সরদারি প্রথা বা সর্দারি প্রথা হলো ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের ঢাকা শহরের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। তাৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে এ প্রথার বিকাশ ঘটে। রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত এ প্রথায় প্রতিটি মহল্লায় স্থানীয় প্রভাবশালী মুসলমান ব্যক্তিদের থেকে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি করে কমিটি গঠন করা হতো যারা উক্ত মহল্লার ছোটখাটো বিষয়াদি মীমাংসা করতেন। প্রতিটি কমিটির প্রধান সরদার বা সর্দার নামে পরিচিত ছিলেন। সর্দার আজীবনের জন্য নিয়োগ পেতেন এবং মৃত্যুর পর সাধারণত তার যোগ্য উত্তরসূরী, পূর্বসূরী ও উত্তরাধিকারসুত্রে বংশানুক্রমিক সর্দার হতেন। ঢাকার নবাব পরিবার পঞ্চায়েত কমিটি অনুমোদন ও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান করতেন।

ইতিহাস সম্পাদনা

সরদারি প্রথার প্রচলন সম্পর্কে সঠিক তারিখ জানা না গেলেও অনেকে মনে করেন মুঘল শাসনামলে এটি শুরু হয়ে পরে ব্রিটিশ শাসনামলে এর বিকাশ ঘটে।[১] ব্রিটিশ শাসনামলে ঢাকার নবাবগণ ব্রিটিশ সরকারের অনুগত ছিলেন। ঢাকা মহানগরীর সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ও নবাবের আনুগত্য ধরে রাখার জন্য নবাব পরিবার প্রথাটি চালু করার পর ব্রিটিশ সরকার এটিকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৮৭৬ সালে নবাব আবদুল গনির সময়ে এ পঞ্চায়েত ব্যবস্থার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এ সময় ঢাকায় মোট ১২টি পঞ্চায়েত কমিটি ছিলো। খাজা সলিমুল্লাহর সময় আরো ২২টি কমিটি এর সাথে যুক্ত করা হয় এবং ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করা হয়। ১৯০৭ সালে নবাব পরিবার থেকে খাজা মোহম্মদ আজমকে ঢাকার সকল পঞ্চায়েত কমিটির তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়। আজমের সময়কালে ঢাকায় অনুমানিক ১৩৩ জন সরদারের সাথে সাথে ১৩৩টি কমিটি ছিলো।[২]

ঢাকায় ৮০ বছর পর্যন্ত এই প্রথা প্রচলিত ছিলো। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির সাথে সাথে সরদারি প্রথারও বিলুপ্তি ঘটে।[২] ঢাকার উল্লেখযোগ্য সরদারদের মধ্যে ছিলেন, জুম্মন সরদার, পিয়ারু সরদার, রুস্তম সরদার, মোতি সরদার, মির্জা কাদের সরদার, মওলা বকশ সরদার, মাজেদ সরদার এবং লতিফ খান সরদার।[২] ২০১৬ সালে আক্তার সরদার নামে পরিচিত ঢাকার জীবিত সর্বশেষ সরদার মৃত্যুবরণ করেন।[৩]

কার্যক্রম সম্পাদনা

পঞ্চায়েত কমিটি সাধারণত বিভিন্ন পারিবারিক, সামজিক, ভূসম্পত্তির উত্তরাধিকার ও ব্যক্তিগত বিরোধ সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তিতে ভূমিকা পালন করতো।[৩] বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানও এ প্রথায় পালিত হতো। সাধারণত যে কোন সিদ্ধান্ত সকল পক্ষ মেনে চলতেন এবং কেউ অমান্য করলে স্থানীয়ভাবে শাস্তির ব্যবস্থা ছিলো।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ঢাকায় মোগল আমলের পঞ্চায়েত প্রথা"ইত্তেফাক। ১২ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০২০ 
  2. "সরদারি প্রথা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০২০ 
  3. "চলে গেলেন ঢাকার শেষ সরদার"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা