শোভনা নারায়ণ একজন বিখ্যাত ও স্বীকৃত ভারতীয় কথক নৃত্যশিল্পী। একজন কত্থক শিল্পী হওয়ার পাশাপাশি তিনি ভারতীয় নিরীক্ষা ও অ্যাকাউন্টস সার্ভিসের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি ভারতে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নৃত্যানুষ্ঠান করেছেন। তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৯২ সালে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।[] তাঁর গুরু কিংবদন্তি শিল্পী বিরজু মহারাজ[]

শোভনা নারায়ণ
শোভনা নারায়ণ
জন্ম
শোভনা নারায়ণ

(1949-02-17) ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ (বয়স ৭৫)
পেশানৃত্যশিল্পী
কর্মজীবন১৯৭০-বর্তমান
দাম্পত্য সঙ্গীডঃ হার্বার্ট ট্রাক্স্ল
সন্তানআরভিন ঈশান ট্রাক্স্ল
নৃত্যকত্থক

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা

সম্পাদনা

শোভনা নারায়ণ এমন একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যেখানে প্রাচীন মূল্যবোধ এবং আধুনিকতা - উভয়েরই সমান গুরুত্ব ছিল।[] তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারী এবং তার মা রাজনীতি এবং সামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন। বেশ স্বাভাবিকভাবেই, অল্পবয়স থেকেই শোভনা সরকারী কাজকর্ম এবং সমাজকর্মের সংস্পর্শে এসেছিলেন, যা পরবর্তীকালে তাঁর নিজের জীবনের একটি প্রধান অংশ হয়ে উঠেছিল। যখন তিনি মাত্র তিন বছর বয়সী ছিলেন, তাঁর মা তাকে প্রথম গুরু সাধন বোসের কাছে নিয়ে যান এবং সেখানেই তাঁর কথকের সাথে প্রথম পরিচয়।

শোভনা দিল্লীর মিরান্ডা হাউস থেকে ১৯৭২ সালে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ২০০১ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞানে এম ফিল এবং ২০০৮ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স এবং স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এমফিল সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছিলেন। তিনি ভারতীয় অডিট ও অ্যাকাউন্ট পরিষেবা[] সংস্থার একজন অফিসার হিসেবে কাজ করেন এবং ২০১০ সালে অবসর নেন। ভারতে নিযুক্ত অষ্ট্রিয়ান রাষ্ট্রদূত ড্ঃ হার্বার্ট ট্রাক্স্ল এর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।[]। তাদের একমাত্র পুত্র আরভিন ঈশান ট্র্যাক্সেল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে শোভনা দিল্লির কত্থক কেন্দ্রে পণ্ডিত বিরজু মহারাজ এবং কুন্দনলাল গাঙ্গানির অধীনে প্রশিক্ষণ নেন।

নৃত্য কর্মজীবনের সাফল্য

সম্পাদনা

একজন নৃত্যশিল্পী/উপস্থাপিকা এবং গুরু হিসাবে, শোভনা নারায়ণ হলেন বর্তমান যুগের অন্যতম সুপ্রসিদ্ধ এবং অসামান্য কথক শিল্পী; নৃত্য পরিকল্পক এবং নৃত্যশিল্পী- উভয় রূপেই তিনি সুপরিচিত। সারা বিশ্ব জুড়ে বেশ কয়েকটি মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উৎসবে দর্শকদের মন জয় করেছেন তিনি। তিনি বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধানদের সামনেও নৃত্য পরিবেশন করেছেন এবং প্রশংসিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি এমন অনেক শিল্পীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন যাঁরা তরুণ প্রজন্মের শীর্ষস্থানীয় কত্থক শিল্পী হিসেবে সুপরিচিত।

একজন নৃত্যপরিকল্পক-নৃত্যশিল্পী হিসাবে শোভনা নারায়ণ পশ্চিমী ধ্রুপদী ব্যালে, স্পেনীয় ফ্ল্যামেনকো, ট্যাপ নৃত্য, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সাথে বৌদ্ধ মন্ত্র এবং পশ্চিমী ধ্রুপদী সুরকারদের সাথে আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক নৃত্যানুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছেন এবং বিভিন্ন নৃত্যানুষ্ঠান প্রযোজনা করেছেন। তিনি ১৯৯৪ সালে "দ্য ডন আফটার"-এ পরিচালক, প্রযোজক এবং নৃত্যশিল্পী হিসেবে অংশ নেন এবং নৃত্য পরিবেশন করেন; এটি ছিল পশ্চিমী ধ্রুপদী নৃত্য-কত্থক-স্পেনীয় ফ্ল্যামেনকোর সংমিশ্রণ। ২০০৩-এ দিল্লীতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আবিলিম্পিক্সের উদ্বোধন ও সমাপনী অনুষ্ঠানের সৃজনশীল পরিচালক ছিলেন। ২০১০ সালের দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসের উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানেও তিনি দর্শকদের এক মনোগ্রাহী অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছিলেন।

এছাড়াও বেশ কিছু অনুষ্ঠানের তিনি সৃজনশীল পরিচালক-প্রযোজক ছিলেন। যেমন-

  • ১৯৯৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য
  • বেগম হজরত মহলের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ব্যালে
  • ১৯৯৯ সালে খালসা পন্থের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে গুরু গোবিন্দ সিং-এর প্রতি শ্রদ্ধানিবেদনকারী ব্যালে

তার কিছু বিশিষ্ট নৃত্যপরিকল্পনা হলঃ

  • নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর বৌঠান কাদম্বরীদেবীর প্রভাব নিয়ে "কাদম্বরী: কবির যাদুঘর" (২০১২) উপস্থাপন করেছিলেন; এ বিষয়ে আগে চেষ্টা করা হয়নি।
  • প্রখ্যাত দার্শনিক, প্রয়াত অধ্যাপক রামচন্দ্র গান্ধীর সাথে দার্শনিক বিষয়ের উপর নৃত্য রচনা - যেগুলি বিভিন্ন চিন্তাবিদ ও মণীষিদের জীবনকে কেন্দ্র করে আধারিত হয়েছিল (বিবেকানন্দ, রামন মহর্ষি, অসিসির ফ্রান্সিস, মহাত্মা গান্ধী, রামকৃষ্ণ পরমহংস)
  • মৈথিলি কবি শরণ গুপ্তের রচনা "শকুন্তলা"-র উপর ভিত্তি করে একটি নৃত্য রচনা - যা উত্তর-ভারতীয় নৃত্যের রূপের আখ্যানকে পুনরুজ্জীবনের একটি প্রয়াস

একজন 'সংগঠক' হিসেবে তিনি নিম্নলিখিত অনুষ্ঠানগুলির আয়োজন করেনঃ

  • ইন্ডিয়া হ্যাবিটাট কেন্দ্রে তরুণ নৃত্যশিল্পীদের জন্যে ললিত-অর্পণ উৎসব (প্রায় এক দশক)।
  • শাস্ত্রীয় শিল্পকলার দিকপালদের নিয়ে আশাবরী অনুষ্ঠান (দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে)।

গবেষণা এবং ছায়াছবি

সম্পাদনা

শোভনা ডকুমেন্টারি এবং অফিসিয়াল রেকর্ড সমেত গয়ার কাছাকাছি ৮টি কত্থক গ্রাম অনুসন্ধান ও আবিষ্কার করেছেন। তিনি সংস্কৃত ও এপিগ্রাফি পণ্ডিত ডাঃ কে কে মিশ্রের সাথেও কাজ করেছেন। ডঃ কে কে মিশ্র খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর কথক সম্পর্কিত অশোকীয়-ব্রাহ্মী লিপিতে লিখিত শিলালিপি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনিই প্রথম নৃত্যশিল্পী হিসেবে ‘মন্দিরের নাচ (ড্যান্স অফ দ্য টেম্পলস’ শিরোনামে অমর খাজুরাহো মন্দিরগুলির অন্তর্নিহিত দর্শন এবং কিংবদন্তির উপর একটি নাচের ভিডিও পরিকল্পনা এবং চিত্রায়ণ করেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা
  • পদ্মশ্রী, ১৯৯২
  • সঙ্গীত নাটক জাতীয় পুরস্কার ১৯৯৯-২০০০
  • দিল্লি সরকারের পরিষদ সম্মান
  • রাজীব স্মৃতি পুরস্কার
  • বিহার গৌরব পুরস্কার, ১৯৮৫
  • ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী সম্মান
  • রাজধানী রত্ন পুরস্কার
  • শ্রীনগর শিরোমণি পুরস্কার
  • রোটারি আন্তর্জাতিক পুরস্কার
  • ভারত নির্মাণ পুরস্কার
  • জাতীয় সংহতি পুরস্কার
  • ওইসকা পুরস্কার (জাপান), ১৯৯০-৯১
  • দাদাভাই নোরোজি পুরস্কার, ১৯৯৩
  • কেলভিনেটর গ্রেট পুরস্কার
  • ফিকি বণিকসভার এফএলও পুরস্কার

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Famous Kathak Dancers"Bhavalaya। ২৩ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১২ 
  2. "Shovana Narayan Biography | Childhood, Family, Contribution to Kathak Dance, Facts"www.culturalindia.net (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-০৭ 
  3. "Shovana Narayan"। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  4. "Shovana Narayan"Miranda House's website। ২৩ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১২ 
  5. Chatterjee, Rupa (২০০৭)। Raising a Daughter। পৃষ্ঠা 127। 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা