সামুড প্রাসাদ

ভারতের একটি দালান

সামুড প্রাসাদ , সামুড হাভেলি এবং সামুড বাগ(বাগান) ভারতের আম্বার ও জয়পুর অঞ্চলের ‘মহা রাওয়াল’ বা ‘মহা সাহেবদের’ অধীনে নির্মিত ঐতিহাসিক নিদর্শন। এ তিনটিরই শতবর্ষেরও অধিক সময়ের ইতিহাস রয়েছে এবং মোগল ও রাজস্থান শিল্পের অন্যতম নিদর্শন।[১][২][৩]

সামুড প্রাসাদ
সামুড প্রাসাদ ভেতরের অংশ
মানচিত্র
সাধারণ তথ্য
স্থাপত্য রীতিরাজপুত এবং মোঘল স্থাপত্য
শহরসামুদজয়পুর
দেশভারত
নির্মাণকাজের সমাপ্তিষোল শতক
গ্রাহকরাওয়াল
কারিগরী বিবরণ
কাঠামোগত পদ্ধতিমার্বেল পাথর
নকশা এবং নির্মাণ
স্থপতিরাওয়াল বৈশাল
সামুড প্রাসাদ ের ভেতরের অংশ

ইতিহাস সম্পাদনা

সামুদ রাজস্থানের একটি বড় শহর, যা বিভিন্ন সময়ে হিন্দু জমিদারদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। শহরটি একসময় অন্যতম ধনী একটি শহর ছিলো। মোগল শাসন আমলে শহরটি মহারাজ রাজবীর সিংজীর পুত্র গোপাল সিংজীর অধীনে ছিলো। বিট্রিশ শাসন আমলেও অঞ্চলটিতে মহা রাওয়াল রাজবংশকে শাসনের কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়েছিলো। ১৭৫৭ সাল হতে এখন পর্যন্ত মহা রাওয়ালদের এ কর্তৃত্বের রীতি আজও বজায় আছে।[৪][৫]

সামুড প্রাসাদ প্রথমে রাজপুত দুর্গ হিসাবে নির্মিত হয়েছিলো, কিন্তু পরবর্তীতে ১৯ শতকের শুরুর দিকে রাওয়াল বারিসাল নামক একজন বিখ্যাত ব্যক্তির দ্বারা রাজপুত ও মোগল স্থাপত্য শৈলীসমৃদ্দ একটি রাজ প্রাসাদ হিসাবে রূপান্তরিত করা হয়।[৪]

অবস্থান এবং আবহাওয়া সম্পাদনা

ভৌগিলিকভাবে নিদর্শনগুলো ভারতের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত নয়নাভিরাম আরাবালী পর্বতাঞ্চলে অবস্থিত।

সামুড অঞ্চলে গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫° সেলসিয়াস(১১৩° ফারেনহাইট) এবং শীতে তাপমাত্রা ৪° সেলসিয়াস(৩৯° ফারেনহাইট)পর্যন্ত উঠানামা করে।

ইমারতসমূহ সম্পাদনা

সামুড প্রাসাদ সম্পাদনা

প্রাসাদটি রাজ পরিবারের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ দ্বারা নির্মিত, যা সামুড গ্রামের সন্নিকটে অবস্থিত। এটি আরাবালী পর্বতের পাদদেশে দুর্গের আকৃতিতে নি্র্মিত। প্রাসাদের ভেতরের সাজসজ্জ্বা প্রাচীন রাজস্থানীয় সজ্জ্বায় সজ্জ্বিত : মার্বেল মেঝে, কারুকাজখচিত পিলার, মোজাইকসজ্জিত দেয়াল, দামী কার্পেট, ওয়াল পেইন্টিং ইত্যাদি প্রাসাদটির শোভা বর্ধন করেছে।প্রাসাদটির দক্ষিণ অংশে শীস মহল(আয়না দ্বারা সজ্জ্বিত মহল) অবস্থিত।[৬] এটা বলা হয় যে সুলতান মহল এবং দরবার হলের দেয়াল চিত্রগুলো ২৫০ বছরের পুরোনো। প্রাসাদ এলাকা গাছপালা এবং ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ, তবে পাথর দিয়ে বাঁধানো রাস্তাগুলো পরিষ্কার এবং চলাচল উপযোগী। দুর্গ হতে ৩ কিলোমিটার দূরে একটি মন্দির রয়েছে।[৭]

সামুড হাভেলি সম্পাদনা

হাভেলিটি উত্তরমুখী করে নির্মিত। এর অভ্যন্তরে সুসজ্জ্বিত ডাইনিং রূম এবং বায়ু চলাচলের প্যাসেজ রয়েছে। হাভেলিটি সত্যিকার অর্থেই একটি মনোমুগ্ধকর ঐতিহাসিক নিদর্শন।হাভেলিটির ঢোকার পথে একটি এলিফ্যান্ট রেম্প রয়েছে, যা ১৯৪০ সালে রাজ পরিবারের একজন সদস্যের বিয়ে উপলক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়।

সামুড বাগ(বাগান) সম্পাদনা

সামুড বাগ, অথবা বাগান, ১৬শ শতকের মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি একটি বাগান। বাগানটি প্রায় ২০ একর(৮.১ হেক্টর) জায়গা জুড়ে অবস্থিত এবং একটি ১৫ ফুট(৪.৬ মিটার) উঁচু দেয়াল দ্বারা আবৃত। এছাড়াও দর্শনার্থীদের জন্য বাগানটি জুড়ে ৪৪টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু নির্মাণ করা হয়েছে। তাঁবুগুলো সুদৃশ্য কার্পেট, ল্যাম্প, বিছানা, চেয়ার ও অন্যান্য আধুনিক সুবিধা সমন্বয়ে সজ্জ্বিত করা হয়েছে। এছাড়াও বাগানটিতে একটি ১৫০ বছরের পুরোনো প্যাভিলিয়ন নির্মিত রয়েছে।

পথনির্দেশনা সম্পাদনা

প্রাসাদ, হাভেলি এবং বাগানটি জয়পুর শহর হতে যথাক্রমে ৪২ কিলোমিটার(২৬ মাইল), ৬ কিলোমিটার(৩.৭ মাইল) এবং ৪৫ কিলোমিটার(২৮ মাইল) দূরে অবস্থিত। জয়পুর শহরটি দেশের অন্যান্য প্রধান প্রধান শহরের সাথে বাস, ট্রেন এবং বিমান সহযোগে চলাচলের ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক সুবিধা প্রদান করে থাকে। স্থলপথে জয়পুর দিল্লী হতে ২৬০ কিলোমিটার(১৬০ মাইল) দূরে অবস্থিত। প্রাসাদে এন্ট্রি ফ্রি নয় এবং ২০১৫ সালের আগস্ট মাস হতে তা প্রতি দর্শনার্থীর জন্য ১০০০ ভারতীয় রূপি। এই এন্ট্রি ফি এর পরিবর্তে একজন দর্শনার্থী প্রাসাদ ঘুরে দেখার পাশাপাশি বাগানে অবস্থিত মানসম্মত রেঁস্তোরা হতে খাবার বা পানীয় পেতে পারেন। প্রাসাদের দর্শনীয় জিনিসগুলো হচ্ছে- লেডিস ওয়েটিং রূম, শীস মহল, দরবার হল এবং সুইমিং পুল। আপনি যদি আম্বার দুর্গ পরিদর্শন করে থাকেন, তবে আপনি হয়তো আরও সুন্দর শীস মহল ও দরবার হল দেখে থাকবেন। বাগানটি সুন্দর এবং একই সাথে এটি একটি রিসর্টও বটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Samode Bagh"। ২৬ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৬ 
  2. Bruyn, Pippa de; Keith Bain; Niloufer Venkatraman; Shonar Joshi (২০০৮)। Frommer's IndiaSamode Palace। Frommer's। পৃষ্ঠা 412–13। আইএসবিএন 0-470-16908-7। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৬ 
  3. "About Samode Palace"। cleartrip.com। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৬ 
  4. "History, Location & Map"। Samode Palace। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৬ 
  5. "About Samode"। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৬ 
  6. Reiter, Christiane; Angelika Taschen (২০০৪)। The hotel book: great escapes AsiaA Giant treasure Chest। Taschen। পৃষ্ঠা 53। আইএসবিএন 3-8228-1913-1। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৬ 
  7. Stott, David (২০০৭)। Footprint RajasthanSamode। Footprint Travel Guides। পৃষ্ঠা 146–47। আইএসবিএন 1-906098-07-7। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৬