সরোজকুমার রায়চৌধুরী
সরোজকুমার রায়চৌধুরী (ইংরেজি: Sarojkumar Roychoudhury)( ২০ আগস্ট, ১৯০১ - ২৯ মার্চ, ১৯৭২ ) বিংশ শতকের এক বিশিষ্ট বাঙালি কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। [১]
সরোজকুমার রায়চৌধুরী | |
---|---|
জন্ম | ২০ আগস্ট ১৯০১ |
মৃত্যু | ২৯ মার্চ ১৯৭২ (বয়স ৭০) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | কৃষ্ণনাথ কলেজ |
পেশা | বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক |
জন্ম ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনাসরোজকুমার রায়চৌধুরী'র জন্ম ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে র ২০ শে আগস্ট বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার মালিহাটিতে। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক ও হাজারিবাগ কলেজ থেকে আই.এ পাশ করে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে বি.এ. পড়ার সময়ই তিনি সুভাষচন্দ্র বসু ও কিরণশঙ্কর রায়ের সংস্পর্শে এসে স্বাদেশিকতায় উদ্বুদ্ধ হন। পরে কলকাতার জাতীয় বিদ্যাপীঠ থেকে ইংরাজীতে অনার্স-সহ বি.এ পাশ করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাঅধুনলুপ্ত 'কৃষক' ও 'নবশক্তি' দৈনিক পত্রিকায় সরোজকুমার কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় যোগ দেন। সেখানে দশ বৎসর সাংবাদিকতা করার পর অবসর নেন। এই সময়ে "বর্তমান" নামে এক মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
সাহিত্যকর্ম
সম্পাদনাসরোজকুমার ছিলেন বাংলা সাহিত্যের কল্লোল যুগের লেখক। তার সাহিত্য জীবন সূত্রপাত 'বৈকালী'পত্রিকায় লেখার মাধ্যমে। তার প্রথম গল্প 'রমানাথের ডায়েরি' প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক 'আত্মশক্তি' পত্রিকায়। প্রসঙ্গত সুভাষচন্দ্র বসুর আগ্রহেই সরোজকুমার এই 'আত্মশক্তি' পত্রিকাটির সম্পাদনা করতেন। এই পত্রিকাতেই রবীন্দ্র মিত্রের রাজদ্রোহ মূলক এক কবিতা প্রকাশের দায়ে তাঁকে কিছুদিন কারাবাস করতে হয়। তিনি 'কল্লোল' ও 'কালিকলম' পত্রিকাতে অনেক গল্প লিখেছেন। কল্লোল যুগের লেখক হিসাবে স্বভাবতই তার রচনায় সমকালীন মানুষের ব্যক্তি জীবন ও পারস্পরিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক যেমন জায়গা করে নিয়েছে, ঠিক তেমনই বাংলার গ্রামজীবনের কথা, রাজনীতির তাড়না দুর্ভিক্ষ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সংকট ইত্যাদিও তার রচনায় প্রাসঙ্গিকতা পেয়েছে। বাংলার গ্রাম্য জীবনের প্রতি তার মমতা ছিল একান্তই আন্তরিক। সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে কর্মক্ষেত্রে ও প্রাবন্ধিক হিসাবে পারদর্শিতা লাভ করে তিনি কথাসাহিত্যিক হিসাবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে তার প্রথম উপন্যাস "বন্ধনী" প্রকাশিত হয়। গ্রাম বাংলার বৈষ্ণব জীবনের বাস্তব চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তার ত্রয়ী উপন্যাসে( ময়ূরাক্ষী, গৃহকপোতী ও সোমলতা)। এগুলি বর্তমানে বাংলা সাহিত্যে "নতুন ফসল" নামে পরিচিত। তার উপন্যাস ও গল্প গ্রন্থের সংখ্যা পঁচিশ। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল -
রচনাসম্ভার
সম্পাদনা- উপন্যাস সমূহ-
- 'বন্ধনী (১৯৩১)
- 'শৃঙ্খল (১৯৩২)
- 'আকাশ ও মৃত্তিকা (১৯৩৩)
- 'পান্থনিবাস' (১৯৩৫)
- 'ঘরের ঠিকানা' (১৯৩৬)
- 'ময়ূরাক্ষী' (১৯৩৬)
- 'গৃহকপোতী' (১৯৩৭)
- 'সোমলতা' (১৯৩৮)
- 'হংসবলাকা' (১৯৩৭)
- 'ক্ষুধা' (১৯৪৪)
- 'কালোঘোড়া' (১৯৪৬)
- 'অনুষ্টুপছন্দ' (১৯৫১)
- 'তিমির বলয়' (১৯৫৬-৫৭)
- 'নাগরী' (১৯৬১)
- 'নীল আগুন'(১৯৬৩)
- গল্প গ্রন্থ -
- 'মনের গহনে' (১৯৩৩)
- 'দেহযমুনা' (১৯৩৬)
- 'রমণীর মন' (১৯৬০)
- 'সন্ধ্যারাগ' (১৯৬১)
জীবনাবসান
সম্পাদনাবাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক সরোজকুমার রায়চৌধুরী ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ২৯ শে মার্চ ৭০ বৎসর বয়সে কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট, ২০১৬ পৃষ্ঠা ৭৭১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