ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র

এক প্রকারের ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র

ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র (ইংরেজি:Scanning Electron Microscope স্ক্যানিং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ) হল এমন একটি ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র যেটি একটি বিশেষ বস্তুর ছবি তোলে ইলেকট্রন রশ্মি দিয়ে ক্রমবীক্ষণ (স্ক্যান) করার পর। ইলেকট্রনগুলি পরমাণুর সাথে ধাক্কা খেয়ে বিভিন্নরকমের সংকেতের জন্ম দেয় যেগুলি বিশেষ অস্তিত্ব শনাক্তকারকের দ্বারা তথ্য সংগ্রহ করে সেই বস্তুর দ্বিমাত্রিক কাঠামোচিত্র ও তার অন্তর্নিহিত অণুর বিভিন্ন তথ্য আমাদের জানায়। ছবিটি তৈরি করা হয় ইলেকট্রন রশ্মির স্থান ও গৃহীত সংকেতের তথ্য থেকে। ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের বিভেদনক্ষমতা (রেজোলিউশন) ১ ন্যানোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে তার চেয়ে কম বিভেদনক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হয়েছে। পরীক্ষামূলক নমুনা (টেস্ট স্যাম্পল) যেকোনও তাপমাত্রায় বা যেকোনও পরিবেশে দেখা সম্ভব। সাধারণত ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পরমাণু থেকে বেরিয়ে আসা গৌণ ইলেকট্রন রশ্মিগুলিকে সনাক্ত করা হয়ে থাকে। ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষামূলক নমুনার চ্যাপ্টা পৃষ্ঠে কম গৌণ ইলেকট্রন ও বাঁকা পৃষ্ঠে তুলনামূলকভাবে বেশি গৌণ ইলেকট্রন শনাক্ত করা সম্ভব। এই "গৌণ" ইলেকট্রনগুলি তুলনামূলক রশ্মি সংগ্রহ করে দ্বিমাত্রিক কাঠামোচিত্রণ তৈরি করার সম্ভব।

প্রথম ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র

ইতিহাস সম্পাদনা

ম্যাক্মুলান ছিলেন প্রথম বিজ্ঞানী যিনি ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ধারণাটি বিজ্ঞানমহলে উপস্থাপন করেন। যদিও ম্যাক্স নল তার আগে ইলেকট্রন রশ্মির দ্বারা ৫০ মি.মি প্রস্থের ফিল্ডে কন্ট্রাস্ট ছবি তুলতে সক্ষম হন। কিন্তু প্রথম একটি যথাযথ ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ধারণায় অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন মান ভন আরডেন ১৯৩৭ সালে। আরডেন শুধু ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ধারণাই লাগাননি তার সাথে তিনি বর্ণাপেরণ (ক্রোমাটিক অ্যাবারেশন) বেছে তা বর্জন করতে পেরেছিলেন। বর্ণাপেরণ সাধারণ ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা যায়। এরপরের যত উন্নতি হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে চার্লস ওটলিজরোন্সকি নামক দুজনের প্রচেষ্টায়। এবং ১৯৬৫ এ প্রথম ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র "স্টিরিওক্রমবীক্ষণ" নামে বাজারে আসে।

নীতি সম্পাদনা

ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র যে সমস্ত সঙ্কেত উৎপাদন করে সেগুলি হল গৌণ ইলেকট্রন, পিছনদিকে বিক্ষিপ্ত ইলেকট্রন (ব্যাক স্ক্যাটার্ড ), চরিত্রগত রঞ্জনরশ্মি, নমুনা প্রবাহ ইত্যাদি। নমুনাপৃষ্ঠ বা নমুনাপৃষ্ঠের নিকটবর্তী পরমাণুর সাথে ইলেকট্রন পটির সংঘর্ষে এই সংকেতগুলি উৎপন্ন হয়। এদের মধ্যে সবথেকে বেশি ব্যবহৃত হয় গৌণ ইলেকট্রন সঙ্কেত, যা উচ্চ বিভেদনক্ষমতার চিত্র উৎপন্ন করতে সক্ষম। এই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের গৌণ ইলেকট্রন সংকেতের সাহায্যে ১ ন্যানোমিটারের চেয়েও ক্ষুদ্রতর বস্তু দেখতে পাওয়া সম্ভব। সংকীর্ণ ইলেকট্রন পটির কারণে এই অণুবীক্ষণ যন্ত্র উচ্চ ক্ষেত্রগভীরতাবিশিষ্ট, যা ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরি করা সক্ষমতা প্রদান করে। পিছনদিকে বিক্ষিপ্ত (ব্যাক স্ক্যাটার্ড) ইলেকট্রন সঙ্কেত তৈরি হয় নমুনাপৃষ্ঠ থেকে ইলেকট্রনের প্রতিফলনের কারণে, যার কারণ হল ইলেকট্রনের সাথে নমুনার স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ। চরিত্রগত রঞ্জনরশ্মি (এক্স-রে) উৎপন্ন হয় যখন উত্তেজিত ইলেকট্রনগুলি ফোটন কণা নির্গত করে নিম্নবর্তী শক্তিতে ফিরে আসে।

ক্রমবীক্ষণ পদ্ধতি সম্পাদনা

ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে সাধারণত টাংস্টেন ফিলামেন্ট উত্তপ্ত করে তাপীয় ইলেকট্রন নির্গত করা হয়। টাংস্টেন ব্যবহৃত হয় কারণ টাংস্টেনের গলনাঙ্ক সর্বাধিক এবং বাষ্প চাপ সর্বনিম্ন। এইভাবে উৎপন্ন তাপীয় ইলেকট্রন উচ্চশক্তি সম্পন্ন হয় (০.২ কিলো ইলেকট্রন ভোল্ট ― ৪০ কিলো ইলেকট্রন ভোল্ট)। উৎপন্ন তাপীয় ইলেকট্রন পটিকে (বিম) সংগ্রাহী পরকলার (কনডেনসার লেন্স) সাহায্যে ০.৪ থেকে ৫ ন্যানোমিটার ব্যাসের ক্ষেত্রে ফেলা যায়। প্রাথমিক এই ইলেকট্রন পটি নমুনার উপর ক্রিয়া করে ক্রমশ শক্তি হারাতে থাকে। এই পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন বিভিন্ন প্রকার সঙ্কেত ক্রমবেক্ষক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের অস্তিত্ব শনাক্তকারকের সাহায্যে শনাক্ত করা যায় এবং নমুনার আকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা