সুনন্দ সান্যাল (১ ফেব্রুয়ারি  ১৯৩৪ – ২২ মার্চ  ২০২২) ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের  একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,  প্রাবন্ধিক, সমাজসেবী এবং কলামিসট। [১][২] তিনি রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদান আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। মাতৃভাষায় শিক্ষার বিষয়েও তিনি ছিলেন বাংলার শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব।[৩]

সুনন্দ সান্যাল
জন্ম(১৯৩৪-০২-০১)১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪
মৃত্যু২২ মার্চ ২০২২(2022-03-22) (বয়স ৮৮)
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৩৪—১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭—২০২২)
পেশাশিক্ষাবিদ, অধ্যাপনা
সন্তানসুগত সান্যাল

জীবন সম্পাদনা

অধ্যাপক সুনন্দ সান্যালের জন্ম ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের  পাবনার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে [১] তিনি পাবনায় স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতায় আসেন। তারপর হায়দ্রাবাদ ও লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।[৪]

তিনি ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যেরকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যের স্নাতক স্নাতকোত্তর। ১৯৭০ এর দশকের প্রথমে তিনি  হায়দ্রাবাদের ইংরেজি এবং বিদেশী ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

তিনি বেলুড় মঠের রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ও অংশকালীন সময়ের প্রভাষক  ছিলেন। [২] বিভিন্ন সময়ে তিনি সামাজিক বিষয় নিয়ে ইংরাজী ও আঞ্চলিক ভাষায় বহু পত্র পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। [২]

পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট এবং পরবর্তী সময়ে তৃণমূল কংগ্রেস প্রশাসন - দুই সরকারের শিক্ষা কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ইংরাজী ভাষা শিক্ষা নিয়ে বামনীতির সমালোচনা করে কমিশনের চেয়ারম্যান মন্ত্রী অশোক মিত্রের বিরাগভাজন হন। তার কাছে গ্রামের গরিব ছেলেমেয়েদের প্রকৃত শিক্ষাদানের দাবি সবসময় অগ্রাধিকার পেয়েছে।   অধ্যাপক সান্যালের নেতৃত্বে অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটি বহু আন্দোলন করেছে। তার নিরলস প্রতিবাদের কারণে বামফ্রন্ট সরকার প্রাথমিক স্তরে ইংরাজী ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়।

অধ্যাপক সান্যাল তরুণকান্তি নস্করের নেতৃত্বে অল বেঙ্গল সেভ এডুকেশন কমিটির সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। প্রফেসর সান্যাল সবসময় চেয়েছিলেন দরিদ্র গ্রামীণ শিশুদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা। এলএফ সরকারের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে তার দীর্ঘস্থায়ী বিরোধিতার কারণে সরকার শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়।

অধ্যাপক সুনন্দ  সান্যাল আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামজঙ্গল মহল  নিয়ে আন্দোলনকে সমর্থন করতে গণমুক্তি পরিষদ গঠন করেন। জনমত গঠনে তিনি এই সমস্ত অঞ্চলে র‌্যালিতে অংশ নেন।। [২]রাজ্যে সরকার  পরিবর্তনের পর স্কুলশিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন তিনি। কিন্তু  কয়েকমাসের মধ্যে সেই পদ ছেড়ে দেন। তিনি  তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের কামদুনি থেকে সারদা বিভিন্ন বিষয়েও সক্রিয় ছিলেন।

জীবনাবসান সম্পাদনা

অধ্যাপক সুনন্দ সান্যাল বেশ কিছু দিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। ২০২২ খ্রিস্টাব্দের  ২৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তিনি ২২ মার্চ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [৪]

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় তাকে একজন নৈতিক মূল্যবোধে, সততায় ও জ্ঞানে সংপৃক্ত ব্যক্তিত্ব হিসাবে বর্ণনা করেন।। [১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Educationist Sunanda Sanyal passes away"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-০২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "Teacher Sunanda Sanyal passes away at 88"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-০১ 
  3. "বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুনন্দ সান্যাল প্রয়াত"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-০৩ 
  4. "Eminent Bengal academician Sunanda Sanyal dies at 84"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-০৩