সুশীলা অনিতা ব্যানার্জী
সুশীলা অনিতা ব্যানার্জী (মৃত্যু: ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯২০) একজন ডাক্তার, শিক্ষাবিদ এবং মহিলা ভোটাধিকারবাদী, যিনি অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ইংল্যান্ড ও ভারতে নারী শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের পক্ষে আন্দোলন করেন।[১]
জন্ম ও পরিবার
সম্পাদনাসুশীলা অনিতা ব্যানার্জীর বাবা উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং মা হেমাঙ্গিনি মতিলাল। সুশীলা তার ছয় ভাই-বোনের (চার বোন ও দুই ভাই) একজন, যিনি ছোটবেলা থেকেই ইংল্যান্ডের ক্রয়দন শহরে বসবাস ও শিক্ষালাভ করেন। ইংল্যান্ডের ক্রয়দন শহরে তার পিতা-মাতার একটি বাড়ি ছিল। তারা প্রায়শই কলকাতার পৈতৃক বাড়িতে যাতায়াত করতেন। সুশীলা অনিতা ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তানের লাহোরে (তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অংশ) মারা যান।[১][২]
শিক্ষা ও কর্মজীবন
সম্পাদনাসুশীলা অনিতা ব্যানার্জী ক্রয়ডেন হাইস্কুল ফর গার্লস থেকে বিদ্যালয় শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে কেমব্রিজের নিউহাম কলেজে পড়াশোনা করেন। যেখানে তিনি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি লন্ডন স্কুল অফ মেডিসিন ফর উইমেনে মেডিসিন অধ্যয়ন করতে যান এবং ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে এমবি ডিগ্রি অর্জন করেন।[৩] সুশীলা ব্যানার্জী রুক্মা বাঈ, এলিস সোরাবজি এবং মেরবাই ভাকিল সহ ভারতীয় মহিলাদের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যারা ১৮ শতাব্দীর শেষের দিকে ইংল্যান্ডে চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। পরে তিনি ভারতে ফিরে এসে মহিলাদের জন্য চিকিৎসাক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা এবং মহিলাদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে সাহায্য করেছিলেন।[৪]
ব্যানার্জী প্রথম দিকে রয়্যাল ফ্রি হাসপাতালে মেডিসিন অভ্যাস করতেন। এরপর তিনি ভারতে কলকাতার বাড়িতে চলে আসেন এবং দিল্লির কেমব্রিজ মিশন হাসপাতালে অভ্যাস শুরু করেন।[১] তার বোন জানকী স্মৃতিচারণায় বলেন যে প্লেগ মহামারীর সময় মিশন হাসপাতালে তার দিদিই একমাত্র উপলব্ধ ডাক্তার ছিলেন এবং সেইসময় তার শরীরের উপর বিশেষ প্রভাব পরে।[৩] তিনি নিজের অনুশীলন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ইচ্ছার জন্য তার পরিবারের আপত্তির সম্মুখীন হয়ে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কেমব্রিজে ফিরে আসেন। কিন্তু সেখানেও বর্ণবাদ ও হয়রানির সম্মুখীন হয়ে স্বাধীন অনুশীলন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় অসমর্থ হন, যা তার বোন জানকীর পারিবারিক ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে।[৫] ব্যানার্জী পরবর্তীতে নিউনহাম কলেজের বালফোর ল্যাবরেটরিতে যোগদান ও গবেষণা পরিচালনা করেন এবং গির্টন এবং নিউনহাম কলেজের শিক্ষার্থীদের শারীরবিদ্যা পড়ান।[১]
১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ব্যানার্জী ইন্ডিয়ান উইমেনস এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থার সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ইংল্যান্ডে ভারতীয় মহিলাদের শিক্ষিত করার জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। তিনি ইংল্যান্ডে মহিলা ভোটাধিকার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ডের ইলিংয় জেলার চার্চ লীগ ফর উইমেনস সুফারেজ শাখার সভাপতি হন।[৬] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, তাকে ব্রিস্টলের একটি হাসপাতালে হোম সার্জন হিসেবে একটি অস্থায়ী পদ দেওয়া হয়েছিল।[৩] তিনি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওষুধ শিক্ষা এবং মহিলাদের শিক্ষার জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ভারত এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে ভ্রমণ অব্যাহত রেখেছিলেন।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Croydon | Making Britain। "Susila Anita Bonnerjee"। www.open.ac.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬।
- ↑ The Lancet (ইংরেজি ভাষায়)। J. Onwhyn। ১৯২০। পৃষ্ঠা ৯৭৬।
- ↑ ক খ গ "Newly-discovered photograph highlights the role of Indian suffragists – Newnham's Dr Susila Bonnerjee (NC 1891) – Newnham College"। www.newn.cam.ac.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬।
- ↑ Burton, Antoinette; Sinha, Mrinalini; Bayly, C. A. (২০১১-০৫-০৩)। Empire in Question: Reading, Writing, and Teaching British Imperialism (ইংরেজি ভাষায়)। Duke University Press। পৃষ্ঠা 170। আইএসবিএন 978-0-8223-4902-0।
- ↑ Majumdar, Janaki Agnes Penelope (২০০৩)। Family History (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-566360-0।
- ↑ Science, London School of Economics and Political। "Unearthed photograph highlights important role of Indian suffragettes"। London School of Economics and Political Science (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৬।