সমরেশ বসু

ভারতীয় বাঙালি লেখক

সমরেশ বসু (১১ ডিসেম্বর ১৯২৪ – ১২ মার্চ ১৯৮৮) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তার জন্মনাম সুরথনাথ বসু;[] কিন্তু সমরেশ বসু নামেই লেখক পরিচিতি সমধিক। তিনি কালকূটভ্রমর ছদ্মনামে উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচনা করেছেন। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে। তিনি ১৯৮০ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।

সমরেশ বসু
জন্মসুরথনাথ বসু
(১৯২৪-১২-১১)১১ ডিসেম্বর ১৯২৪
বিক্রমপুর, ঢাকা
মৃত্যু১২ মার্চ ১৯৮৮(1988-03-12) (বয়স ৬৩)
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
পেশালেখক, ঔপন্যাসিক
ভাষাবাংলা
নাগরিকত্বভারতীয়
ধরনউপন্যাস, ছোটগল্প
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসাহিত্য অকাদেমি
দাম্পত্যসঙ্গীগৌরী বসু , ধরিত্রী বসু
সন্তানবুলবুল বসু (ভট্টাচার্য), দেবকুমার বসু, নবকুমার বসু, মৌসুমী বসু (সমাদ্দার), উদিতকুমার বসু

শৈশব ও কৈশোর

সম্পাদনা

তার শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আর কৈশোর কাটে ভারতের কলকাতার উপকণ্ঠ নৈহাটিতে। বাবার নাম মোহিনীমোহন বসু, মা শৈবালিনী বসু। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ। তিনি একসময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন।

কর্মজীবন

সম্পাদনা

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ইছাপুর বন্দুক কারখানায় চাকরি করেছেন সমরেশ বসু। এই সময়পর্বের মধ্যেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। দেবেশ রায় তার মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, 'জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক' (প্রতিক্ষণ, ৫ম বর্ষ, ১৭ সংখ্যা, ২–১৬ এপ্রিল ১৯৮৮)। লিখেছিলেন, 'তিনি আমাদের মতো অফিস-পালানো "কেরানি লেখক" ছিলেন না, যাঁদের সাহস নেই লেখাকে জীবিকা করার অথচ ষোল আনার ওপর আঠারো আনা শখ আছে লেখক হওয়ার।'

রাজনৈতিক জীবন ও কারাবাস

সম্পাদনা

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইছাপুরের বন্দুক ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। ট্রেড ইউনিয়ন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে ১৯৪৯-৫০ সালে জেলও খাটতে হয়। জেলখানায় তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ রচনা করেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

ছদ্মনাম

সম্পাদনা

কালকূট মানে তীব্র বিষ। এটি ছিল তার ছদ্মনাম। বহমান সমাজ থেকে বাইরে গিয়ে একান্তে বেড়াতে ঘুরে বেড়িয়েছেন আর সে অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ভ্রমণধর্মী উপন্যাস। হিংসা, মারামারি আর লোলুপতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে যে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তিনি অমৃতের সন্ধান করেছেন। তাই কালকূট নাম ধারণ করে হৃদয়ের তীব্র বিষকে সরিয়ে রেখে অমৃত মন্থন করেছেন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে৷

কালকূট ছদ্মনামে লেখকের যাবতীয় সাহিত্যকর্ম

  • ভোট দর্পণ (১৯৫২)
  • অমৃতকুম্ভের সন্ধানে (১৯৫৪)
  • স্বর্ণশিখর প্রাঙ্গণে (১৯৬৫)
  • কোথায় পাব তারে (১৯৬৮)
  • বাণীধ্বনি বেণুবনে (১৯৭১)
  • আরব সাগরের জল লোনা (১৯৭২)
  • নির্জন সৈকতে (১৯৭২)
  • মন চলো বনে (১৯৭৩)
  • বনের সঙ্গে খেলা (১৯৭৪)
  • প্রেম নামে বন (১৯৭৫)
  • অমাবস্যায় চাঁদের উদয় (১৯৭৫)
  • হারায়ে সেই মানুষে (১৯৭৫)
  • বাঁশীর তিন স্বর (১৯৭৬)
  • মিটে নাই তৃষ্ণা (১৯৭৬)
  • তুষার সিংহের পদতলে (১৯৭৬)
  • শাম্ব (১৯৭৮)
  • ঘরের কাছে আরশি নগর (১৯৭৯)
  • মনভাসির টানে (১৯৮০)
  • মুক্ত বেণীর উজানে (১৯৮১)
  • মন চল রূপনগরে (১৯৮২)
  • পিঞ্জরে অচিন পাখি (১৯৮২)
  • কোথায় সে জন আছে (১৯৮৩)
  • প্রাচেতস (১৯৮৪)
  • যুদ্ধের শেষ সেনাপতি (১৯৮৪)
  • পৃথা (১৯৮৬)
  • ধ্যান জ্ঞান প্রেম (১৯৮৬)
  • যে খোঁজে আপন ঘরে (১৯৮৭)
  • জ্যোর্তিময় শ্রীচৈতন্য (১৯৮৭)
  • পুণ্যভূমে পুণ্যস্নান (১৯৮৭)
  • অন্তিম প্রণয় (১৯৮৭)
  • এক যে ছিল রাজা (১৯৮৮)
  • পরবন্ধ (অগ্রন্থিত)

জরাসন্ধ (চারুচন্দ্র চক্রবর্তী) সম্পাদিত 'নাম নেই' গ্রন্থে 'বিচিত্র' নামে (অমৃতকুম্ভের সন্ধানের ভূমিকাংশ) কালকূটের একটি লেখা ছাপা হয়।

ভ্রমর ছদ্মনামে লেখা তিনটি উপন্যাস ১৩৮৯, ১৩৯০ ও ১৩৯১ বঙ্গাব্দের শারদীয়া প্রসাদ এ প্রকাশিত হয়:'যুদ্ধের শেষ সেনাপতি' , 'প্রভু কার হাতে তোমার রক্ত' , 'প্রেম - কাব্য - রক্ত'।

ভ্রমর ছদ্মনামে লেখকের যাবতীয় সাহিত্যকর্ম

  • আত্মজ (১৯৭৫)
  • বাসন্তীর সংসার (১৯৭৬)
  • প্রেম নিত্য (১৯৮০)
  • প্রেম নিত্য, অনিত্য সংসার (১৯৮১)
  • প্রভু, কার হাতে তোমার রক্ত (১৯৮৪)
  • শেষ অধ্যায় (১৯৭৯)
  • মরম ভরম (১৯৮০)
  • যুদ্ধের শেষ সেনাপতি (১৯৮৪)
  • উদ্ধার (১৯৮৬)
  • অন্তিম প্রণয় (১৯৮৭)
  • প্রেম কাব্য রক্ত (১৯৮৭)
  • জনক (১৯৮৮)

সাহিত্য কর্ম

সম্পাদনা

লেখকের প্রকৃত নাম ছিল সুরথনাথ বসু। ১৯৪৩ সালে 'সুরথনাথ বসু' নামে "স্বাধীনতা" পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছিল "শের সর্দার" নামক একটি ছোটগল্প।[] "সমরেশ" নাম দিয়েছিলেন তার শ্যালক, দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়। সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাসের নায়কের নাম 'সমরেশ'। দেবশঙ্করের নামটি মনে হয়েছিল খুব রোমান্টিক। সুরথনাথও খুশি হয়ে নামান্তর মেনে নিলেন। তারপর থেকে সর্বত্রই তিনি সমরেশ বসু।[] আজীবন সাহিত্যসৃষ্টি করে গিয়েছেন সেই নামেই। 'সমরেশ বসু' নামে লেখকের প্রথম প্রকাশিত রচনা "আদাব" নামক একটি ছোটগল্প। গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৪৬ সালের "পরিচয়" পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যায়। পরবর্তীকালে একটি সাক্ষাৎকারে লেখক জানিয়েছিলেন তার প্রথম গল্প প্রকাশিত হওয়ার অভিজ্ঞতা -

"এদিকে আবার তখন কেউ কেউ আমার গল্প পড়ে প্রশংসা করতে আরম্ভ করেছেন। তাঁরা বলতেন, 'তোমার গল্প তুমি ছাপতে দাও।' কিন্তু আমার ভীষণ লজ্জা করত। আমার মনে হত আমি ঠিক তখনও লিখতে শিখিনি। ওইভাবে আমার গল্প আমি ছাপতে দিতে পারব না।

যাহোক, তখন আমার হাতে-লেখা পত্রিকার জন্য আমি একটা গল্প লিখলাম।... সেই উনিশ'শ ছেচল্লিশ সালে কলকাতায় তখন দাঙ্গা হয়ে গেছে-আমি তখন একটা ছবি আঁকছিলাম। একটা মেয়ের ছবি। জলরঙ দিয়ে। সত্য মাস্টার এসে বললেন, 'তোমার এতগুলো পোস্টার লেখা বাকি, হাতে লেখা ম্যাগাজিন রয়েছে, কলকাতায় এতবড় একটা দাঙ্গা হয়ে গেল, তোমার এই বিষয়ে কোন চেতনা নেই? আর তুমি বসে বসে একটা মেয়ের ছবি আঁকছ?' তখন আমি ওই 'আদাব' গল্পটি লিখি। ছবি আঁকা তখন ছেড়ে দিলাম। ছেড়ে দিলাম মানে লেখার দিকে ঝোঁকটা দিলাম বেশি। আমার সেই 'আদাব' গল্পটি পড়ে আমার এক বন্ধু, গৌর ঘোষ, সে কিন্তু গৌরকিশোর ঘোষ না, সে বলল, তুমি এই গল্পটা পরিচয়ে পাঠাও। আমি কিন্তু তখন কোন পত্র-পত্রিকায় গল্প পাঠাইনি। ... যা হোক, গৌর আমাকে বলল, 'তুমি 'আদাব' গল্পটা পাঠিয়ে দাও।' আমি বললাম, 'না, এ গল্পটা আমি পাঠাব না। এটা ছাপার উপযুক্ত হয় নি।' কিন্তু আমার সেই বন্ধু জোর করেই- আমার স্ত্রীর, মানে, গৌরীর সঙ্গে কথা বলে... তখন ইতিমধ্যে আমার ছেলেমেয়ে হয়েছে।... আমার প্রথম সন্তান কন্যা। তারপরে আমার বড় ছেলে দেবকুমার। তার ঠিক পরেই, আমার যতদূর মনে হয়, আমি গল্পটি পাঠাই। আমি জানতাম, সে গল্প ছাপা হবে না।

ভোরবেলায় রাস্তার কলে চান করে এক বালতি জল নিয়ে বাড়ি এসে এক পেট ভাত গিলে এক মাইল দূরে শ্যামনগর থেকে ইছাপুরে যেতাম। সেখান থেকে কারখানায়। ফ্যাক্টরিতে। একদিন, ওইরকম ভাত খেতে বসেছি কারখানায় ছুটব বলে, এমন সময় আমার বন্ধু গৌর এল। তখন 'স্বাধীনতা' পত্রিকা দৈনিক বেরোত। ও আমাকে বলল 'স্বাধীনতা' পত্রিকায় শারদীয় 'পরিচয়' পত্রিকার বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে সেবার গল্প প্রবন্ধ কবিতা ইত্যাদি কে কী লিখছেন তা জানিয়ে। তাতে রয়েছে সেবারে শারদীয় 'পরিচয়'-এ গল্প লিখছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়...পরিমল গোস্বামী ও সমরেশ বসু। এটা যে আমার গল্পের বিজ্ঞাপন সেটা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কিন্তু আমার বন্ধু বলল, 'এই সমরেশ তুই ছাড়া আর কেউ নয়।' এটা শুনে আমার এত আনন্দ হল যে, সেদিন আর ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেই গেলাম না। খেয়ে দেয়ে উঠে গৌরের সঙ্গে গঙ্গার ধারে চলে গেলাম এবং সেখানে বসে গল্প করতে লাগলাম।

...পরে দেখা গেল, ওটা সত্যিসত্যিই আমার গল্প এবং গল্পটা ছাপা হবার পর চারদিকে খোঁজ পড়ে গেল, এই গল্পের লেখক কে? সত্য মাস্টার কিন্তু তখনো ব্যাপারটা জানতেন না। তিনি একদিন কলকাতা থেকে ফিরে এসে আমাকে জিগ্যেস করলেন, 'তুমি 'পরিচয়'-এ গল্প ছাপতে দিয়েছ? 'পরিচয়'-এ তোমার গল্প ছাপা হয়েছে? এটা খুব একটা আনন্দের ব্যাপার। তুমি আমাদের হিরো হয়ে গেছ! এটা জানতেই পারলাম না? তুমি তো আমাকে একবারো বল নি গল্প পাঠিয়েছ। সবাই জিগ্যেস করছে, আপনাদের এলাকার সমরেশ বসু কে? ও কি শ্রমিক? কোন চটকলে কাজ করে? এইসব নানান কিছু'..."

[]


লেখকের প্রথম উপন্যাস "নয়নপুরের মাটি"। যদিও গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ছিল "উত্তরঙ্গ"। লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। তার নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস। 'চিরসখা' নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্যে তার সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলকে নিয়ে বহু ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যা শিশুসাহিত্য হিসেবে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গোগোলের দুটি কাহিনি গোয়েন্দা গোগোলগোগোলের কীর্তি নামে চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। গোয়েন্দা গোগোলের পাশাপাশি বড়দের জন্য অশোক ঠাকুর নামক একটি গোয়েন্দা চরিত্র তিনি সৃষ্টি করেন।

