সুরায়া দালিল

আফগান চিকিৎসক এবং রাজনীতিবিদ

সুরায়া দালিল (দারি: ثریا دلیل‎), (জন্ম ১৯৭০) হচ্ছেন একজন আফগান চিকিৎসক এবং রাজনীতিবিদ যিনি ২০১০-২০১৪ সাল পর্যন্ত থেকে আফগানিস্তানের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন এবং নভেম্বর ২০১৫ থেকে জাতিসংঘে আফগানিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।

সুনায়া দালিল
ثریا دلیل
২০১৭-এ সুরায়া দালিল
ব্যক্তিগত বিবরণ
নাগরিকত্বআফগানিস্তান
জাতীয়তা আফগানিস্তান
পেশাচিকিৎসক
Ethnicityউজবেক

প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

দালিলের জন্ম কাবুলে ফেব্রুয়ারি ১৯৭০ সালে। তার বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন এবং আফগানিস্তানে নারী শিক্ষা প্রচুর অপ্রতুল হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাকে শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করেন।[১] তিনি জারঘোনা উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং ১৯৯১ সালে কাবুল মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হন।[২][৩] গৃহযুদ্ধের সময় তার বাবার আহত হওয়ার পর তার পরিবার মাজার-ই-শরীফ চলে যায়।[১][৩][৪]

২০০৪-এ, হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথে ভর্তি হওয়ার জন্য দালিল রাষ্ট্রপতির বৃত্তি লাভ করেন[৫] এবং সেখান থেকে জনস্বাস্থ্যের উপর ২০০৫-এ মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন।[২][৩][৪]

কর্মজীবন সম্পাদনা

দালিল ১৯৯২ এবং ১৯৯৩ সালে উত্তর আফগানিস্তানে তাজিক উদ্বাস্তুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মেদসাঁ সঁ ফ্রোঁতিয়েরর সাথে কাজ করেন।[২] এরপর তিনি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের সাথে কাজ করেন আফগান শরণার্থীদেরকে পাকিস্তান ও ইরান থেকে ফিরে আসার পর চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করতে।[১][২][৩]

দালিল ১৯৯৪ সালে আফগানিস্তানে ইউনিসেফের সাথে কাজ শুরু করেন, এটি একটি বড় আকারের হাম এবং পোলিও টিকাদান কর্মসূচি প্রকল্প তত্ত্বাবধান করেন,[২][৪] ১৯৯৮ সালে যখন তালিবানরা মাজার-ই-শরীফ পৌছে যায়, তিনি এবং তার পরিবার পায়ে হেঁটে পাকিস্তানে পৌছে আশ্রয় নেয়, যেখানে তিনি ইউনিসেফ আফগানিস্তানের অফিসে কাজ করেছেন যা সেখানে স্থানান্তরিত হয়েছিল।[৩] আফগানিস্তানে তালিবানের পতনের পর ২০০২ সালে তিনি তার পরিবার সহ কাবুল ফিরে আসেন।[৩] তিনি সেখানে ২০০৭ পর্যন্ত কাজ করেন, যখন ইউনিসেফ তাকে সোমালিয়ায় স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি প্রোগ্রামের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করে, সেখানে তিনি ডিসেম্বর, ২০০৯ পর্যন্ত কাজ করেছেন[২]

জানুয়ারি ২০১০-এ, দালিল রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই কর্তৃক ভারপ্রাপ্ত জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন, এবং মার্চ ২০১২-এ মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন।[২][৬] শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস করার জন্য তিনি বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেন।[৭][৮][৯]

নভেম্বর ২০১৫-এ, জেনেভায় জাতিসংঘে আফগানিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সরকারের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি দালিলকে নিযুক্ত করেন,[৬][১০] তিনি ছিলেন এই পদে প্রথম কোন নারী।[১]

২০১৭-এর শেষে, দালিলকে "এন্টি-পার্সোনাল মাইন ব্যান কনভেনশনের" (অটোয়া চুক্তি) সভাপতি করা হয়,[১১] যেটি "আত্মঘাতী-বোমা" এর ব্যবহার, উৎপাদন, স্থানান্তর এবং জমানো নিষিদ্ধ করে। আফগানিস্তান হচ্ছে এই অস্ত্রগুলির দ্বারা ক্ষতির স্বীকার দেশগুলির মধ্যে অন্যতম।[১২][১৩] কনভেনশনটিতে তার সভাপতি পদ ২০১৮ সালের শেষের দিকে শেষ হয়।[১৪]

অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনা

পুরস্কার এবং সম্মাননা সম্পাদনা

২০১২-এ, দেশব্যাপী টিকা প্রয়োগে তার কৃতিত্বের জন্য দালিলকে টিকাদান বিশ্ব ইউনিয়ন কর্তৃক পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল।[১৬] ২০১৪-এ, তিনি আফগানিস্তানে প্রজনন অগ্রাধিকার, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য অবদানের জন্য গ্লোবাল লিডার কাউন্সিলের থেকে বিশেষ উল্লেখযোগ্য সম্মানী পুরস্কার।[১৭]

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

দালিলের স্থানীয় ভাষা হচ্ছে উজবেকী, তিনি আরো দারি, পশতু ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন।[২] তার স্বামীও একজন মেডিক্যাল ডাক্তার, এবং তাদের তিন সন্তান রয়েছে।[১][৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Chahil-Graf, Renu (২৪ মার্চ ২০১৬)। "Most Afghan girls don't go to school. How grit and dad got this one to the top"। Le News। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৭ 
  2. "H.E. Dr Suraya DALIL"World Health Organization। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১৭ 
  3. Delvigne-Jean, Thierry (২৭ জুন ২০০৫)। "Suraya Dalil: Taking the long way home"। UNICEF। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৭ 
  4. Powell, Alvin (৯ জুন ২০০৫)। "A doctor goes home: Combating Afghanistan's maternal mortality rate"Harvard Gazette। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৭ 
  5. Drexler, Madeline (২০১৪)। "The capacity of financial aid to transform millions of lives"Harvard Public Health 
  6. "Amb Suraya Dalil"। Geneva Center for Security Policy। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. Nebehay, Stephanie (১৮ মে ২০১১)। "Afghan health minister seeks backing for vaccines"। Reuters। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৭ 
  8. "The Ministry of Public Health, Malalai Hospital and UNFPA celebrate the International Day to End Obstetric Fistula"। UNFPA Afghanistan। ২৭ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৭ 
  9. Francome, Colin (২০১৬)। Unsafe Abortion and Women's Health: Change and Liberalization। Routledge। পৃষ্ঠা 57। আইএসবিএন 9781317004219 
  10. "Suraya Dalil Submits Credentials To UN Geneva Office"। Tolo News। ৩ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৭ 
  11. "AP Mine Ban Convention: Landmine treaty at 20: gains made in mine clearance, stockpile destruction and universalization"www.apminebanconvention.org। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৯ 
  12. "Mine Action - Reports - Monitor"the-monitor.org 
  13. "AP Mine Ban Convention: Afghanistan"www.apminebanconvention.org। ৫ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৯ 
  14. "AP Mine Ban Convention: Seventeenth Meeting of the States Parties"www.apminebanconvention.org। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৯ 
  15. Member International Gender Champions (IGC).
  16. "MoPH Gains VWU Prize"। Bakhtar News। ৯ ডিসেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  17. "Afghanistan's Reproductive Health Celebrated By World Leaders"। Bakhtar News। ২১ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা