সহীদউল্লাহ ভূঁইয়া
শহীদ সহীদউল্লাহ ভূঁইয়া (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১১ আগস্ট, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]
সহীদউল্লাহ ভূঁইয়া | |
---|---|
মৃত্যু | ১১ আগস্ট, ১৯৭১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাসহীদউল্লাহ ভূঁইয়ার জন্ম লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের শেফালিপাড়া গ্রামে। তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার বাবার নাম ছফিউল্লাহ ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম মনোয়ারা বেগম। তার দুই ছেলে এক মেয়ে।[২]
কর্মজীবন
সম্পাদনাপাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন সহীদউল্লাহ ভূঁইয়া। কর্মরত ছিলেন তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল সৈয়দপুর সেনানিবাস। মার্চের শুরুতে সম্ভাব্য ভারতীয় আক্রমণের কথা বলে তাদের বেশির ভাগকে সেনানিবাসের বাইরে সীমান্তবর্তী এলাকায় মোতায়েন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তার দল নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। পরিবারের কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে দেওয়া একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, তিনি ১১ আগস্ট দিনাজপুর জেলার মনোহরপুর নামক এলাকায় এক যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলার অন্তর্গত হিলিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা বেশির ভাগ ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক। আর কিছু ইপিআর সদস্য। হিলির অদূরে ভারত সীমান্তে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের হেডকোয়ার্টার। এপ্রিল মাস ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাথমিক প্রতিরোধযুদ্ধকাল। তখন মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অসংগঠিত। সে জন্য তাদের আক্রমণগুলোও ছিল অসংগঠিত ও দুর্বল। এ ছাড়া তাদের ছিল না আধুনিক অস্ত্র ও যুদ্ধ প্রশিক্ষণ। দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৩-১৪ এপ্রিল বগুড়া দখল করলে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আনোয়ার হোসেন (বীর প্রতীক একদল মুক্তিযোদ্ধা সঙ্গে নিয়ে হিলিতে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানি অবস্থান নেয় চরখাই এলাকায়। ১৯ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাঁচবিবির দিক থেকে হিলিতে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ করেন। চার ঘণ্টাব্যাপী আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ ও যুদ্ধে বারুদের গন্ধে হিলির বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটে যায়। এরপর চরখাইয়ে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের আনোয়ার হোসেন হিলিতে এসে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন। চরখাইয়ে সহীদউল্লাহ ভূঁইয়া সুবেদার হাফিজ, নায়েব সুবেদার করম আলী নিজ নিজ দল নিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন। আনোয়ার হোসেনের নির্দেশে তারা ২০ এপ্রিল সকালে হিলিতে সমবেত হন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে সহীদউল্লাহ ভূঁইয়া তার দল নিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থানে ছিলেন চরখাইয়ে। অধিনায়কের নির্দেশে সেখান থেকে দ্রুত হিলিতে এসে অবস্থান নিলেন। অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণ পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের ওপর আক্রমণ করল। সহীদউল্লাহ ভূঁইয়া সাহসিকতার সঙ্গে তার দল নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের মোকাবিলা করতে থাকলেন। তুমুল যুদ্ধ চলতে থাকল। পাকিস্তানি সেনারা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। তাদের অব্যাহত মর্টার ও শেলিংয়ে হতাহত হলেন মুক্তিযোদ্ধা কয়েকজন। মুক্তিযোদ্ধারা, বিশেষ করে সহীদউল্লাহ ভূঁইয়া সাহস হারালেন না। প্রবল বিক্রমে যুদ্ধ করতে থাকলেন। সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী আবার আক্রমণ করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ছয়জন শহীদ ও কয়েকজন আহত হন। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ:৩০-১০-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।