উপন্যাস

সমরেশ বসু প্রণীত উপন্যাসের সংখ্যা ১০০।

  • নয়নপুরের মাটি (১৯৫২)
  • উত্তরঙ্গ (১৯৫১)
  • বি. টি. রোডের ধারে (১৯৫২)
  • শ্রীমতি কাফে (১৯৫৩)
  • গঙ্গা (১৯৫৭)
  • বাঘিনী (১৯৬০)
  • ছিন্নবাধা (১৯৬২)
  • দুরন্ত চড়াই (১৯৬২)
  • শেষ দরবার (১৯৬৩)
  • দুই অরণ্য (১৯৬৪)
  • ফেরাই (১৯৬৪)
  • ধূসর আয়না (১৯৬৪)
  • স্বর্ণ পিঞ্জর (১৯৬৫)
  • বিবর (১৯৬৫)
  • তিন ভুবনের পারে (১৯৬৬)
  • জগদ্দল (১৯৬৭)
  • স্বীকারোক্তি (১৯৬৭)
  • অগ্নিবিন্দু (১৯৬৭)
  • প্রজাপতি (১৯৬৭)
  • আত্মজ (১৯৬৭)
  • চর্তুধারা (১৯৬৮)
  • অপরিচিত (১৯৬৮)
  • পদক্ষেপ (১৯৬৮)
  • এপার ওপার (১৯৬৮)
  • বান্দা (১৯৬৮)
  • অচিনপুর (১৯৬৯)
  • অলিন্দ (১৯৬৯)
  • পাতক (১৯৬৯)
  • ভানুমতীর নবরঙ্গ (১৯৬৯)
  • মিছিমিছি (১৯৬৯)
  • সুচাঁদের স্বদেশযাত্রা (১৯৬৯)
  • যাত্রিক (১৯৭০)
  • যার যা ভূমিকা (১৯৭০)
  • বিষের স্বাদ (১৯৭০)
  • ছুটির ফাঁদে (১৯৭০)
  • অবচেতন (১৯৭০)
  • অলকা সংবাদ (১৯৭০)
  • মুখোমুখি ঘর (১৯৭১)
  • বিশ্বাস (১৯৭১)
  • সওদাগর (১৯৭১)
  • রক্তিম বসন্ত (১৯৭১)
  • তরাই (১৯৭১)
  • বন্ধ দুয়ার (১৯৭১)
  • ছায়া ঢাকা মন (১৯৭২)
  • বিকেলে ভোরের ফুল (১৯৭২)
  • একটি অস্পষ্ট স্বর (১৯৭২)
  • নিঠুর দরদী (১৯৭২)
  • রূপায়ণ (১৯৭২)
  • ওদের বলতে দাও (১৯৭২)
  • অন্ধকার গভীর গভীরতর (১৯৭৩)
  • পরম রতন (১৯৭৩)
  • অশ্লীল (১৯৭৩)
  • পথিক (১৯৭৩)
  • স্বর্ণচঞ্চু (১৯৭৩)
  • রামনাম কেবলম (১৯৭৩)
  • কামনা বাসনা (১৯৭৩)
  • ত্রিধারা (১৯৭৪)
  • হৃদয়ের মুখ (১৯৭৪)
  • মানুষ শক্তির উৎস (১৯৭৪)
  • লগ্নপতি (১৯৭৪)
  • প্রাচীর (১৯৭৪)
  • অবশেষে (১৯৭৪)
  • আমার আয়নার মুখ (১৯৭৪)
  • প্রাণ প্রতিমা (১৯৭৫)
  • নাটের গুরু (১৯৭৫)
  • অবরোধ (১৯৭৫)
  • সবুজ বনে আগুন (১৯৭৫)
  • হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা (১৯৭৫)
  • বিজড়িত (১৯৭৫)
  • সূর্যতৃষ্ণা (১৯৭৬)
  • পরের ঘরে আপন বাসা (১৯৭৬)
  • সঙ্কট (১৯৭৬)
  • বারোবিলাসিনী (১৯৭৬)
  • চৈতি (১৯৭৭)
  • আম মাহাতো (১৯৭৭)
  • মহাকালের রথের ঘোড়া (১৯৭৭)
  • ম্যাকবেথ: রঙ্গমঞ্চ কলকাতা (১৯৭৭)
  • হারিয়ে পাওয়া (১৯৭৭)
  • গন্তব্য (১৯৭৮)
  • আঁখির আলোয় (১৯৭৮)
  • আনন্দধারা (১৯৭৮)
  • মরীচিকা (১৯৭৮)
  • অপদার্থ (১৯৭৯)
  • পুতুলের প্রাণ (১৯৭৯)
  • শেষ অধ্যায় (১৯৭৯)
  • টানাপোড়েন (১৯৮০)
  • দু-মুখো সাপ (১৯৮০)
  • বিপর্যস্ত (১৯৮০)
  • জীবন যখন একটাই (১৯৮০)
  • অস্বীকার (১৯৮০)
  • অন্ধকারে আলোর রেখা (১৯৮১)
  • ভানুমতী (১৯৮১)
  • যুগ যুগ জীয়ে (১৯৮১)
  • দিগন্ত (১৯৮২)
  • পুনর্যাত্রা (১৯৮২)
  • মাতৃতান্ত্রিক (১৯৮২)
  • বিজন বিভুঁই (১৯৮৩)
  • আকাঙ্খা (১৯৮৩)
  • অভিজ্ঞান (১৯৮৪)
  • শিকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে (১৯৮৪)
  • বাথান (১৯৮৫)
  • তিন পুরুষ (১৯৮৫)
  • দশ দিন পরে (১৯৮৬)
  • জবাব (১৯৮৬)
  • খণ্ডিতা (১৯৮৬)
  • উদ্ধার (১৯৮৭)
  • প্রকৃতি (১৯৮৭)
  • মোহমায়া (১৯৮৭)
  • অয়নান্ত (১৯৮৭)
  • পুতুলের খেলা
  • শালঘেরির সীমানায়
  • রাণীর বাজার
  • পাঞ্চজন্য
  • দেখি নাই ফিরে (অসমাপ্ত) (১৯৮৭)

গল্পগ্রন্থ

তার প্রকাশিত ছোটগল্পের সংখ্যা ২০০

  • মরশুমের একদিন (১৯৫৩)
  • অকালবৃষ্টি (১৯৫৩)
  • ষষ্ঠ ঋতু (১৯৫৬)
  • মনোমুকুর (১৯৫৮)
  • উত্থান (১৯৬৬)
  • পশারিণী
  • ফুলবর্ষিয়া
  • মানুষ (১৯৭০)
  • বনলতা (১৯৬৭)
  • চেতনার অন্ধকারে (১৯৭২)
  • ছেঁড়া তমসুক (১৯৭১)
  • ধর্ষিতা (১৯৭২)
  • কামনা বাসনা (১৯৭৩)
  • জোয়ার ভাটা
  • ছায়াচারিণী (১৯৮৩)
  • কে নেবে মোরে (১৯৮২)
  • আদি মধ্য অন্ত
  • দেওয়াল লিপি
  • সুবর্ণা
  • আটাত্তর দিন পরে
  • পাপ-পুণ্য (১৯৬৭)
  • আইন নেই
  • বিকেলে শোনা
  • পঞ্চবহ্নি
  • অজানা
  • হ্রেষাধ্বনি (১৯৭৩)
  • বিদ্যুল্লতা (১৯৭৪)
  • বিপরীত রঙ্গ (১৯৭৫)
  • নাচঘর (১৯৭৬)
  • ঝিলেনগর
  • তৃষ্ণা
  • উজান
  • রজকিনী প্রেম (১৯৭৪)
  • কীর্তিনাশিনী (১৯৭৬)
  • কুন্তিসংবাদ (১৯৭৬)
  • মাসের প্রথম রবিবার (১৯৭৮)
  • অন্ধকারের গান (১৯৮০)
  • ও আপনার কাছে গেচে (১৯৮০)
  • আলোয় ফেরা
  • আলোর বৃত্তে
  • এখানে সেখানে
  • ছোট ছোট ঢেউ
  • পাহাড়ী ঢল
  • বিবর মুক্ত
  • যৌবন

উল্লেখযোগ্য গল্পসংকলন

  • শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৬৭)
  • গল্পসংগ্রহ [১ম] (১৯৭৮)
  • গল্পসংগ্রহ [২য়] (১৯৭৮)
  • গল্পসংগ্রহ [৩য়] (১৯৮০)
  • গল্পসংগ্রহ [৪র্থ] (১৯৮০)
  • গল্পসংগ্রহ [৫ম] (১৯৮১)
  • গল্পসংগ্রহ [৬ষ্ঠ] (১৯৮৩)
  • বাছাই গল্প (১৯৮৫)
  • আমি তোমাদেরই লোক (১৯৮৬)
  • স্বনির্বাচিত শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৮৮)
  • গল্প সমগ্র [১-৪]

কিশোর উপন্যাস

  • মোক্তার দাদুর কেতুবধ
  • বন্ধ ঘরের আওয়াজ
  • গোগোল চিক্কুস নাগাল্যাণ্ডে
  • সেই গাড়ির খোঁজে
  • শিমুলগড়ের খুনে ভূত
  • ভুল বাড়িতে ঢুকে
  • জঙ্গলমহলে গোগোল
  • বিদেশী গাড়িতে বিপদ
  • সোনালী পাড়ের রহস্য
  • রাজধানী এক্সপ্রেসের হত্যারহস্য
  • জোনাকি ভূতের বাড়ি

