স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস

বাংলাদেশের প্রতিরোধক দিবস (১৯৮২-১৯৮৩)

স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস বাংলাদেশে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে পালিত হওয়া একটি দিবস।[১][২][৩][৪] ১৯৮২ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকার একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি তারিখে উক্ত শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ ও বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বারকলিপি প্রদান করার কর্মসূচী গ্রহণ করে। প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশ গুলি চালায় এবং বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে। তখন থেকে দিনটিকে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।[৫][৬]

স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস
স্বৈরাচার প্রতিরোধের পোস্টার
পালনকারীবাংলাদেশ
তারিখ১৪ ফেব্রুয়ারি
সংঘটনবার্ষিক

পটভূমি সম্পাদনা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে এবং বাংলাদেশের সংবিধান রহিত করে সাত্তারের জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বাতিল ঘোষণা করেন।[৭] একইসাথে তিনি নিজেকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করে সামরিক আইনে জারিকৃত সব বিধিবিধান ও আদেশকে দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে ঘোষণা করেন।[৮]

একই বছর এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী ড.মজিদ খান একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। সেখানে প্রথম শ্রেণী থেকেই আরবি ও দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য মাপকাঠি করা হয় মেধা অথবা পঞ্চাশ শতাংশ ব্যয়ভার বহনের ক্ষমতা।[৯] এটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারা ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও আন্দোলন শুরু করেন।[১০] শিক্ষার্থীদের তিনটি দাবি ছিল,

  1. মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল,
  2. সব ছাত্র ও রাজবন্দির নিঃশর্ত মুক্তিদান,
  3. সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মিলিত হন এবং বাংলাদেশ সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। মিছিলে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান ও গুলি বর্ষণ করে। যার ফলে জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী নিহত হন[১১] এবং অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত ও গ্রেফতারের শিকার হন। আন্দোলনের মুখে পরবর্তীতে শিক্ষানীতিটি স্থগিত করা হয়।[১২]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস পালিত"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  2. "স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের শপথ হোক পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা"। চ্যানেল আই। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  3. "স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস কি বিস্মৃত?"। এনটিভি। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  4. "১৪ ফেব্রুয়ারি, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস"। অর্থসূচক। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  5. "'স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস': কি ঘটেছিল সেদিন"। বিবিসি বাংলা। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  6. "ঐতিহাসিক 'স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস' আজ"। সময় নিউজ টিভি। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  7. "ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস"। বাংলা ট্রিবিউন। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  8. "স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস"। আরটিভি। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  9. 'স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস': সেদিন যা ঘটেছিল, বিবিসি ডটকম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
  10. "ভালোবাসা দিবসে চাপা পড়ল ছাত্র আন্দোলনে হত্যার সেই ঘটনা"। ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  11. স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসে ভালোবাসা, চ্যানেল আই অনলাইন, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০
  12. "স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস যেভাবে ভালোবাসা দিবস হলো"। ঢাকা ট্রিবিউন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। ৯ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