প্রথা বা রীতি (ইংরেজি: Tradition, Custom, System) হচ্ছে সুদীর্ঘকাল থেকে চলে আসা যে কোন ধরনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, নিয়ম-কানুন, বিধি-নিষেধ, বিশ্বাস অথবা কর্মকাণ্ড যা অধিকাংশ সাধারণ জনগণ বা সমাজ কর্তৃক উৎপত্তিকাল থেকে যুগ যুগ ধরে বিনাদ্বিধায় পালন করাসহ মেনে চলে আসছে।(প্রথার সুসংগঠিত সংজ্ঞাঃ সুদীর্ঘকাল থেকে চলমান আচার অনুষ্ঠান, ধর্মীয় রীতিনীতি, নিয়ম-কানুন,আদেশ-নিষেধ, বিশ্বাস বা কর্মকাণ্ড যা অধিকাংশ সমাজ বা সাধারণ জনগণ কর্তৃক উৎপত্তিকাল হতে যুগ যুগান্তর ধরে বিনাদ্ধিধায় কঠোরভাবে মেনে আসাকে প্রথা বলে।)

চিরাচরিত প্রথা হিসেবে পোলিশ ক্রিসমাসে খাদ্য পরিবেশনার দৃশ্য

বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

প্রথা সামাজিক আচার নামেও পরিচিত। একসময় তা সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। সুন্দর, শোভন, সামাজিক অভ্যাসগুলো প্রথা হয়ে ওঠে। প্রথা ব্যক্তিগত কোন বিষয় নয়। এর সাথে সামাজিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রথা পালনে কিছুটা সামাজিক বাধ্যবাধকতা আছে।

প্রথায় কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে।[] যথা -

  • প্রথা সমাজে সর্বদা বিদ্যমান ও ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রিত করে।
  • প্রথা সামাজিক আচরণ বিধি।
  • এতে নৈতিক মূল্যবোধের প্রতিফলন রয়েছে এবং প্রথা এক ধরনের সামাজিক অনুশাসন বা আইন। সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে ব্যক্তিকে সমাজের প্রচলিত প্রথা ও নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়।
  • সামাজিক প্রথা মেনে না চললে বা ভঙ্গ করলে মানসিক শাস্তিস্বরূপ ব্যক্তিকে একঘরে করে রাখা হয়।

সমাজে অবস্থানরত বিভিন্ন স্তরের সদস্য বা প্রতিবেশীর সাথে কিরূপ আচরণ বা সম্পর্ক সৃষ্টি করা উচিত তা সামাজিক প্রথার উপর নির্ভরশীল। গুরুজনদের সম্মান জানানো, সালাম বা শুভেচ্ছা বিনিময়, শ্রদ্ধা ও সৌহার্দ্যমূলক মনোভাব, বিবাহ অনুষ্ঠান ও আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে আদর-আপ্যায়ন, নববর্ষ পালন, স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন ইত্যাদি প্রথার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

প্রয়োগ

সম্পাদনা

পূজা-পার্বন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন, সরকারী ছুটির দিন এর সাধারণ উদাহরণ। কিন্তু সামাজিক প্রথা হিসেবে বিশেষ ধরন ও রঙের কাপড় বিশেষ অর্থবহন করে। সম্মানিত বিচারকের বিশেষ ধরনের পরচুলা ব্যবহার, আইনজীবিদের কালো পোশাক পরিধান অন্যতম। কিন্তু মৌলিক চিন্তাধারা হিসেবে বিশেষ দিন বা বিশেষ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বার্তা প্রেরণও প্রথা বা রীতি হিসেবে স্বীকৃত। ঈদের দিনে কার্ড একে-অপরকে কার্ড প্রদান কিংবা অনন্য সাধারণ কৃতিত্বের জন্য উইকিতে ভার্চুয়াল পদক প্রদান এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

উৎপত্তি

সম্পাদনা

প্রথা হাজার-হাজার বছর পূর্বেকার বিষয়বস্তুকে তুলে ধরে। এর ইংরেজি হচ্ছে ট্র্যাডিশন যা ল্যাটিন ভাষার ট্র্যাডার বা ট্র্যাডারার থেকে রূপান্তরিত হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায় বহন করা, হস্তান্তর করা, নিরাপদে সংরক্ষণপূর্বক তুলে ধরা। পাশাপাশি নিত্য-নতুন প্রথারও জন্ম হচ্ছে। মূলতঃ প্রাচীন রোমানদের আইনে বৈধভাবে সম্পত্তি স্থানান্তর এবং উত্তরাধিকার নির্ণয়ে এর প্রবর্তন ও প্রয়োগ ঘটে।[][] নৃতাত্ত্বিকগণ মনে করেন যে, প্রথার উৎপত্তি হয়েছে কোন উদ্দেশ্য পূরণের স্বার্থে। সময়ের প্রয়োজনে, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক কারণ এর অন্যতম নিয়ামক। ফলে নৃতত্ত্ব এবং জীববিদ্যায় প্রথাকে স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রদান করেছে।

এন্থনী গিডেন্স এবং তার সহযোগীরা মনে করেন, প্রথার আধুনিক অর্থ উপলদ্ধিতে ইউরোপীয়রা গত দুই শত বছর ধরে আলোচনা করতে থাকে। শিক্ষা যুগের সময়কালে বিভিন্ন স্বনামধন্য দার্শনিক, চিন্তাবিদগণ সমাজ উন্নয়নে প্রথার ধারণাকে তুলে ধরেছেন।[][][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সামাজিক বিজ্ঞান, ৭ম শ্রেণী, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকা, পৃঃ ১২-১৩
  2. Anthony Giddens (২০০৩)। Runaway world: how globalization is reshaping our lives। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 39। আইএসবিএন 978-0-415-94487-8। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  3. Yves Congar (অক্টোবর ২০০৪)। The meaning of tradition। Ignatius Press। পৃষ্ঠা 9–। আইএসবিএন 978-1-58617-021-9। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  4. Shils 3–6
  5. Shils 18

আরও পড়ুন

সম্পাদনা
  • Sowell, T (1980) Knowledge and Decisions Basic Books. ISBN 04650037380
  • Polanyi, M (1964) Personal Knowledge: Towards a Post-Critical Philosophy আইএসবিএন ০-২২৬-৬৭২৮৮-৩
  • Klein, Ernest, Dr., A comprehensive etymological dictionary of the English language: Dealing with the origin of words and their sense development thus illustrating the history and civilization of culture, Elsevier, Oxford, 7th ed., 2000