স্বাধীনতা-শ্রেণীর কর্ভেট
স্বাধীনতা-শ্রেণী হলো গণচীনে নির্মিত টাইপ ০৫৬ আলফা স্টেলথ গাইডেড মিসাইল কর্ভেট জাহাজের শ্রেণী যা বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত হয়। এই জাহাজগুলো চায়না শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন এর প্রযুক্তিগত সহায়তায় উচ্যাং শিপইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়। টাইপ ০৫৬ কর্ভেট সিরিজের উপর ভিত্তি করে নির্মিত প্রতিটি জাহাজ সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় অঞ্চলে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান রোধ, জলদস্যুতা দমন, সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান, সুনীল অর্থনীতির বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনাসহ মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এছাড়াও জাহাজগুলি দুর্যোগ কালীন সময়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও দুর্যোগ পরবর্তী ত্রাণ তৎপরতা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে।[১][২][৩][৪][৫][৬][৭][৮][৯][১০][১১]
শ্রেণি'র সারাংশ | |
---|---|
নাম: | টাইপ ০৫৬ আলফা (সি১৩বি) |
নির্মাতা: | উচ্যাং শিপইয়ার্ড |
ব্যবহারকারী: | বাংলাদেশ নৌবাহিনী |
নির্মিত: | ২০১২-২০১৮ |
পরিষেবাতে: | ২০১৬-বর্তমান |
অনুমোদন লাভ: | ২০১৬-বর্তমান |
পরিকল্পিত: | ৮টি |
সম্পন্ন: | ৪টি |
সাধারণ বৈশিষ্ট্য | |
প্রকার: | স্টেলথ গাইডেড মিসাইল কর্ভেট |
ওজন: | ১,৪০০ টন |
দৈর্ঘ্য: | ৯০.২ মিটার (২৯৬ ফু) |
প্রস্থ: | ১১.১৪ মিটার (৩৬.৫ ফু) |
ড্রাফট: | ৩.৩৭ মিটার (১১.১ ফু) |
গভীরতা: | ৪.৪ মিটার (১৪ ফু) |
প্রচালনশক্তি: |
|
গতিবেগ: | ২৫ নট (৪৬ কিমি/ঘ; ২৯ মা/ঘ) |
সীমা: | ৩,৫০০ নটিক্যাল মাইল (৪,০০০ মা; ৬,৫০০ কিমি) |
সহনশীলতা: | ১৫ দিন |
নৌকা ও অবতরণ নৈপুণ্য বহন করে: | ১টি |
লোকবল: | ৭৮ জন |
সেন্সর এবং কার্যপদ্ধতি: |
|
রণসজ্জা: |
|
বিমান বহন: | ১টি |
বিমানচালানর সুবিধাসমূহ: | হেলিকপ্টার ডেক |
টীকা: | ১ × ২.৫ টন ডেক ক্রেন (ইতালি) |
ইতিহাস
সম্পাদনাসশস্ত্র বাহিনীর জন্য গৃহীত দীর্ঘমেয়াদী আধুনিকায়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার দেশীয় ও বৈদেশিক উৎস থেকে সমরাস্ত্র সংগ্রহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এছাড়াও যুদ্ধকালীন সময়ে সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, যুদ্ধকালীন অপারেশন পরিচালনা করা, শান্তিকালীন সময়ে সার্বক্ষণিক উপস্থিতির মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে সতর্ক করা, বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা এবং পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ, সমুদ্রে টহল প্রদান, মৎস্য সম্পদ রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, জলদস্যুতা প্রতিরোধ / দমন এবং তেল ও গ্যাস সম্পদের নিরাপত্তা প্রদান, আইন শৃংখলা রক্ষা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সমুদ্রে উদ্ধার অভিযান ইত্যাদি পরিচালনা করতে এসব যুদ্ধজাহাজের প্রয়োজন ছিলো। এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে অপারেশন পরিচালনা, বহুজাতিক প্রশিক্ষণ, মহড়া ও ওয়ারগেম ইত্যাদি পরিচালনার কাজেও এসব জাহাজের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ০৮ জানুয়ারী, ২০১৩ সালে উচ্যাং শিপইয়ার্ডে বানৌজা স্বাধীনতা ও বানৌজা প্রত্যয় জাহাজ দুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালে জাহাজ দুটিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা হয়। অবশেষে ১৯ মার্চ, ২০১৬ সালে বানৌজা স্বাধীনতা ও বানৌজা প্রত্যয় জাহাজ দুটি নৌবাহিনীতে কমিশন লাভ করে।
পরবর্তী ধাপে ২১ জুলাই, ২০১৫ সালে বানৌজা সংগ্রাম ও বানৌজা প্রত্যাশা জাহাজ দুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২৮ মার্চ, ২০১৯ সালে জাহাজ দুটিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা হয়। ১৮ জুন, ২০২০ সালে বানৌজা সংগ্রাম এবং ৫ নভেম্বর, ২০২০ সালে বানৌজা প্রত্যাশা নৌবাহিনীতে কমিশন লাভ করে।
বৈশিষ্ট্য ও যান্ত্রিক কাঠামো
সম্পাদনাজাহাজটির দৈর্ঘ্য ৯০ মিটার (৩০০ ফু), প্রস্থ ১১.১৪ মিটার (৩৬.৫ ফু) এবং ওজন ১,৪০০ টন। জাহাজটিতে দুইটি জার্মানির তৈরি এসইএমটি পিয়েলসটিক ১২পিএ৬ ডিজেল ইঞ্জিন রয়েছে যার সাহায্যে সে সর্ব্বোচ্চ ২৫ নট (৪৬ কিমি/ঘ; ২৯ মা/ঘ) গতিবেগে চলতে সক্ষম। জাহাজটিতে সামনে ও পিছনে দুইটি আলাদা শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে এবং একটি অকার্যকর হয়ে পড়লেও অন্যটির সাহায্যে জাহাজটি কার্যক্রম চালাতে সক্ষম। চিরাচরিত গোলাকার সম্মুখভাগের পরিবর্তে জাহাজটিকে ভি-আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে যাতে উত্তাল সমূদ্রেও দ্রুতগতিতে চলতে পারে। কিন্তু জাহাজটিতে কোন সোনার না থাকায় এটি খুব সীমিত মাত্রায় ডুবোজাহাজ-বিধ্বংসী কার্যক্রম চালাতে সক্ষম। বানৌজা সংগ্রামে একটি হেলিকপ্টার ডেক রয়েছে যেখানে একটি মধ্যম আকৃতির হেলিকপ্টার ওঠানামা করতে পারে তবে এতে কোনো হ্যাঙ্গার নেই।
ইলেক্ট্রনিক্স
সম্পাদনাজাহাজটি সমুদ্রপৃষ্ঠ ও আকাশে অনুসন্ধানের জন্য চীনের তৈরি এসআর২৪১০সি এস-ব্যান্ড ৩ডি এইএসএ র্যাডার ব্যবহার করে। পাশাপাশি হেলিকপ্টার উড্ডয়ন ও অবতরন নিয়ন্ত্রণ এবং গোলাবর্ষণ নিয়ন্ত্রণের জন্যও এই র্যাডার ব্যবহার করা যায়। এই রাডারটি ২৫০ কিলোমিটার (১৬০ মা) দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত করতে পারে এবং একসঙ্গে ১৫০টি লক্ষ্যবস্তুকে অনুসরণ করতে পারে।
অস্ত্রসজ্জা
সম্পাদনাজাহাজটিতে একটি এইচ/পিজে-২৬ ৭৬ মিমি কামান রয়েছে যা জাহাজের সম্মুখভাগে বসানো হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠে থাকা হুমকি মোকাবেলা করার জন্য রয়েছে চারটিসি-৮০২এ জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। জাহাজটির নিজস্ব প্রতিরক্ষার জন্য রয়েছে দুইটি এইচ/পিজে-১৭ ৩০ মিমি দূর-নিয়ন্ত্রিত কামান। আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য রয়েছে ৮টি এফএল-৩০০০এন বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। জাহাজটিতে দুইটি ৬-টিউব বিশিষ্ট টাইপ ৮৭ ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী রকেট লঞ্চারও রয়েছে।
রণসজ্জা
সম্পাদনাস্বাধীনতা-শ্রেণীর প্রতিটি জাহাজ আধুনিক বিশ্বে ব্যবহৃত সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ। শত্রু জাহাজ মোকাবেলা, চোরাচালান রোধ, জলদস্যূতা দমনে জাহাজটিতে রয়েছে:
- ১টি এইচ/পিজে-২৬ ৭৬ মিমি কামান;
- ২টি এইচ/পিজে-১৭ ৩০ মিমি কামান;
- ৪টি সি-৮০২এ জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র;
- ১টি ৮ সেল বিশিষ্ট এফএল-৩০০০এন আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র;
- ১টি ৬-টিউব টাইপ ৮৭ ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী রকেট লঞ্চার;
- ৪টি এসটিকে-৫০এমজি ১২.৭ মিমি বিমান-বিধ্বংসী মেশিনগান;
- ৬টি কিউডব্লিউ-২ বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র।
জাহাজসমূহ
সম্পাদনাপরিচিতি সংখ্যা | নাম | নির্মাতা | নির্মাণ শুরু | হস্তান্তর | কমিশন | অবস্থা |
এফ১১১ | বানৌজা স্বাধীনতা | উচ্যাং শিপইয়ার্ড | ০৮ জানুয়ারী, ২০১৩ | ১১ ডিসেম্বর, ২০১৫ | ১৯ মার্চ, ২০১৬ | সক্রিয় |
এফ১১২ | বানৌজা প্রত্যয় | |||||
এফ১১৩ | বানৌজা সংগ্রাম | ৯ অগাস্ট, ২০১৬ | ২৮ মার্চ, ২০১৯ | ১৮ জুন, ২০২০ | ||
এফ১১৪ | বানৌজা প্রত্যাশা | ৫ নভেম্বর, ২০২০ |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ০৭ (সাত) বছরের অগ্রগতির তথ্য প্রচারের ব্যবস্থাকরণ সম্পর্কিত" (পিডিএফ)। ২০১৬-০৪-০৭। ২০২২-১০-১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১২-০৭।
- ↑ "বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন নিয়ে ইত্যাদির তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন"। ৩০ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ "বানৌজা স্বাধীনতা, সমুদ্র অভিযান এবং বানৌজা প্রত্যয় এর কমিশনিং অনুষ্ঠান" (পিডিএফ)। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২০২২-০৮-১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১২।
- ↑ "IMDEX Asia 2019 Day 3 – RSN Unmanned Systems, HTMS Bhumibol Adulyadej, BNS Shadhinota, Kyansitthar"। ২৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ "আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল নৌবাহিনী- Bangladesh Navy"। ২৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ "সমুদ্র রক্ষায় বানৌজা প্রত্যয়-এর অপারেশনাল কর্মকাণ্ড | BNS Prottoy | Bijoyturjo | Bangladesh Navy"। ২২ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০২২।
- ↑ "গণচীন হতে দেশে পৌঁছেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নতুন দুটি যুদ্ধজাহাজ 'সংগ্রাম' ও 'প্রত্যাশা'"। আইএসপিআর। ২০২২-০৬-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-২৪।
- ↑ "PM commissions warship 'BNS Sangram'"। ২৭ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২১।
- ↑ "United Nations Interim Force In Lebanon (UNIFIL) | Armed Forces Division(AFD)"। afd.gov.bd। ২০২২-০৯-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-২৭।
- ↑ "International Fleet Review 2022 | Bangladesh Navy"। ৭ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০২২।
- ↑ "প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার" (পিডিএফ)। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-১৮।