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বেইজিংয়ে তাঁর বক্তৃতাটির ব্যয়বহন করেছিল ইন্টারন্যাশানাল ইউনিয়ন অফ ক্রিস্টালোগ্রাফি

বিজ্ঞান ইতিহাসবিদ হিসাবে অধ্যাপক সিংহ উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর ভারতের ঔষধশিল্পে বিকাশের ইতিহাস পরীক্ষা করেছিলেন। তাঁর ইতিহাস গবেষণা নিয়ে পর্যবেক্ষণগুলি ছিল ফার্মাকোপিয়াস এবং তার সূত্রসমূহ, ঔষধসংক্রান্ত শিক্ষা, ঔষধ অনুশীলন, ঔষধ শিল্পক্ষেত্রের যশস্বী ব্যক্তিদের জীবনী এবং ঔষধসংক্রান্ত সাংবাদিকতার উপর। তিনি পঞ্চাশটিরও বেশি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন।

তাঁর বৈজ্ঞানিক ও ইতিহাসভিত্তিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ ছাড়াও, ডঃ সিংহ বেশ কয়েকটি বইয়ের অধ্যায় সহ বারোটি বই এবং প্রায় দুই ডজন পর্যালোচনা নিবন্ধ রচনা এবং / অথবা সহ-লেখন করেছিলেন।[৪] তিনি শিক্ষামূলক, বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক এবং পেশাদার বিষয়গুলি নিয়ে ব্যাপকভাবে লিখেছিলেন। সবকিছু নিয়ে, তাঁর প্রকাশনার সংখ্যা ৩০০ থেকেও বেশি।

অধ্যাপক সিংহ বহু শিক্ষামূলক, বৈজ্ঞানিক, পেশাদার ও সরকারী সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক বিশুদ্ধ ও ফলিত রসায়ন সংস্থার (আইইউপিএসি) ওষধি রসায়ন শিক্ষা পরিষদের সদস্য ছিলেন, যেটি আন্তর্জাতিক ঔষধসংক্রান্ত রসায়নবিদদের আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরি করেছিল (আইইউপিএসি প্রযুক্তিগত প্রতিবেদন সংখ্যা ১৩; ১৯৭৪)।

বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক ও পেশাদার সংস্থার সাথে তাঁর সংযুক্তি ছিল। এগুলি হল আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির ইমেরিটাস সদস্যপদ, ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এবং ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল শিক্ষক সমিতির আজীবন সদস্যপদ এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ হিস্ট্রি অফ ফার্মাসির সদস্যপদ এবং ব্রিটিশ সোসাইটি ফর ফার্মাসির ইতিহাসের সদস্যপদ।

এক নজরে কর্মজীবন সম্পাদনা

  • কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি প্রভাষক ১৯৫৩-৫৬
  • সৌগার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, ১৯৫৬–৬৪
  • ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রিতে ডক্টরাল পরবর্তী গবেষণা ফেলো, ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ড, আমেরিকা, ১৯৫৮–৬১ (সৌগার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে)
  • পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রির রীডার, ১৯৬৪-৭২
  • মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রির পরিদর্শক অধ্যাপক এবং গবেষণা ফেলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৭–৬৮ (পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে)
  • কমনওয়েলথ একাডেমিক স্টাফ ফেলো, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য, ১৯৭১–৭২ (পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে)
  • অধ্যাপক, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস (ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি), পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৭২–৮৮
  • প্রধান, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস বিভাগ, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৭৬–৮১
  • ডিন, প্রাক্তন ছাত্র সম্পর্কীয়, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৭৯–৮৪
  • ডিন, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদ, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়,১৯৮১–৮৫
  • এমেরিটাস ফেলো (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন), পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৯–৯২
  • অধ্যাপক ইমেরিটাস, পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০৩ সাল থেকে

স্নায়বিকপেশীজনিত বাধক ক্যান্ডোকুরোনিয়াম (চানডোনিয়াম) সম্পাদনা

একটি নতুন স্নায়বিকপেশীজনিত বাধক চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হরকিষেণ সিংহের গবেষণা গোষ্ঠী দ্বারা উদ্ভাবিত ও প্রস্তুত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এর নাম ছিল চানডোনিয়াম আয়োডাইড। চিকিৎসাক্ষেত্রে এর প্রয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষা করা হয়েছিল স্ট্র্যাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয়ে। লখনউয়ের কেন্দ্রীয় ঔষধ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ততা জনিত পর্যবেক্ষণে কোনও বিরূপ প্রভাব প্রকাশ পায়নি।[৫] চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষাও সফলভাবে সিডিআরআইয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছিল। চানডোনিয়াম আয়োডাইডের সমস্ত রকম পরীক্ষার সিম্পোজিয়ামের ক্রিয়াকলাপ অ্যানাস্থেসিওলজি এবং ক্লিনিকাল ফার্মাকোলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল, ১০, ১০৯-১৫১ (১৯৯৪)। ভারত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রক ওষুধটির উৎপাদন ও চিকিৎসাগত ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওষুধটির আইএনএন নাম দিয়েছিল ক্যান্ডোকুরোনিয়াম আয়োডাইড। ওষুধটি শক্তিশালী অ-বিমেরুকরণ স্নায়বিকপেশীজনিত বাধক, যেটি খুব অল্প সময়ের জন্য কাজ করে। ইঞ্জেকশনগুলি অটোক্লেভ পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত করা যেতে পারে। ওষুধটি ঘরের তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে, তাতে এটির ক্ষমতা হ্রাস পায়না।[৪]

সম্মাননা এবং পুরস্কার সম্পাদনা

হরকিষেণ সিংহ বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক ও পেশাদার পুরস্কার এবং স্বীকৃতি অর্জন করে ছিলেন। তিনি নতুন দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান কমিশনের জাতীয় ফেলো ছিলেন। তিনি ভারতীয় ফার্মাসিউটিকাল কংগ্রেসের সাধারণ সভাপতিও ছিলেন। তিনি ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিকাল অ্যাসোসিয়েশনের বিখ্যাত ফার্মাসিস্ট পুরস্কার পেয়েছিলেন। ফিলাডেলফিয়ার বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হরকিষেণ সিংহকে তাঁর বিশিষ্ট শিক্ষাজীবন এবং জৈব ও ওষধি রসায়নের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে ডক্টর অব সাইয়েন্স (সম্মানসূচক ডিগ্রী) ডিগ্রি প্রদান করেছিল।[৬]

এক নজরে সম্মাননা এবং পুরস্কার সম্পাদনা

  • ১৯৭৫ সালে শ্রী অমৃত মোদী রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বার্ষিক পুরস্কার
  • সভাপতি, ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল কংগ্রেস, তেত্রিশতম অধিবেশন (১৯৮১), জয়পুর
  • ১৯৮৩ জি. পি. শ্রীবাস্তব স্মৃতি পুরস্কার, অ্যাসোসিয়েশন অফ ফার্মাসিউটিকাল টিচার্স অফ ইন্ডিয়া, নাগপুর
  • ১৯৮৪ অধ্যাপক এম. এল. খুরানা বক্তৃতা, ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, বোম্বাই
  • জাতীয় ফেলো, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ১৯৮৫-৮৭; এই সম্মান প্রাপ্ত একমাত্র ফার্মাসিউটিক্যাল শিক্ষাবিদ
  • ১৯৮৭ ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেসের র‍্যানব্যাক্সি রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড, র‍্যানব্যাক্সি রিসার্চ ফাউন্ডেশন, নয়াদিল্লি
  • নির্বাচিত সদস্য, একাডেমি ইন্টার্নেশনাল ডি'হিস্টোরি ডি লা ফার্মাসি, ১৯৯৫
  • ১৯৯৮ শ্রফ স্মৃতি জাতীয় পুরস্কার, ইন্ডিয়ান হসপিটাল ফার্মাসিস্টস অ্যাসোসিয়েশন, নয়াদিল্লি
  • ১৯৯৯ বিখ্যাত ফার্মাসিস্ট পুরস্কার, ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, বোম্বাই
  • আজীবন কৃতিত্ব পুরস্কার, পাঞ্জাবের একাডেমি অফ সায়েন্সেস, পতিয়ালা, ২০১৫
  • ডক্টর অব সাইয়েন্স (সম্মানসূচক ডিগ্রী) ভারতের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, চন্ডীগড়, দ্বারা সম্মানিত ২০১৬
  • পদ্মশ্রী সম্মান, ভারত সরকার কর্তৃক ২০১৭ সালের জানুয়ারী, ঔষধ বিষয়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য।[৭]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "http://www.profharkishansingh.com/"। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০২০  |title= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  2. "A Man with Missionary Passion and Visionary Execution: Professor Harkishan Singh Sir, We will Miss You for Ever…" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০২০ 
  3. "Padma Shri awardee Prof Harkishan passes away"Tribuneindia News Service (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৩-২৩। ২০২০-০৩-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-২৮ 
  4. "Professor Harkishan Singh, Padma Shri Awardee"। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০২০ 
  5. "APTI BULLETIN PROF. HARKISHAN SINGH TRIBUTE" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ অক্টোবর ২০২০  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  6. http://www.usciences.edu/newsevents/newsdetails.aspx?Channel=/Channels/Admissions/Admissions+Content&WorkflowItemID=0d6a1864-3bbc-4b52-94e4-bd449a05a7fa
  7. "In 2017, Padma Awards to honour unsung heroes of healthcare"। Medical Dialogues। ২৭ জানুয়ারি ২০১৭।