সিরাজুল হক বীর প্রতীক

সিরাজুল হক (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯৭) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

সিরাজুল হক
মৃত্যু১৯৯৭
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

সিরাজুল হকের জন্ম ফেনীর সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়ন বেদ্রাবাদ শিলুয়া গ্রামে। তার বাবার নাম আফজালুর রহমান এবং মায়ের নাম বদরের নেছা। তার স্ত্রীর নাম জরিনা আক্তার বেগম। তার এক ছেলে ও তিন মেয়ে। [২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন সিরাজুল হক। কর্মরত ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানে। ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধ-যুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের রাজনগর সাবসেক্টরে। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেই চাকরি করেন। ১৯৯৩ সালে অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ৮-১১ নভেম্বর ফেনী জেলার পরশুরামের বিলোনিয়া পকেটের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ষ প্রতিরক্ষা ছিল। ফেনীর উত্তরে ভারত সীমান্তে বিলোনিয়া। বিলোনিয়া উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬ মাইল লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ছয় মাইল বিস্তৃত। এর তিন দিকেই ভারত। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা বিলোনিয়া পকেটে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের অবরোধ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ৯ নভেম্বর থেকে পাকিস্তানি সেনারা বোমাবর্ষণ শুরু করে। সারা দিন তাদের বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকে। দুপুরের পর পাকিস্তানি সেনারা সরাসরি আক্রমণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি আক্রমণ সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিহত করেন। এ সময় পরশুরামে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে সিরাজুল হক ও তার সহযোদ্ধারা বীরত্ব প্রদর্শন করেন। তাঁদের বীরত্বে পাকিস্তানি সেনাদের মনোবল ভেঙে পড়ে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা পরশুরাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। রাতের অন্ধকারে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি দল অবস্থান নিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের চারদিকে। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলে আছেন সিরাজুল হক। সকাল থেকেই তাঁদের ওপর শুরু হলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বোমাবর্ষণ। বিরামহীনভাবে সারা দিন ধরে চলে। সিরাজুল হক ও তার সহযোদ্ধারা দমে গেলেন না। সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করলেন। একপর্যায়ে পাকিস্তানি সেনারা পালানোর চেষ্টা করতে থাকল। কিন্তু সে পথ রুদ্ধ। তখন ভেঙে পড়ল পাকিস্তানিদের প্রতিরোধ। এ ঘটনা পরশুরামে। ১০ নভেম্বর যুদ্ধ থেমে থেমে চলতে থাকে। রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরশুরাম ঘাঁটির ওপর মুক্তিযোদ্ধারা প্রচণ্ড আক্রমণ চালান। এ আক্রমণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেশির ভাগ সদস্য নিহত হয়। বাকিরা আত্মসমর্পণ করে। সকাল হওয়ার পর সেখানে দেখা যায়, চারদিকে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে পাকিস্তানি সেনাদের লাশ। ধানখেত, বাংকার, খাল—কোথাও ফাঁকা নেই। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১০-০২-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৩৩৩। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ১৭১। আইএসবিএন 9789849025375 

পাদটীকা সম্পাদনা

বহি:সংযোগ সম্পাদনা