হযরত গাউছুল আযম শাহসুফি মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারী (১৮৬৫-১৯৩৭), যিনি বাবা ভাণ্ডারী নামেও পরিচিত, ছিলেন একজন বাঙালি সুফি সাধক ও বাংলায় সুফিবাদ প্রচারক। তিনি তার চাচা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ'র সুফি তরিকার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী হন ও মাইজভাণ্ডারী দরবারের দ্বিতীয় প্রধান হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন।
গোলামুর রহমানের পিতা ছিলেন আব্দুল করিম শাহ। যিনি সৈয়দ আহমদ উল্লাহর ছোট ভাই এবং মাতা ছিলেন মোশারফ জান। তার পৈতৃক পূর্বপুরুষ ছিলেন সৈয়দ এবং মূলত মদিনা থেকে বাগদাদ ও দিল্লি হয়ে মধ্যযুগীয় বাংলার পূর্ববর্তী রাজধানী গৌড়ে চলে আসেন। তার পূর্বপুরুষ হামিদ উদ্দিন ছিলেন গৌড়ের নিযুক্ত ইমাম ও কাজি, কিন্তু শহরে হঠাৎ মহামারীর কারণে হামিদ পরবর্তীতে চট্টগ্রাম জেলা'র পটিয়ায় চলে আসেন।[১] হামিদের ছেলে এবং সৈয়দ আব্দুল কাদিরকে আধুনিক ফটিকছড়ির আজিমনগরের ইমাম করা হয়। তার দুই পুত্র ছিল: সৈয়দ আতাউল্লাহ ও সৈয়দ তৈয়ব উল্লাহ। শেষের তিন পুত্র ছিল: সৈয়দ আহমদ, সৈয়দ মতিউল্লাহ ও সৈয়দ আবদুল করিম। এই কনিষ্ঠ পুত্রই ছিলেন সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবা ভান্ডারীর পিতা।
তিনি ১৪ অক্টোবর ১৮৬৫ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার গ্রামে একটি বাঙালী মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার চাচা তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি আদর করে তাকে "আমার বাগানের গোলাপ" বলে ডাকতেন। একসময় তার চাচার ছাত্রদের বিশেষ করে পারদর্শী শিক্ষার্থী যারা ছিল তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব তার ওপর অর্পণ করেছিলেন।[২] সৈয়দ গোলামুর রহমান তার আধ্যাত্মিক যাত্রার অংশ হিসাবে বনে একা ঘুরে মহান স্রষ্টার সৃষ্টি-রহস্য অবলোকনে সময় কাটিয়েছেন।[৩] ১৯১৪ সালের দিকে তিনি ধ্যানের অবস্থায় প্রবেশ করেন এবং বিরল অনুষ্ঠান ব্যতীত কথা বলা বন্ধ করে দেন, এইভাবে তিনি মগদুব পীর হিসাবে পরিচিত হন। ১৯২৮ সালে তিনি তার পিতার বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে চলে আসেন। এখানে এসে তিনি শিষ্যদের কর্ম পথনির্দেশনা এবং তার চার পুত্রের জীবন গড়ার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।[৩]
গোলামু রহমানের বংশধরদের বাড়ি তথা রহমানিয়া মঞ্জিলের লেখকগণ তাকে সর্বোচ্চ শ্রেণীর একজন ওয়ালি আল্লাহ এবং আহমদ উল্লাহর পাশাপাশি তাকে গাউসুল আজম হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেন। কখনও কখনও দাবি করেন যে, তিনি আহমদ উল্লাহ-এর কর্তক তার আধ্যাত্মিক উত্তরসূরি (শাজ্জাদানশীন) হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এর বিপরীতে আহমদ উল্লাহ বা আহমদীয়া মঞ্জিলের বংশধরদের অবস্থান হল যে, তিনি ছিলেন আহমদ উল্লাহর প্রধান প্রতিনিধি (প্রধান খলিফা), এবং দেলাওয়ার হোসেনের কোনো একটি লেখায় দেখা গেলেও গাউসুল আজম উপাধিটি সাধারণত তাকে অস্বীকার করা হয়।।[৩]
↑Harder, Hans (২০১১), Sufism and Saint Veneration in Contemporary Bangladesh: The Maijbhandaris of Chittagong, Routledge, পৃষ্ঠা 15–22, আইএসবিএন978-1-136-83189-8উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
↑Bertocci, Peter J. (ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "A Sufi movement in Bangladesh: The Maijbhandari Tariqa and its Followers"। Contributions to Indian Sociology। 40 (1): 9। এসটুসিআইডি144167466। ডিওআই:10.1177/006996670504000101।
↑ কখগউদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Harder22 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
Bertocci, Peter J. (ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "A Sufi movement in Bangladesh: The Maijbhandari Tariqa and its Followers"। Contributions to Indian Sociology। 40 (1): 1–28। এসটুসিআইডি144167466। ডিওআই:10.1177/006996670504000101।