সীরাতে ইবনে ইসহাক
সীরাতে ইবনে ইসহাক (আরবি: السير والمغازي, প্রতিবর্ণীকৃত: আস সিয়ারু ওয়াল মাগাযী ; আরবি: السيرة النبوية لابن إسحاق, প্রতিবর্ণীকৃত: আসসিরাতুন নাবাবিয়্যাহ) ইবনে ইসহাকের রচিত একটি সীরাতগ্রন্থ। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এটিই সীরাত বিষয়ক প্রথম গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত।[১][২] তাই ইবনে ইসহাককে সীরাত শাস্ত্রের জনক বলা হয়। পরবর্তীতে ইবনে হিশাম গ্রন্থটির একটি সংশোধিত ও পরিমার্জিত রূপ প্রকাশ করেন, যা সীরাতে ইবনে হিশাম নামে পরিচিত। প্রথম দিকের সীরাত গ্রন্থসমূহের মধ্যে প্রাপ্যতার দিক থেকে এটি একমাত্র গ্রন্থ। সমালোচনা সত্ত্বেও ইবনে ইসহাক সীরাত শাস্ত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। তবে বর্তমানে সীরাতে ইবনে ইসহাকের সম্পূর্ণ কপি পাওয়া যায় না।
লেখক | ইবনে ইসহাক |
---|---|
কাজের শিরোনাম | আরবি: السير والمغازي; আরবি: السيرة النبوية لابن إسحاق |
অনুবাদক | ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ |
দেশ | ইসলামি স্বর্ণযুগ |
ভাষা | আরবি |
বিষয় | সীরাত |
পটভূমি | মুহাম্মদ (স.) |
মিডিয়া ধরন | মুদ্রিত গ্রন্থ (শক্তমলাট) |
পরবর্তী বই | সীরাতে ইবনে হিশাম |
প্রেক্ষাপট
সম্পাদনাআবদুস সালাম হারূনকৃত তাহযীবু সীরাতে ইবনে হিশামে গ্রন্থটি রচনার প্রেক্ষাপট হিসেবে বলা হয়েছে,
“ | একদা ইবনে ইসহাক বাগদাদে খলিফা মানসুরের দরবারে প্রবেশ করেন। তখন মানসুরের সামনেই ছিল তার পুত্র মাহদী। খলিফা বললেন, ইবনে ইসহাক! আপনি এই ছেলেটিকে চেনেন? ইবনে ইসহাক রহ. বললেন, হ্যাঁ। আমিরুল মোমিনীনের ছেলে। খলিফা বললেন, আপনি ওর জন্যে এমন একটি কিতাব রচনা করেন যাতে হযরত আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত পুরো ইতিহাস ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর বর্ণনা থাকবে। হযরত ইবনে ইসহাক রহ. খলীফার আবেদন রক্ষা করে কিতাব রচনার কাজ শুরু করেন। দীর্ঘদিন পর কাজ সমাপ্ত হলে কিতাবটি খলীফার সামনে পেশ করেন। সুদীর্ঘ সেই কিতাব দেখে খলীফা বললেন, ইবনে ইসহাক! আপনি খুবই দীর্ঘ করে ফেলেছেন। কিছুটা সংক্ষেপ করুন। এই বলে কিতাবটি রাষ্ট্রীয় সংরক্ষাণাগারে রেখে দেন। | ” |
— তাহযীবু সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃ.৯ |
ইবনে ইসহাকের সেই সংক্ষিপ্ত গ্রন্থটিই আস সিয়ারু ওয়াল মাগাযী বা আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ বা সীরাতে ইবনে ইসহাক নামে প্রসিদ্ধ।
বর্ণনাভঙ্গি
সম্পাদনাআদি পর্ব, নবুওয়াত পর্ব, গাযওয়া পর্ব মোট তিন পর্বে গ্রন্থটি বিভক্ত ছিল। আদি পর্বে ইসলাম পূর্ব ওহীর ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। নবুওয়াত পর্বে নবী (স.)-এর মক্কী জীবন এবং গাযওয়া পর্বে মাদানী জীবন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও কিতাবটিতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রাসঙ্গিক হিসেবে অনেক কবিতাও স্থান পেয়েছে।[৩]
গ্রন্থটিতে তিনি কোথাও সূত্র উল্লেখ করেছেন আবার কোথাও করেননি। বিচ্ছিন্ন সূত্রেও বিভিন্ন বর্ণনা আছে। বলেছেন, ‘অমুক গোত্রের একলোক ঘটনাটি আমাকে শুনিয়েছেন’, ‘একজন আহলে ইলম এটি বর্ণনা করেছেন’, ‘মক্কার অধিবাসী একজন বলেছেন’ এভাবে। সেজন্য তার এই গ্রন্থে অযাচিত অনেক বিষয় অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেছে। পরবর্তী অনেক ইসলামি পণ্ডিত তার এ গ্রন্থের বিভিন্ন অংশের কঠোর সমালোচনা করেছেন।[৪]
সীরাতে ইবনে হিশাম
সম্পাদনাপরবর্তীতে ইবনে হিশাম গ্রন্থটি সংশোধন ও জটিল শব্দগুলোর ব্যাখ্যা প্রদান করে একটি পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশ করেন যা সীরাতে ইবনে হিশাম নামে প্রসিদ্ধ। এতে তিনি গ্রন্থটির আদি পর্বের আদম হতে ইব্রাহিম পর্যন্ত বিভিন্ন গোত্রের ইতিহাস সংক্ষেপ করেন। ইবনে ইসহাকের উদ্ধৃত বিভিন্ন কবিতার সত্যতা যাচাই করে তার অধিকাংশ বাদ দিয়ে দেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় অনৈসলামি বা ইসরাঈলী বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। যেমন: খায়বার যুদ্ধ ও অন্যান্য কিছু ঘটনা তিনি ইয়াহুদীদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছেন। প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি সীরাত রচনায় তাওরাত ও ইঞ্জিল হতে সরাসরি বর্ণনা করেছেন। ফলে তিনি সমালোচনার সম্মুখীন হন।[৩]
মূল্যায়ন
সম্পাদনাইবনে ইসহাকের হাদিস বিষয়ক বর্ণনার গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে ইসলামি পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু তার সীরাত ও ইতিহাস বিষয়ক বর্ণনাকে অধিকাংশ ইসলামি পণ্ডিত গ্রহণযোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ইমাম বুখারী তার সহীহ বুখারীতে শুধুমাত্র জুযউল কিরাত অধ্যায় ছাড়া অন্য কোথাও ইবনে ইসহাকের হাদিস বিষয়ক বর্ণনা গ্রহণ করেন নি, কিন্তু তিনি ইবনে ইসহাকের ইতিহাসবিষয়ক বর্ণনা গ্রহণ করেছেন। হিশাম ইবন উরওয়া, ইবন যুবাইর ও ইমাম আনাস ইবন মালিক তার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। ইমাম শাফেয়ী ইবনে ইসহাকের প্রশংসা করে বলেন, "মাগাযী ও সীরাত বিষয়ে কেউ বৈদগ্ধ অর্জন করতে চাইলে মুহাম্মদ ইবন ইসহাকের দস্তরখানে হাজির হতে হবে।" ইবনে ইসহাক শিহাব যুহরীর ছাত্র ছিলেন। ইমাম যুহরী তার ছাত্র ইবনে ইসহাক সম্পর্কে বলেন, "যতদিন মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক আছে, ততদিন মদীনাবাসীদের মধ্যে জ্ঞান থাকবে।"[৩]
অনুবাদ
সম্পাদনা১৯৮৭ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে গ্রন্থটির প্রথম দুই খণ্ড এবং ১৯৯২ সালে তৃতীয় খণ্ডের বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়।[২]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Kibria, Asjadul (৯ নভেম্বর ২০১৯)। "The first book illustrating life and works of Muhammad (s.)"। ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।
- ↑ ক খ খসরু, আতাউর রহমান (২৫ ডিসেম্বর ২০১৫)। "ইতিহাসের প্রথম সিরাতগ্রন্থ"। বাংলানিউজ২৪.কম।
- ↑ ক খ গ আরিফুর রহমান, মোহাম্মদ (২০১৬)। বাংলা ভাষায় সীরাত চর্চা: মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ রচিত মোস্তফা চরিত। বাংলাদেশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ৬৮–৬৯।
- ↑ তায়্যিব, মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম (৬ নভেম্বর ২০১৯)। "প্রাচীন যুগের সীরাত রচনা-২: সীরাতে ইবনে ইসহাক"। ইসলামটাইমস২৪.কম।