সনৎ সিংহ
সনৎ সিংহ(ইংরেজি: Sanat Singha) (২০ মার্চ, ১৯২৯ -৩১ মার্চ, ২০১৩ ) ছিলেন বাংলা গানের স্বর্ণযুগের এক যশস্বী শিল্পী। ছোটদের জন্য ছড়ার গানের জগতে জপমালা ঘোষ, অমল মুখোপাধ্যায় আর সনৎ সিংহ ছিলেন তিন নক্ষত্র। সুর-তাল-লয়ের ছন্দে নিজস্ব গায়কিতে সনৎ সিংহ যেমন জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন, ছোটদের ছড়ার গানে বাংলা সঙ্গীতের মহান ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। [১]
সনৎ সিংহ | |
---|---|
জন্ম | বালি, হাওড়া , বৃটিশ ভারত, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, ভারত | ২০ মার্চ ১৯২৯
মৃত্যু | ৩১ মার্চ ২০১৩ বালি, হাওড়া, হাওড়া , পশ্চিমবঙ্গ ভারত | (বয়স ৮৪)
ধরন | কণ্ঠশিল্পী |
পেশা | গায়ক |
কার্যকাল | ১৯৪২ –২০১৩ |
সন্তান | প্রতাপ সিংহ |
পিতা-মাতা | দেবেন্দ্রনাথ সিংহ (পিতা) ননীবালাদেবী (মাতা) |
পুরস্কার | সঙ্গীত মহাসম্মান (মরণোত্তর) |
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা
সনৎ সিংহের জন্ম বৃটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার বালিতে। পিতা দেবেন্দ্রনাথ সিংহ ও মাতা ননীবালা দেবীর কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন তিনি। তাঁদের আদি বাড়ি ছিল হুগলির খানাকুলে। বড় হয়েছেন বাড়ির উচ্চাঙ্গ সাংগীতিক পরিবেশে। তার দাদা কিশোরী মোহন ছিলেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী। বালির বাসিন্দা ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য ছিলেন তার 'সঙ্গীত গুরু' আর ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের ভাই পান্নালাল ভট্টাচার্য ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পরে তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিক্ষা নেন আচার্য চিন্ময় লাহিড়ীর কাছে। ধ্রুপদী সংগীতের তালিম নিয়ে নানা সুর-তাল-ছন্দে নিজস্ব সহজ সাবলীল গায়কিতে বহু বছর ধরে গেয়েছেন বাংলার ছোটদের জন্য আর বড়'রা তার গান শুনে হন নস্টালজিক।
সঙ্গীত জীবনসম্পাদনা
সনৎ সিংহ দূরদর্শন ও আকাশবাণী কলকাতা'র নিয়মিত সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। গ্রামোফোন রেকর্ডে প্রকাশিত হয়েছে তার সহস্রাধিক জনপ্রিয় গান। কালজয়ী যে গানগুলি আজো বাঙালি শ্রোতাদের মোহিত করে সেগুলি হল-
- বাবুরাম সাপুড়ে
- সরস্বতী বিদ্যেবতী
- রথের মেলা রথের মেলা
- ঠিক দুক্কুরবেলা ভূতে মারে ঢিল
- এক এক্কে এক
- অহল্যা কন্যার ঘুম ঘুম কি
- আশ্বিনেতে মেঠো হাওয়ায়
- কাল নাগিনী
- কে আমারে বলতে পারে রংমশালের
- টাকডুম টাকডুম ডুমাডুম
- তালে তালে তাল ফেলে
- ফুশ মন্তর ফুশ
- দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর লোকে তোমায় বলে
- বলতে পারিস মা
- ঝমাঝম মল বাজে
- রাধার মন গিয়েছে চুরি
- এই দুনিয়ায় সকল ভালো
- নাগরদোলা
- আমি বহুরূপী
- না না না বাজে না
- চলেছে চাঁদের বাড়ি
'সাড়ে চুয়াত্তর', 'হংস মিথুন' বাংলা ছায়াছবিতে নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের মুক্তিপ্রাপ্ত 'সাড়ে চুয়াত্তর' ছবিতে অভিনয়ে অংশও নিয়েছিলেন। শ্যামা সঙ্গীত, ভক্তিগীতিতেও পারদর্শী ছিলেন। এছাড়া বিচিত্র সুর ও ছন্দে বেতারের রম্যগীতিতেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। পরবর্তী কালে তার জনপ্রিয় অনেক গান রিমেক করে বহু শিল্পী বাহবা কুড়িয়েছেন। বাংলা ব্যান্ডও সনৎ সিংহের কালজয়ী গানগুলিকে ব্যবহার করেছে।
সম্মাননাসম্পাদনা
সনৎ সিংহ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাডেমি পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে 'সঙ্গীত মহাসম্মান' পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। তার মৃত্যুর পর এই পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার পুত্রকে প্রদান করে।
জীবনাবসানসম্পাদনা
বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী সনৎ সিংহ সাধারণ জীবন যাপন করতেন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি আজীবন বালির দেওয়ানগাজি রোডে বসবাস করেছেন। বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছিলেন বহুদিন। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের প্রথমে অসুস্থ হলে তাঁকে ৮ ই মার্চ বেলুড়ের নিকটস্থ বালি শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ৩১ শে মার্চ সকাল সোয়া দশটায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। [২]
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "সনৎ সিংহের জীবনাবসান (আনন্দবাজার পত্রিকা বিনোদন)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২০।
- ↑ "Sanat sinha passes away at 86"। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২০।