কিশোর গল্প

  • ইঁদুরের খুট খুট
  • আয়না নিয়ে খেলতে খেলতে
  • সোনালী পাড়ের রহস্য
  • হারানো বুদ্ধমূর্তি
  • কাইরং মঠে গোগোলের কাণ্ড
  • দুর্গের গড়খাইয়ের দুর্ঘটনা
  • বুনো হাতির বন্ধুত্ব
  • গোয়ায় গোগোলের প্রথম কীর্তি
  • মহিষমর্দিনী উদ্ধার
  • চোরা হাতি শিকারি
  • বাতাসীবুড়ির সোনার হার
  • গোগোল কোথায়
  • গোগোলের রায়রাজা উদ্ধার
  • গোগোলের কেরামতি
  • রত্নরহস্য ও গোগোল
  • গরাদহীন জানালায় রাক্ষস
  • টেলিফোনে আড়ি পাতার বিপদ
  • পশ্চিমের ব্যালকনি থেকে
  • অদৃশ্য মানুষের হাতছানি
  • জ্বরের ঘোরে শোনা
  • গোগোল ও বাসুপাগলা
  • গোগোল খোলা জানালার দিকে তাকিয়ে
  • উত্তর সিকিমের ভূত বাংলো
  • গোরক্ষনাথবাবুর নোটবুক

নাটক

  • লেবার অফিসার (পরে নামকরণ হয়, "প্রেত"। সমরেশ জেলবন্দি থাকাকালীন এই নাটক রচনা করেন। সম্ভবত অপ্রকাশিত)

প্রবন্ধসংকলন

  • নিজেকে জানার জন্যে (প্রবন্ধ-নিবন্ধ সমগ্র)


১৯৫৯ সালে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন "শ্রীমতী কাফে" উপন্যাসের জন্য। কালকূট ছদ্মনামে লেখা "শাম্ব" উপন্যাসের জন্য ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এছাড়াও ১৯৮৫ সালে পেয়েছেন "সন্তোষকুমার ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার" এবং ১৯৮৬ সালে পেয়েছেন এশিয়ান পেন্টস এর পক্ষ থেকে "শিরোমণি পুরস্কার"। "দেখি নাই ফিরে" উপন্যাসের জন্য ১৯৯৩ সালে মরণোত্তর আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন সমরেশ বসু।

মৃত্যু

সম্পাদনা

সমরেশ বসু ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ মারা যান। মৃত্যুকালেও তার লেখার টেবিলে ছিল দশ বছরের অমানুষিক শ্রমের অসমাপ্ত ফসল শিল্পী রামকিংকর বেইজের জীবনী অবলম্বনে উপন্যাস দেখি নাই ফিরে। এই উপন্যাসের চিত্রাঙ্কন করেন প্রচ্ছদ শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় সমরেশ বসুর ভক্ত ছিলেন। সমরেশ বসুর প্রয়াণের পর তিনি একটি কবিতা লেখেন - দেখি নাই ফিরে - সমরেশদার স্মৃতিতে । তাতে শক্তি লিখেছেন -

"দেখি নাই ফিরে-তুমি লিখেছিলে।

কিছু দেখা যায়?

এখন কি দেখতে পারো আমরা কীরকমভাবে বেঁচে আছি

প্রতিটি দরজায় যদি কড়া নাড়ি, তুমি বুঝতে ঠিক-

মন ভালো নেই বলে ছেলেটা এসেছে।


তোমার কথা ও হাসি মন ভালো করে-

একথা তুমিও জানতে-

রোগশয্যাতেও, সে কী সে সাহসী হাসি বিদায় জানাতো-

'ছোটখাটো দুঃখে এতো বিচলন তোকে কি মানায়?'

অথচ আমার রোগ এইখানে তুমি জেনেছিলে!

তুমি ছিলে অতি বড়ো, জ্যেষ্ঠ, তবু এতোটা কোমল!

তোমার শিশুর হাতে পান আমি করেছি গরল, কোনদিন

কিন্তু তুমি নিজেকে জ্যেষ্ঠর মায়ায় আসন থেকে নামাও নি

ছিলে তুমি চিরকাল চন্দনচর্চিত

যাবার সময়ও তুমি গেছো সেইভাবে।

রাজকীয় মর্জি ছিলো চরিত্রে তোমার

যাবার সময়ও তুমি গেছো সেইভাবে।

বৎসল স্বভাব ছিলো চরিত্রে তোমার

যাবার সময়ও তুমি গেছো সেইভাবে।

অসম্পূর্ণ ছিলো না কি কিংকর জীবনী?

তুমিও করলে না শেষ!

হয়তো এইই কিংকর নিয়তি-

নতুবা তোমার হাতে সেও প্রাণ পেতো

পুনর্বার!

কে যে শেষ অশেষকে করে?"।[]

সমরেশ-স্মরণে শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন আর একটি কবিতা, যেটির নাম সমরেশ বসু : একটি এলেজি


"নির্দিষ্ট ব্যাথার দিন দেখা হয়েছিল।

অথচ কি হাসি ছিল সম্মুখে আমার।

রাজকীয় হাসি ছিল সম্মুখে আমার।

নির্দিষ্ট ব্যাথার দিন ছিলে বর্ণনীয়-


কেমন বর্ণনা দিই? তুমি ছিলে বসে।

নিভৃত , চেতনশূন্য-দেয়াল-দরোজা

সব ফাঁক, দূরে যাক-যাতে হাওয়া আসে।

ঘনিষ্ঠরা কাছে নেই , তুমি ছিলে বসে,

এক আকাশ ছায়া নিয়ে তুমি বসে ছিলে।


শুনেছি সমুদ্রে ঢেউ তখনি উঠেছে।

আয়ু যৎসামান্য , তার অগোছালো হাতে -

কতোটা যে বাঁচা যায়! তাই মারা গেলে!

গোধূলির মায়া এসে তোমাকেই ছুঁলো-

কী তরুণ তপস্বীর মুখশ্রীকে আজ ,

চেতনসর্বস্ব রামকিংকরের মুখ!"।[]

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে প্রখ্যাত ভাষাবিদ ও ঐতিহাসিক ড. সুকুমার সেন এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত "হোমসিয়ানা" ক্লাবের নিয়মিত সদস্য ছিলেন সমরেশ বসু। তার মৃত্যুর পর হোমসিয়ানার এক অধিবেশনে (৭ ই জুলাই ১৯৮৯) তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে ড.সুকুমার সেন রচিত একটি সংস্কৃত কবিতা পাঠ করা হয় -

"হোমসিয়ানা সুহৃত সঙ্গে স্বাগতঃ স্বয়মাগতঃ


সভামুদ্দীপয়াং চক্রে সমরেশোঃ বসুঃ কবি।।"।[]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. mamatimanush (২০২০-০২-১৪)। "সমরেশ বসু –" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৯-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৩ 
  2. সত্যজিৎ চৌধুরী (২০১৯)। সমরেশ বসু। নতুন দিল্লি: সাহিত্য অকাদেমি। পৃষ্ঠা ৮৮। 
  3. সত্যজিৎ চৌধুরী (২০১৯)। সমরেশ বসু। নতুন দিল্লি: সাহিত্য অকাদেমি। পৃষ্ঠা ৪। 
  4. ড.নিতাই বসু (অনুলেখক) (২০২১)। সমরেশ বসু একান্ত সাক্ষাৎকার। কলকাতা: মৌসুমী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৫,১৬। 
  5. সুজিত কুমার নাগ, সম্পাদক (১৯৮৮)। সমরেশ স্মৃতি। কলকাতা: লোকনাথ প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১২৭। 
  6. দেশ (সমরেশ বসু স্মরণ সংখ্যা)। ১৯৮৮। পৃষ্ঠা ৯৪। 
  7. বাদল বসু (২০১৬)। পিওন থেকে প্রকাশক। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স। 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা