ড.সোমা ঘোষ (বিবাহের পূর্বে সোমা চক্রবর্তী) (জন্ম - ২০ এপ্রিল ১৯৬২) [১] হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতের একজন খ্যাতনামা গায়িকা। তিনি বারাণসী ঘরানার ঐতিহ্যবাহী চৈতি, কাজরী, টপ্পা, ঠুমরি, দাদরা ছাড়াও গজল গানের অত্যন্ত পারদর্শী সঙ্গীতশিল্পী এবং ভারতের প্রখ্যাত সানাই বাদক ভারতরত্ন বিসমিল্লাহ্ খানের দত্তক কন্যা। তিনিই প্রথম ভারতীয় গায়িকা যিনি ভারতের সংসদ ভবনে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশনের করেন।[২] ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাকে কলা-শাস্ত্রীয় কণ্ঠসঙ্গীতের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চতুর্থ সেরা বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রদান করে।[৩] সোমা ঘোষ প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক ও চিত্রনাট্যকার নবেন্দু ঘোষের পুত্রবধূ। তার চলচ্চিত্র নির্মাতা পুত্র শুভঙ্কর ঘোষ হলেন সোমার স্বামী।

সোমা ঘোষ
জন্মনামসোমা চক্রবর্তী
জন্ম (1962-04-20) ২০ এপ্রিল ১৯৬২ (বয়স ৬১)
বারাণসী, উত্তর প্রদেশ ভারত
ধরনহিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত
পেশাকণ্ঠশিল্পী
কার্যকালবর্তমান
ওয়েবসাইটhttp://www.madhumurchhana.org/
পুরস্কারপদ্মশ্রী (২০১৬)

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

সোমা চক্রবর্তীর জন্ম উত্তর প্রদেশের বারাণসীর এক সংস্কৃতিমনস্ক ও শিক্ষিত পরিবারে। পিতা মনমোহন চক্রবর্তী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং মাতা অর্চনা চক্রবর্তী ছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতের শিক্ষিকা। তিনি যেমন গান করতেন, তেমনই কবিতা, নিবন্ধ ইত্যাদি রচনা করতেন। তার পিতামহ মদনমোহন মালব্যের ঘনিষ্ঠ এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও সংস্কৃত ভাষার প্রথম অধ্যাপক ছিলেন।[২] সোমা ছোটবেলা থেকেই মা'য়ের কাছে সঙ্গীতের শিক্ষা লাভ করেন। তারপর তিনি বারাণসীর বাগেশ্বরী দেবীর কাছে তালিম নেন। তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হয়ে সঙ্গীতে এম.এ পাশ করেন। পরবর্তীতে ছোটা খেয়ালের উপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

সঙ্গীত জীবন সম্পাদনা

সোমা ঘোষ মূলত বারাণসীর বাগেশ্বরী দেবীর তালিমে বারাণসীর ঐতিহ্যবাহী ঘরানার গায়কী শৈলী ঠুমরি, টপ্পা, হরি, কাজরী, দাদরা, গজল ইত্যাদিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। অবশ্য তিনি গোয়ালিয়র ঘরানা ও সেনীয়া ঘরানারও সঙ্গীত শৈলীর শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।

তিনি ভারতের প্রবাদপ্রতিম সানাই বাদক ভারতরত্ন বিসমিল্লাহ্ খানের যুগলবন্দিতে কণ্ঠ দান করেছিলেন। তিনি সোমাকে দত্তক কন্যা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ভবন, ভারতের সংসদ ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে, পাঁচবার দ্বৈত সঙ্গীত পরিবেশনের দুর্লভ সুযোগ পান। ভারতের রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম, প্রতিভা পাঠিল, ভারতীয় রাজনীতিবিদ সোনিয়া গান্ধী, যশবন্ত সিং প্রমুখের প্রশংসা অর্জন করেন।[৪]

তার কণ্ঠের গীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল-

  • মোহে পনঘট পে নন্দলাল (যুগলবন্দি)
  • চাঁদনি ছত পে চল রহী (গজল)
  • ফাসলে অ্যাইসে ভী হোঙ্গে
  • ঝুলা, ধীরে সে ঝুলায়ো (কাজরী)
  • আরে রামা রিম ঝিম সে (কাজরী)
  • বর্ষণ লাগি বদরিয়া (কাজরী)
  • অপনে বিস্তার পে বহুত দের সে ম্যায় (গজল)
  • আজ জানে কি জিদ না করো (গজল)
  • লত উরঝে সুলঝা যা বালমা
  • মির্জাপুর কইলে গুলজার হো

সম্মাননা সম্পাদনা

ভারত সরকার ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে কলা-শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তাঁর প্রশংসনীয় অবদানের জন্য পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রদান করে।

অন্যান্য সম্পাদনা

তিনি বারাণসীতে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় কলা, সংস্কৃতি ও সঙ্গীতের ধারা ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা - মধুমর্ছনা গঠন করেন। বার্ষিক সঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজন ছাড়াও তিনি ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহায়তায় হারিয়ে যাওয়া যন্ত্র সঙ্গীতসহ ভারতের সঙ্গীত ঘরানার ঐতিহ্য তুলে ধরায় সচেষ্ট। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে ' 'মধুমর্ছনা অডিও' এবং ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে গুরু-শিষ্য পরম্পরায় ভারতীয় সঙ্গীতের ধারা বহনে ও ঐতিহ্য রক্ষায় একটি ডিজিটাল স্টুডিও মধুমর্ছনা সঙ্গীত গ্রাম তৈরি করেন।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Soma Ghosh Biography"। ২০২২-০২-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২০ 
  2. "Award is nothing but guru's blessing': Soma Ghosh"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২০ 
  3. "Padma award 2016"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২০ 
  4. "Dr Soma Ghosh- Biography(ইংরাজীতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-২১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "Madhu Murchana - an NGO with noble dream (ইংরাজীতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-১৫