হয়ল্যাণ্ড ইয়ং

মার্কিন রসায়নবিদ

হয়ল্যান্ড ডেনিউন ইয়ং ফেইলি (২৬ জুন ১৯০৩ – ১২ জানুয়ারি ১৯৮৬) ছিলেন একজন আমেরিকান রসায়নবিদদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ম্যানহাটন প্রকল্পের ‘মেটালার্জিক্যাল ল্যাবরেটরি’তে কাজ করতেন। যুদ্ধের পর তিনি আর্গোন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরীরির প্রথম নারী বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান। এছাড়াও আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির শিকাগো শাখার প্রথম মহিলা সভাপতিও তিনি।

হয়ল্যাণ্ড ইয়ং
ড. হয়ল্যান্ড ইয়ং, আরগন্নে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির টেকনিক্যাল ইনফরমেশন বিভাগের পরিচালক. তার অফিসের ক্ষেত্রফল ছিলো ৯ x ৬ ফুট.
জন্ম
হয়ল্যান্ড ডেনিউন ইয়ং

(১৯০৩-০৬-২৬)২৬ জুন ১৯০৩
মৃত্যু১২ জানুয়ারি ১৯৮৬(1986-01-12) (বয়স ৮২)
নাগরিকত্বআমেরিকান
মাতৃশিক্ষায়তনওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি
ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্ররসায়ন
প্রতিষ্ঠানসমূহ
অভিসন্দর্ভের শিরোনামআলোক সমানু ব্রোমোইমিনো কিটোন (১৯২৬)
ডক্টরাল উপদেষ্টাজুলিয়াস স্টিগলিটজ

জীবনী সম্পাদনা

হয়ল্যান্ড ডেনিউন ইয়ং এর জন্ম ১৯০৩ সালের ২৬ জুন ওহাইও’র কলম্বাসে[১] তার একজন বোন ছিলো, নাম হিলডা। হাই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই উনি রসায়নের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ওনাদের স্কুলে ছেলে আর মেয়েদের আলাদা আলাদা রসায়ন ক্লাস হতো। কিন্তু স্কুলের সময় মিলাতে না পারায় তিনি ছেলেদের সাথে ক্লাস করতে বাধ্য হন।[২] মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের ক্লাস ছিলো অনেক কঠিন কিন্তু ক্লাসের একমাত্র হওয়ায় তাকে ক্লাসের শেষে দিকেই বসে থাকতে হতো। ১৯২৪ সালে তিনি ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে রসায়নে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর তিনি পিএইচডি করার উদ্দেশ্যে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান দেন। সেখানে জুলিয়াস স্টিগলিটজ এর তত্ত্বাবধানে ‘আলোক সমানু ব্রোমোইমিনো কিটোন’ এর উপর থিসিস জমা দেন এবং ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন।

গ্রাজুয়েশন শেষ করে ইয়ং শিকাগোর ‘ভ্যান শ্যাক ব্রাদার্স কেমিক্যাল ওয়ার্কস’ নামক এক বার্নিশ তৈরির কারখানায় গবেষক রসায়নবিদ হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৩০ সালে তিনি টেক্সাস স্টেট কলেজ ফর উইমেন এর সহযোগী অধ্যপক হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে তিনি ‘পুষ্টিপ্রাণরসায়ন’ পড়াতেন। ১৯৩৪ সালে তিনি শিকাগোর মাইকেল রীস হাসপাতালে যোগদানের উদ্দেশ্যে এই চাকরিটা ছেড়ে দেন।[১] কিন্তু তিনি যখন হাসপাতালে পৌছান তখন হাসপাতালের পরিচালক দেখলেন যে তিন একজন মহিলা এবং তাকে হাসপাতালে নিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন চরম অর্থনৈতিক মন্দা চলছিলো, ফলে চাকরি পাওয়া ছিলো খুবই কঠিন। ১৯৩৮ এর আগে তাই তিনি আর কোনো স্থায়ী কর্মসংস্থান জোটাতে সক্ষম হননি। এরপর ‘পিউর অয়েল কোম্পানী’তে তার চাকরি হয়।[৩][১] সেখানে তিনি ক্যারি আর. ওয়াগনার জুনিয়রের সাথে মিলে পেট্রোলিয়াম বিশোধনের উপর একটা বই সম্পাদনার করতে থাকেন। [১][৪] প্রায় ছয় বছর ধরে তারা গবেষণা চালিয়ে যান, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বইটা আর আলোর মুখ দেখেনি।[৩]

আমেরিকা জুড়ে তখন ভীষণ যুদ্ধ। এর মধ্যেই ১৯৪২ সালে ইয়ং ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোর বিষক্রিয়া গবেষণাগারের অফিস অফ সায়েণ্টিফিক রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (OSRD) এর সায়েন্টিফিক লাইব্রেরিয়ান হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে তার কাজ ছিলো আমেরিকান, ব্রিটিশ আর কানাডিয়ান রাসায়নিক অস্ত্রের মধ্যে তুলনা ও সমস্ত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের একটা তালিকা প্রনয়ন করা। ১৯৪৫ সালে তাকে ম্যানহাটন প্রজেক্টের ‘মেটালার্জিক্যাল ল্যাবরেটরি’তে একজন রসায়নবিদ হিসেবে বদলি করা হয়। সেখানে তিনি অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন কর্তৃক ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার এনার্জি সিরিজে প্রকাশিতব্য বিভিন্ন গবেষণাপত্র সম্পাদনা করতেন। পরবর্তীতে তিনি ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার এনার্জি সিরিজের সম্পাদনা পর্ষদে আরগন্নে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন।[৫]

১৯৪৬ সালে ইয়ং সদ্য প্রতিষ্ঠিত আরগন্নে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির টেকনিক্যাল ইনফরমেশন বিভাগের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। তিনিই প্রথম নারী যনি এই পদ লাভ করেন।[১] ১৯৬৪ সালে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এখানেই কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির শিকাগো শাখার প্রথম মহিলা সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। তার তত্তাবধানেই এটি বিশেষ অবদানের জন্য পুরস্কার লাভ করে। তিনি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে ১৯৭৫ সালে একই পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ কেমিস্টস, আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স এবং অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস অফ শিকাগো’র ফেলো ছিলেন।[১] তিনি আমেরিকান নিউক্লীয়ার সোসাইটির একজন বেতনভুক্ত সদস্য ছিলেন এবং মহিলা রসায়নবিদদের নিয়ে গঠিত বিশেষ সম্মাননা সংগঠন ‘লোটা সিগমা পাই’ এরও সভানেত্রীর দায়িত্বও পালন করেন।[২][৬] ১৯৫৯ সালে শিকাগো ট্রিবিউন পত্রিকা তাকে ব্যবসায়িক বা পেশাগত দিক দিয়ে শহরের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী হিসেবে আখ্যা দেয়।[২] ১৯৬৩ সালে আরগন্নে ন্যাশনাল লাইব্রেরি তার সম্মানে হয়ল্যান্ড ডি. ইয়ং লেকচার সিরিজ চালু করে।[১]

ক্রফোর্ড ফেইলির সাথে ইয়ং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[১] বিষক্রিয়া গবেষণাগারে কাজ করার সময় তাদের পরিচয়। ১৯৮৬ সালের ১২ জানুয়ারি শিকাগোর হাইড পার্কের নিজস্ব বাসভবনে তিনি পরলোক গমন করেন।[২] ওহাইওর কলম্বাসের রিভারসাইড কবরস্থানে তাকে সমাহিত কয়া হয়।[৭] তার বোন হিলডা ইয়ং তখনও বেচে ছিলেন।[২]

টীকা সম্পাদনা

  1. "Dr. Hoylande Denune Young"। Chicago Section, American Chemical Society। জুন ১, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৯, ২০১৪ 
  2. "Hoylande Failey, 82, Former Argonne Chemist"Chicago Tribune। জানুয়ারি ১৬, ১৯৮৬। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৯, ২০১৪ 
  3. Howes ও Herzenberg 1999, পৃ. 75–76।
  4. "Memorial: Cary Richard Wagner, Jr. (1917–1962)"American Association of Petroleum Geologists। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৯, ২০১৪ 
  5. "The National Nuclear Energy Series: An Abridged Compilation" (পিডিএফ)। National Nuclear Security Administration। মার্চ ৪, ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ৯, ২০১৪ 
  6. "Who we are"। Iota Stigma Pi Members-at-large। ডিসেম্বর ৪, ২০১৪। ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২৬, ২০১৪ 
  7. "Hoylande Denune Young Failey" (ইংরেজি ভাষায়)। ফাইন্ড এ গ্রেইভ। নভেম্বর ১৫, ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪  (ইংরেজি)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা