হযরত শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদ্রাসা
হযরত শাহজালাল দারুসসুন্নাহ ইয়াকুবিয়া কামিল মাদ্রাসা বাংলাদেশের সিলেট জেলার একটি আলিয়া মাদ্রাসা।[১] এটি সিলেট মহানগরীর সোবহানীঘাট বিশ্বরোডের পাশে শাহজালাল লতিফিয়া আবাসিক অবস্থিত একটি কামিল মাদ্রাসা। সিলেটের ইসলাম প্রচারক আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী এই মাদ্রাসাটি নির্মাণ করেছে। মাদ্রাসাটি বর্তমানে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে। মাদ্রাসায় বর্তমানে ১৫৪৬ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের নাম মোঃ কমরুদ্দীন চৌধুরী, তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে এই দায়িত্ব পালন করছেন।[২]
ধরন | এমপিও ভুক্ত |
---|---|
স্থাপিত | ১ জানুয়ারি ১৯৮৯ |
প্রতিষ্ঠাতা | আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী |
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি |
|
অধ্যক্ষ | মোঃ কমরুদ্দীন চৌধুরী |
মাধ্যমিক অন্তর্ভুক্তি | বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড |
শিক্ষায়তনিক ব্যক্তিবর্গ | আনু. ৪৫ জন |
শিক্ষার্থী | আনু. ১৫০০ জন |
ঠিকানা | শাহজালাল লতিফিয়া আবাসিক এলাকা, সোবহানীঘাট বিশ্বরোড , , , |
শিক্ষাঙ্গন | শহুরে |
ক্রীড়া | ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন |
ওয়েবসাইট | http://www.hsdykm.edu.bd/ |
ইতিহাস
সম্পাদনাআব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী সিলেট অঞ্চলে ইসলামি শিক্ষার প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ২০ অগাস্টে রমিজ উদ্দিন সিদ্দীকীর দরবার শরীফে একটি মিটিং এর আয়োজন করেন। উক্ত মিটিং সিলেট শহরে অনেক ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষাবিদ অংশগ্রহণ করেন। এই মিটিং জের ধরে ১৯৮৩ সালে আব্দুল লতিফ ফুলতলী মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। মাদ্রাসাটির নামকরণ করা হয় সিলেটের বিখ্যাত ধর্ম প্রচারক শাহজালালের নামে।
মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সোবহানীঘাটের অধিবাসী হাজী আব্দুস সোবহান তাপাদার ০.৭৫ শতক ভূমি দান করেন।[৩] এই মাদ্রাসা ও মাদ্রাসা সংলগ্ন মসজিদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য সোসাইটি এক্টের বিধি মোতাবেক একটি ট্রাস্ট বোর্ড গঠন করা হয়। আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী এই বোর্ডের আজীবন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন, এবং তার অবর্তমানে তার জ্যৈষ্ঠ পুত্র বা বংশধরগন দায়িত্ব পালন করবেন। এই ট্রাস্ট বোর্ডের অধীনে ১৯৮৩ সালে শাহজালাল দারুচ্ছুন্নাহ ইয়াকুবিয়া মাদ্রাসা ও হাজী নওয়াব আলী জামে মসজিদ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।
মাদ্রাসার এই ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন:
ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য | সদস্যের পদবি |
---|---|
আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী | সভাপতি |
মাওলানা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী | সদস্য, অধ্যক্ষ |
মাওলানা গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী | সদস্য, শিক্ষক |
আলহাজ্ব আব্দুস সোবহান তাপাদার | সদস্য, জমিদাতা |
মোঃ হবিবুর রহমান | সদস্য |
মাওলানা ইছহাক আহমদ | সদস্য |
ডাক্তার হোসেন রাজা চৌধুরী ফারুকী | সদস্য |
মুফতি আবু মুজাফফার মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন | সদস্য |
আলহাজ্ব আব্দুল খালিক | সদস্য |
পরবর্তীতে বরাদ্দকৃত জমি ভরাট করে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য ৬ জুন ১৯৮২ সালে একটি কাচা ঘর নির্মাণ করা হয়। আব্দুল লতিফ ফুলতলী এই মাদ্রাসার ভিক্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২১ জানুয়ারি ১৯৮৩ সালে মাদ্রাসার প্রাতিষ্ঠানিক কার্ক্রম শুরু হয়।[৪]
শিক্ষা কার্যক্রম
সম্পাদনাবিভাগ অনুমতি কার্যক্রম
সম্পাদনা১৯৮৩ সালে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম একটি ইবতেদায়ী শাখা দিয়ে শুরু হলেও মাত্র দুই বছর পরেই ১৯৮৫ সালে মাদ্রাসাটি সরকারি অনুমতি লাভ করে। মাদ্রাসার শিক্ষার গতি দেখে পরের বছর দাখিল সেকশনের অনুমতি লাভ করে। এরপরে ১ জুলাই ১৯৯২ সালে মাদ্রাসাটি আলিম শ্রেণীর অনুমতি লাভ করে। এরপরে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে, অবশেষে ১৯৯৮ সালে ফাজিল ও ২০০৩ সালে কামিল শ্রেণীতে পাঠদানের অনুমতি লাভ করে।
এই মাদ্রাসায় ফাজিল ও কামিল শ্রেণীতে আল কুরআন, আল হাদিস ও আল ফিকহ বিভাগে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। ২০০৪ সালে মাদ্রাসায় ফাজিল শ্রেণীতে এবং ২০০৬ সালে কামিল শ্রেণীতে আল ফিকহ বিভাগের ডিগ্রি দেওয়ার অনুমোদন লাভ করে। মাদ্রাসার দাখিল ও আলিম শ্রেণীতে মানবিক ও বিজ্ঞান উভয় শাখা চালু রয়েছে। মাদ্রাসায় ২০০৫ সালে দাখিল শ্রেণীতে এবং ২০০৭ সালে আলিম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হয়।
অতিরিক্ত-শিক্ষা কার্যক্রম
সম্পাদনাএই মাদ্রাসায় আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে আরো কিছু প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান
- হেফজ মাদ্রাসা: ১৯৯৯ সালে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসেই লতিফিয়া হিফজুল কুরআন সেন্টার নামে একটি হেফজ প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা কুরআন তিলাওয়াত শুদ্ধভাবে শিখতে পারে।
- কিন্ডারগার্টেন: মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ থেকে শিশুশিক্ষার জন্য লতিফিয়া ইসলামিক কিন্ডারগার্টেন নামে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
- ভোকেশনাল বিভাগ: ১ জানুয়ারি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক এই মাদ্রাসার অভ্যন্তরে কম্পিউটার ও বিল্ডিং মেনটেইন্যান্স দুটি ট্রেডে দাখিল ভোকেশনাল বিভাগ এফিলিয়েশন লাভ করে।
বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তি
সম্পাদনা২০০৬ সালের পূর্বে বাংলাদেশের আলিয়া মাদ্রাসার পরীক্ষা মূলত বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড নিয়ন্ত্রণ করত। এরপরে ২০০৬ সালের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী আইন, ২০০৬ মোতাবেক আলিয়া মাদ্রাসার ফাযিল (স্নাতক ডিগ্রি) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রিকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।[৫] তখন এই মাদ্রাসাটিও ইবি অধিভুক্তি লাভ করে। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ সালে কামিলে হাদিস বিভাগ এবং ফাজিল বিএ অনার্স আল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অনুমতি লাভ করে। এরপর ২০১৬ সালে মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও আধুনিকরন করার জন্য ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলে, এটি সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়।[৬]
সুযোগ-সুবিধা
সম্পাদনালতিফিয়া ছাত্রাবাস
সম্পাদনামাদ্রাসার দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা প্রদান করার জন্য প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই লতিফিয়া ছাত্রাবাস নামে একটি আবাসন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এই ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়েছে আব্দুল লতিফ ফুলতলীর নামের প্রথমাংশ থেকে। এই ছাত্রাবাসে ২৫ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করতে পারে। এই ছাত্রাবাস দেখাশোনার জন্য একটি শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছে।
মসজিদ
সম্পাদনামাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নামাজের সুবিধার জন্য মাদ্রাসা নির্মাণ প্রজেক্টের সাথেই হাজী নওয়াব আলী জামে মসজিদ নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। মাদ্রাসা হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থী এবং মাদ্রাসা চলাকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নামাজের সুবিধা নিশ্চিত করতে এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
অধ্যক্ষের তালিকা
সম্পাদনা১৯৮৩ সাল থেকে অনেকেই এই মাদ্রাসার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছে।
নং | নাম | দায়িত্ব গ্রহণ | দায়িত্ব শেষ |
---|---|---|---|
০১ | মাওলানা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী | ২৩ ডিসেম্বর ১৯৮২ | ১৯ মার্চ ১৯৮৩ |
- | মাওলানা আব্দুল মুছাব্বির (ভারপ্রাপ্ত) | ২০ মার্চ ১৯৮৩ | ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫ |
০২ | মাওলানা গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী | ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৮৫ | ২১ ডিসেম্বর ১৯৮৯ |
০৩ | মোঃ কমরুদ্দীন চৌধুরী | ২২ ডিসেম্বর ১৯৮৯ | বর্তমান |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "সিলেট বিভাগে যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলো"। www.janomot.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৮।
- ↑ Ltd, IT Lab Solutions। "Principals - Hazrat Shahjalal Darussunna Yakubia Kamil (M.A) Madrasah"। www.hsdykm.edu.bd। ২০২২-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৮।
- ↑ "আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর ছিলেন শাহ সূফী মাও: আব্দুর রহিম তফাদার (রহ:)"। deshdiganto.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০২-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৮।
- ↑ Ltd, IT Lab Solutions। "History - Hazrat Shahjalal Darussunna Yakubia Kamil (M.A) Madrasah"। www.hsdykm.edu.bd। ২০২২-১০-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৮।
- ↑ "আলিয়া মাদরাসার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ"। lekhapora24.net। ২০২১-০৮-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-১৭।
- ↑ "মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রত্যাশা"। SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৬-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-১০।