সরহুল

ভারতের বসন্ত উৎসব

সরহুল ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের একটি বসন্ত উৎসব। এটি নতুন বছরের সূচনার প্রতীক। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের ৩য় দিন থেকে চৈত্র পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন দিন ধরে এই উৎসব পালিত হয়। উৎসবে গ্রামের পুরোহিত পাহান সৌভাগ্যের জন্য সারনায় সূর্য, গ্রামের দেবতা এবং গ্রামের পূর্বপুরুষদেরকে ফুল, ফল, সিঁদুর, মোরগ এবং তপন (মদ) উৎসর্গ করেন। এরপর স্থানীয়রা শাল গাছের ফুল হাতে নিয়ে নৃত্য পরিবেশন করে।[১][২][৩] ঐতিহ্যগতভাবে এটি পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যে বিবাহেরও প্রতীক।[৪] এটি ওরাওঁ এবং সদনদের পালন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।[৫] ওরাওঁদের মধ্যে এটি খাদ্দি (অর্থাৎ 'ফুল') নামে পরিচিত।

ঝাড়খণ্ডের রাঁচির উপকণ্ঠে সরহুল উপলক্ষে পবিত্র সর্ণ গাছের নীচে উপাসনা করছেন লোকেরা।

ভূমিজ, মুন্ডাদের মধ্যে এটি হাড়ি বোঙ্গা নামে পরিচিত।[৬] হো ও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মধ্যে এটি বাহা পরব নামে পরিচিত।[৭]

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

সারহুল এ উৎসবের নাগপুরী নাম। নাগপুরীতে সার বা সারাই দ্বারা শাল গাছকে (শোরিয়া রোবস্তা বা শাল) বোঝায় এবং হুল মানে 'সম্মিলিতভাবে'। হুল দ্বারা উদ্যানও বোঝানো হয়। এই উৎসব শালের মাধ্যমে প্রকৃতি উদযাপনের প্রতীক।[৮]

এর কিছু বিকল্প ব্যাখ্যাও রয়েছে:

হুল বলতে পারে 'বিপ্লব', যা শাল ফুলের মাধ্যমে বিপ্লবকে বোঝায়।[৯]

সার মানে বছর এবং হুল মানে শুরু। এটি একটি নতুন বছরের শুরুর প্রতীক।[১০]

উৎসব সম্পাদনা

এই উৎসবে মানুষ সারনায় পূজা করে। এই দিনে চাষ করা নিষিদ্ধ। উৎসবের এক দিন আগে মানুষ উপবাস করে। তরুণ-তরুণীরা পাশের বন থেকে শাল ফুল সংগ্রহ করে এবং কাঁকড়া ও মাছ ধরে। উৎসব উপলক্ষে মানুষ ঢোল, নাগারা ও মাদল বাজাতে বাজাতে সারনায় যায়। মানুষ শাল গাছের পূজা করে। শালাই বা শাল গাছের ফুলকে দেবতাদের নিবেদন করা হয়। গ্রামের পুরোহিত পাহান, যাকে কখনো কখনো লায়া বলা হয়, এবং পূজারীরা গ্রামের সৌভাগ্যের জন্য শাল ফুল, ফল, সিঁদুর, তিনটি মোরগ এবং তপন (মদ) গ্রাম দেবতাকে বলি দেন। সূর্য, গ্রাম দেবতা এবং পূর্বপুরুষদের জন্য পাহান বিভিন্ন রঙের তিনটি মোরগ বলি দেন। পাহান সারনায় জলের পাত্র রাখেন এবং পরের দিন পরের বছরের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেন। পাহান গ্রামবাসীদের মধ্যে শাল গাছের ফুল বিতরণ করেন। লোকেরা তাদের বাড়িতে তাদের পূর্বপুরুষদের আত্মার পূজা করে এবং তাদের বিভিন্ন খাবার দেয়। তাদের পূর্বপুরুষদের আত্মাকে খাবার নিবেদন করার পরই তারা খাবার খায়। তারপর তারা গান গায়, ঢোল, নাগারা ও মান্দার তালে নাচে। এছারাও তারা ভাত থেকে তৈরি বিয়ার হাড়িয়াও পান করে।[৭][১১][১০]

 
রাঁচিতে সরহুল নাচের মিছিল

১৯৬১ সাল থেকে গুমলায় সরহুল উৎসবে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এর আগে এমন মিছিলের আয়োজন করা হতো না, মানুষজন শুধু সারনস্থলের কাছে নাচ করতো।[৭] শহরাঞ্চলে মধ্যবিত্ত উপজাতীয় কর্মীরা আঞ্চলিক পরিচয় চিহ্নিত করার জন্য প্রকৃতি উৎসব সারহুলকে নতুনভাবে উদ্ভাবন করেছে। গ্রামীণ এলাকায় এটি দেবতাদের ধন্যবাদ জানানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।[১২]

ভারতে উদযাপিত অন্যান্য উৎসবসমূহ সম্পাদনা

সমগ্র ভারত জুড়ে নতুন বছরে পালিত হয় এমন বেশ কয়েকটি উৎসব রয়েছে। কিছু উৎসবের নাম নিচে দেয়া হল:

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "All You Need to Know About the Festival Celebrated in Jharkhand"news18। ৪ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২২ 
  2. "झारखंड में मनाया जा रहा है प्रकृति का पर्व सरहुल, झूम रहे हैं लोग"zeenews। ৪ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২২ 
  3. "सरहुल पर अनूठी परंपरा... झारखंड के इस गांव में खौलते तेल में हाथ डालकर बनाए जाते हैं पकवान"। ৩ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২২ 
  4. "'सरहुल' पर प्रकृति के रंग में रंग गया झारखंड, हर जगह निकल रही विशाल शोभा यात्राएं"zeenews। ৪ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২২ 
  5. Manish Ranjan (২০২২)। JHARKHAND GENERAL KNOWLEDGE 2021। Prabhat Prakashan। আইএসবিএন 9789354883002 
  6. "साल वृक्ष की पूजा कर मांगी सुख-समृद्धि"Dainik Jagran (হিন্দি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৯ 
  7. "आज मनाया जा रहा है प्रकृति पर्व सरहुल, जानें पूजा विधि और इसका महत्व"Prabhat khabar। ৪ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২২ 
  8. Anupam Purty (১০ এপ্রিল ২০১৩)। "SARHUL- Festival of the Mundas'"issuu। পৃষ্ঠা 20। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২২ 
  9. "सरहुल का अर्थ, सरहुल में केकड़ा का महत्व"ujjwalpradesh। ৩০ মার্চ ২০২০। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২২ 
  10. "Sarhul Festival 2022 - April 04 (Monday)"festivalsofindia। ৪ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২২ 
  11. "धरती के विवाह के रुप में आज आदिवासी समुदाय मना रहा है सरहुल, 9 प्रकार की सब्जियां बनाने का है रिवाज"Prabhat khabar। ৪ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০২২ 
  12. Alpa Shah (২০১০)। In the Shadows of the State: Indigenous Politics, Environmentalism, and Insurgency in Jharkhand, India। Duke University Press। পৃষ্ঠা 220। আইএসবিএন 978-0822392934। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০২২