সিংহ দরবার (বা সিংহ প্রাসাদ) (নেপালী: सिंहदरवार, ইংরেজি: Singha Durbar) হল নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে অবস্থিত রাণা বংশর একটি প্রাসাদ। কাঠমাণ্ডুর মধ্যাঞ্চল তথা বাবর মহল এবং থাপাথালি দরবার এর উত্তরদিকে এবং ভদ্রকালির পূর্বদিকে সিংহ প্রাসাদ অবস্থিত।[২] ১৯০৮ সালের জুন মাসে চন্দ্র শামসের জে.বি.আর. এই প্রাসাদটি নিৰ্মাণ করেছিল।[৩]

সিংহ দরবার
মানচিত্র
সাধারণ তথ্য
স্থাপত্য রীতিনব্য-ধ্রুপদী স্থাপত্য, পেলেডিয়ান স্থাপত্য, এবং ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলী
শহরকাঠমাণ্ডু
দেশনেপাল
নির্মাণকাজের সমাপ্তি১৯০৮; ১১৬ বছর আগে (1908)
নির্মাণব্যয়অজ্ঞাত
গ্রাহকচন্দ্র শামসের জে.বি.আর
কারিগরী বিবরণ
কাঠামোগত পদ্ধতিইট এবং পাথর
নকশা এবং নির্মাণ
স্থপতিকুমার নরসিংহ রাণা, কিশোর নরসিংহ রাণা[১]
Aerial shot of Tundikhel along with Singha durbar

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হবার পরপরই শামসের সিংহ প্রাসাদ নিৰ্মাণ করেছিল। প্ৰথমাবস্থায় এটি ছিল একটি ছোট্ট ব্যক্তিগত বাসগৃহ, কিন্তু নিৰ্মাণের সময় একে বৃদ্ধি করা হয়। নিৰ্মাণের পরপরই শামসের এই সম্পত্তি নেপাল সরকারকে প্ৰধানমন্ত্ৰীর সরকারি বাসগৃহ হিসেবে ২০ মিলিয়ন নেপালী টাকায় বিক্ৰী করে দেন।[৩] ১৯২৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পর, সিংহ দরবার রাণা বংশের প্ৰধানমন্ত্ৰীদের সরকারি বাসগৃহ হিসেবে ব্যবহার করা হত, পদ্ম শামসের জে.বি.আর ছাড়া, যিনি তাঁর নিজস্ব বিশালনগর দরবারে বাস করতেন। সিংহ দরবার দখল করা রাণা বংশের শেষ প্ৰধানমন্ত্ৰী ছিলেন মোহন শামসের জে.বি.আর। এমনকি ১৯৫১ সালে রাণা বংশ ক্ষমতাচ্যুত হবার পর ও মোহন শামসের সিংহ দরবারে ছিলেন, কিন্তু ১৯৫৩ সালে সিংহ দরবার জাতীয় সম্পত্তি হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় তাকে সিংহ দরবার ছেড়ে যাবার জন্য সরকারিভাবে নির্দেশ দেয়া হয়।[৩]

 
সিংহ দরবার

ডিজাইন সম্পাদনা

বাহ্যিক গঠন সম্পাদনা

কুমার নরসিংহ রাণা এবং কিশোর নরসিংহ রাণা এর গাঠনিক রুপাংকন করেছিলেন। পেলেডিয়ান স্থাপত্য, করিনথিয়ান, নব্য-ধ্রুপদী স্থাপত্য শৈলীর এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে সিংহ দরবার নিৰ্মাণ করা হয়।[১][৩]

অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পাদনা

১৯৭৩ সালের অগ্নিকাণ্ডের আগে সিংহ প্রাসাদে সাতটি প্রাঙ্গণ এবং ১৭০০ টি কক্ষ ছিল। প্ৰতিটি কক্ষের মেজে মার্বেলের নিৰ্মিত, রূপালী আসবাবপত্র এবং স্ফটিক বাতিতে পরিপূৰ্ণ ছিল।[১][৪]

রাজ্য সভাঘর সম্পাদনা

 
বাগান থেকে সিংহ দরবারের দৃশ্য

রাজ্য সভাঘর টি সিংহ দরবারের সবথেকে বড় এবং সবথেকে অলংকৃত কক্ষ। এই সভাকক্ষটি বিদেশ থেকে আমদানি করা সামগ্ৰী দিয়ে সজ্জিত; যেমন- মুরানো কাঁচ, ক্রিস্টাল বিজলী বাতি, বেলজিয়ান দর্পণ এবং দেওয়াল ও ছাদে খুদিত বিভিন্ন ধরনের ফুলের নমুনার সাথে ইতালীয় মাৰ্বলের মেঝে।[৩]

গেলারী বৈঠক সম্পাদনা

চন্দ্ৰ শামসের একটা ব্যক্তিগত নাট্যশালা নিৰ্মাণ করেছিলেন যার নাম গেলারী বৈঠক রাখা হয়েছিল। একে সংসদ ভবন হিসেবে ব্যবহার করা হত।

নেপাল সরকারের অধীন সম্পাদনা

 
সিংহদ্বারের প্রধান প্রবেশদ্বার

বংশগত প্ৰধানমন্ত্ৰী (রাণাসকল) পদ্ধতির অবসান ঘটার পর নেপাল সরকার এই প্রাসাদটিকে সরকারি কাৰ্যালয় গৃহ হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছিল। প্রাসাদটিকে নেপাল সংসদের প্ৰতিনিধি সভা এবং রাষ্ট্ৰীয় সভার দ্বারা দখল করা হয়েছিল। এতে ২০ টি মন্ত্ৰণালয় এবং সরকারি কাৰ্যালয় রাখা হয়েছে। সিংহ দরবার রেডিও নেপাল এবং নেপাল দূরদর্শন এর প্ৰধান কাৰ্যালয় ও।

দুৰ্ঘটনাসমূহ সম্পাদনা

১৯৭৩ সালের অগ্নিকাণ্ড সম্পাদনা

১৯৭৩ সালের ৯ জুলাই, সোমবার সিংহ প্রাসাদে ভয়ানক অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল যার ফলস্রুতিতে সিংহ প্রাসাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।[৪][৪]

২০১৫ সালের ভূমিকম্প সম্পাদনা

২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে নেপালে সংঘটিত ভূমিকম্প সিংহ প্রাসাদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছিল।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mark Tushnet; Madhav Khosla (৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫)। Unstable Constitutionalism। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 66–। আইএসবিএন 978-1-107-06895-7 
  2. "THE HISTORIC DURBARS OF KATHMANDU"। ২০১৪-১০-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৬-০৫ 
  3. JBR, PurushottamShamsher (2007)। Ranakalin Pramukh Atihasik Darbarharu [Chief Historical Palaces of the Rana Era] (Nepali ভাষায়)। Vidarthi Pustak Bhandar। আইএসবিএন 978-9994611027। সংগ্রহের তারিখ 2015  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৯ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১৬ 
  5. http://nepalitimes.com/blogs/mycity/2015/05/20/rana-palaces-after-the-earthquake/

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা