সমুদ্র গুপ্ত (কবি)

বাংলাদেশী কবি ও কলামিস্ট

সমুদ্র গুপ্ত (২৩শে জুন, ১৯৪৬, - ১৯শে জুলাই, ২০০৮) একজন বাংলাদেশী কবি,কলামিস্ট ও লেখক। সমুদ্র গুপ্ত তার ছদ্মনাম; তিনি ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে এই ছদ্মনামে কবিতা, গল্প, সমালোচনা প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কলাম ইত্যাদি লিখে আসছেন। তার প্রকৃত পারিবারিক নাম আব্দুল মান্নান বাদশা।

সমুদ্র গুপ্ত
জন্ম২৩শে জুন, ১৯৪৬
হাসিল, সিরাজগঞ্জ, বৃটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৯শে জুলাই, ২০০৮
বেঙ্গালুরু, ভারত
পেশাসাহিত্য
কবি
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ Flag of Bangladesh.svg

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা

আব্দুল মান্নানের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের হাসিলে। পিতা মহসিন আলি মিঞা এবং মাতা রেহানা আলি। তিনি পারিবারিক কারণে বগুড়ার ধুনেটে এসে ধুনেট এন ইউ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। অনেক পরে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে প্রাইভেটে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন। কাজের জন্য স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। নানা পত্র পত্রিকায় কখনো সম্পাদক, কখনো রিপোর্টার কখনো অনুবাদকের কাজ করতে থাকেন। নিজে কবিতা লিখতে থাকেন। কবিতা লেখার জন্যই যাতে আবদুল মান্নান সৈয়দের সঙ্গে বিভ্রান্ত না ঘটে,সেজন্য তিনি সমুদ্র গুপ্ত ছদ্মনাম গ্রহণ করেন। [১] বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক ও গল্পকার শহীদুল জহির তার চাচাতো ভাই।[২]

কর্মজীবনসম্পাদনা

বিভিন্ন পেশায় সমুদ্র গুপ্তের জীবন কেটেছে। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি ছিলেন প্রেসের কমর্চারী, করাতকলের ম্যানেজার, জুটমিলের বদলি শ্রমিক, উন্নয়ন সংগঠনের নিবাহী, ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবসা, প্রুফ রিডার, সাংবাদিকতা, কবি ও পেশাদার লেখক।

সাহিত্যজীবনসম্পাদনা

সমুদ্র গুপ্ত বাংলাদেশের কবিতায় ষাটের দশক থেকে লেখালেখিতে সচল হলেও তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ রোদ ঝলসানো মুখ প্রকাশিত হয় ১৯৭৭ সালে। পেশাগত জীবনের নানামাত্রিক জটিলতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছে এই কবিকে। ফলে তিনি নিরন্তর সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করতে পারেন নি। তারপরও তিনি সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। আশাবাদী-আদর্শে বিশ্বাসী সমুদ্র গুপ্ত সচেতনভাবে নিজের কবিতায় জটিলতা বর্জন করেছেন এবং পাঠকের নিকট বাংলা-কবিতার ‘সহজিয়া’-সুরের আবেদন পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তথাকথিত আধুনিক বাংলা-কবিতার দুর্বোধ্যতা অতিক্রমের ক্ষেত্রে তার ‘সহজ ও আপন সুর অন্বেষণ’ সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।[৩]

সাহিত্যকর্মসম্পাদনা

কাব্যগ্রন্থসম্পাদনা

  • রোদ ঝলসানো মুখ ১৯৭৭
  • স্বপ্নমঙ্গল কাব্য ১৯৮৭
  • এখনো উত্থান আছে ১৯৯০
  • চোখে চোখ রাখে ১৯৯১
  • একাকী রৌদ্রের দিকে ১৯৯২
  • শেকড়ের শোকে ১৯৯৩
  • ঘাসপাতার ছুরি ১৯৯৮
  • সাত সমুদ্র নদীও বাড়িতে ফেরে
  • ছড়িয়ে ছিনিয়ে সেই পথ
  • চলো এবার গাছে উঠি
  • হাতে হাতে তুলে নিলে এই বাংলার মাটি রক্তে ভিজে যায়
  • তাহলে উঠে দাড়াবো না কেন
  • খালি হয়ে গেছে মাথা শুধু ওড়ে

নিবন্ধ গ্রন্থসম্পাদনা

ডিসেম্বরের রচনা (শত্রুতা চিহ্নিতকরণ ও শত্রুতা বিকাশ প্রকল্প)

সম্পাদনা গ্রন্থসম্পাদনা

  • বাংলাদেশে বঙ্কিম

গবেষণা গ্রন্থসম্পাদনা

  • বহে নিরবধি

অন্যান্যসম্পাদনা

হিন্দি, উর্দু, অসমীয়া, নেপালি, সিংহলি, ফরাসি, ইংরেজি, নরওয়েজীয়, চীনাজাপানি ভাষায় সমুদ্র গুপ্তের বহু কবিতা অনুদিত ও প্রকাশিত হয়েছে।

পুরস্কারসম্পাদনা

কবিতার জন্য হুমায়ুন কবির পুরস্কার, যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৯০), কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার (ভারত)(১৯৯৫)। ভারতের ত্রিপুরা সরকার প্রদত্ত ভাষা দিবসসহ অসংখ্য সম্মাননা সংবর্ধনায় ভূষিত হয়েছেন কবি সমুদ্র গুপ্ত।

জীবনাবসানসম্পাদনা

কবি সমুদ্র গুপ্ত মানুষের অসম্ভব ভালবাসা অর্জন করেছিলেন। তিনি অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহে আয়োজন করা হয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর। সংগৃহীত অর্থে ভারতের বেঙ্গালুরুতে তার চিকিৎসা করা হয়; শল্যচিকিৎসা সফল হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে গিয়ে মীরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।[১]

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি-২০১৯ পৃষ্ঠা ৪২০, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. "শহীদুল জহির : মননশীল সাহিত্যপ্রতিভা"দৈনিক আজাদী। ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০। ১১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২১ 
  3. অনুপম হাসান [ওরফে হাসান ফরিদ], ‘সহজ ও আপন সুর অন্বেষণ : সমুদ্র গুপ্তর কবিতা’, হামিদ রায়হান সম্পাদিত, উত্তর পুরুষ [কবি সমুদ্রগুপ্ত সংখ্যা], ঢাকা : আগস্ট ২০০২