শোভনাসুন্দরী মুখোপাধ্যায়
শোভনাসুন্দরী মুখোপাধ্যায় (শোভনা দেবী ঠাকুর ১৮৭৭ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন; মারা যান ২৬শে মে, ১৯৩৭, হাওড়া[১]) হলেন একজন ভারতীয় লেখক, যিনি তাঁর লোককাহিনীর সংগ্রহের জন্য পরিচিত। তিনি ছিলেন হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা এবং লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইঝি।
শোভনাসুন্দরী মুখোপাধ্যায় | |
---|---|
জন্ম | ১৮৭৭ কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ১৯৩৭ হাওড়া, ব্রিটিশ ভারত |
অন্যান্য নাম | শোভনা দেবী, শোভনা ঠাকুর |
পিতা-মাতা |
|
আত্মীয় | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইঝি |
জীবনী
সম্পাদনাহেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঞ্চম কন্যা শোভনা দেবী ঠাকুর কলকাতার একটি উচ্চবিত্ত, ইংরেজি-শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে বেড়ে ওঠেন।[২][৩] তিনি জয়পুরের একজন ইংরেজি অধ্যাপক নগেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে বিয়ে করেছিলেন।[৩]
১৯২৩ সালে, তাঁর কাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তরুণী শোভনাকে "শিলং-এর চিঠি" ("শিলং থেকে চিঠি") শিরোনামে চিঠি-কবিতা লিখেছিলেন।[৪]
তিনি ১৯৩৭ সালে ষাট বছর বয়সে উচ্চ রক্তচাপ সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যান।[১]
লেখা
সম্পাদনাশোভনাসুন্দরী মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কর্ম-পরিকল্পনাগুলির মধ্যে একটি ছিল তাঁর পিসি স্বর্ণকুমারী দেবীর বাংলা উপন্যাস কাহাকে?-এর ইংরেজি অনুবাদ।[৩][৫] এরপর তিনি স্থানীয় মৌখিক ঐতিহ্য ও লোককাহিনী লিপিবদ্ধ করতে আগ্রহী হন।
দ্য ওরিয়েন্ট পার্লস (১৯১৫)
সম্পাদনাদ্য ওরিয়েন্ট পার্লস: ইণ্ডিয়ান ফোকলোর বইটিতে ২৮টি লোককাহিনী রয়েছে, যা তিনি নিজে সংগ্রহ করেছিলেন, কিছু পেয়েছিলেন পরিবারের কর্মচারীদের কাছ থেকে।[২][৩][৬] বইটিতে তাঁর ভূমিকাস্বরূপ টীকা থেকে তাঁর অনুপ্রেরণা এবং প্রক্রিয়ার বর্ণনা পাওয়া যায়:
আমার কাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প পড়ার সময় এই গল্পগুলি লেখার ধারণাটি আমার মাথায় আসে। কিন্তু তাঁর মতো উদ্ভাবনী প্রতিভা আমার নেই, তাই আমি লোক-কাহিনী সংগ্রহ করে তাদের ইংরেজি পোশাক দিই; এবং নিম্নলিখিত পৃষ্ঠাগুলিতে থাকা গল্পগুলি আমাকে গ্রামের বিভিন্ন নিরক্ষর লোক বলেছিল, এবং একজন অন্ধ ব্যক্তি যে এখনও আমার সেবায় নিয়োজিত, সে অক্ষয় স্মৃতি এবং গল্প বলার দুর্দান্ত ক্ষমতা নিয়ে আমাকে বলেছিল।[৭]
দ্য ওরিয়েন্ট পার্লস -এর পর্যালোচনা করা হয়েছিল দ্য ডায়াল ও দ্য স্পেক্টেটরের মতো প্রকাশনাগুলিতে এবং বইটি প্রকাশের পরপরই সেটি সারা বিশ্বের গ্রন্থাগারে পৌঁছে গিয়েছিল।[৮][৯][১০] বইটি বাংলা লোককাহিনীকে সারা বিশ্বের ইংরেজি-ভাষী লোকসাহিত্যিকদের নজরে এনেছে। তারা কম্পিউটার-সহায়ক অধ্যয়নের নতুন রূপ সহ তাদের তুলনামূলক কাজে এটিকে একটি উৎস হিসাবে ব্যবহার করেছে।[১১][১২][১৩][১৪] ভারতীয় মহিলাদের লেখার সাম্প্রতিক একাডেমিক সংগ্রহে তাঁর গল্পগুলি পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।[১৫]
কিছু পণ্ডিত শোভনাসুন্দরী মুখোপাধ্যায়ের কাজটিকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক নৃতাত্ত্বিকতার সাথে পদ্ধতি এবং শৈলীর অনুরূপ হিসাবে একই অবস্থান রেখেছেন।[২][১৬] অন্যরা ভারতে এবং অন্যত্র উৎপাদিত অন্যান্য ভিক্টোরিয়ান ছোটগল্পের সংকলনের সাথে এর সাদৃশ্য বর্ণনা করেছেন, যা সামাজিক সংস্কার সম্পর্কে সূক্ষ্ম ধারণায় ভরা।[১৭] অন্যরা স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি তাঁর আগ্রহকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত হিসেবে দেখেন।[১৮] অন্য একজন পণ্ডিত যুক্তি দেন যে তাঁর মুখবন্ধ একজন মহিলা লেখকের সীমাবদ্ধ অবস্থানকে স্বীকার করে।[১৯]
পরের কাজ
সম্পাদনাশোভনাসুন্দরী মুখোপাধ্যায় ১৯১৫ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে লণ্ডন-ভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা ম্যাকমিলানের জন্য ভারতীয় লোককাহিনী, ধর্ম, সংস্কৃতি এবং পুরাকথার উপর চারটি বই প্রকাশ করেছিলেন। তার মধ্যে ইণ্ডিয়ান ফেবলস অ্যাণ্ড ফোক-লোর (১৯১৯) এবং দ্য টেলস অফ দ্য গডস অফ ইণ্ডিয়া (১৯২০)-তে তিনি এই গল্পগুলির জন্য তাঁর উৎস উপাদানের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যা তিনি আগে করেননি।[৩][২০]
লেখা
সম্পাদনা- টু হুম? অ্যান ইণ্ডিয়ান লাভ স্টোরি (তাঁর পিসি স্বর্ণকুমারী দেবীর কাহাকে?-এর অনুবাদ) (১৮৯৮[৫] বা ১৯১০[৩])
- দ্য ওরিয়েন্ট পার্লস: ইণ্ডিয়ান ফোকটেলস (১৯১৫) (উইকিসোর্সে; Archive.org-এ )
- ইণ্ডিয়ান নেচার মিথস (১৯১৯) (ইন্টারনেট আর্কাইভে মুক্ত অ্যাক্সেস)
- ইণ্ডিয়ান ফেবলস অ্যাণ্ড ফোকলোর (১৯১৯) (ট্রান্সক্রিপশন প্রজেক্ট; হাতিট্রাস্টে মুক্ত অ্যাক্সেস; GoogleBooks-এ মুক্ত অ্যাক্সেস)
- দ্য টেলস অফ দ্য গডস অফ ইণ্ডিয়া (১৯২০)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Deaths"। The Times of India। Mumbai, India। ১০ জুন ১৯৩৭। পৃষ্ঠা 2।
- ↑ ক খ গ Prasad, Leela (২০২০-১১-১৫)। The Audacious Raconteur: Sovereignty and Storytelling in Colonial India (ইংরেজি ভাষায়)। Cornell University Press। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 978-1-5017-5228-5।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ Deb, Chitra (২০১০-০৪-০৬)। Women of The Tagore Household (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin UK। আইএসবিএন 978-93-5214-187-6।
- ↑ Das, Manosh (জুন ২৮, ২০১২)। "Tagore's 'Letter from Shillong' in English"। The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-০৭।
- ↑ ক খ Rani, K. Suneetha (২০১৭-০৯-২৫)। Influence of English on Indian Women Writers: Voices from Regional Languages (ইংরেজি ভাষায়)। SAGE Publishing India। আইএসবিএন 978-93-81345-34-4।
- ↑ Prasad, Leela (অক্টোবর ২০১৫)। "Cordelia's Salt: Interspatial Reading of Indic Filial-Love Stories": 253।
- ↑ Mukhopadhyay, Shobhanasundari (১৯১৫)। The Orient Pearls (ইংরেজি ভাষায়)। MacMillan and Co., Ltd.।
- ↑ Bulletin of the Public Library of the City of Boston (ইংরেজি ভাষায়)। The Trustees of the Boston Public Library। ১৯১৬। পৃষ্ঠা 123।
- ↑ "New Books"। এপ্রিল ১৩, ১৯১৬: 394 – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ "The Orient Pearls by Shovona Devi (book review)."। ডিসেম্বর ১৮, ১৯১৫: 885 – ProQuest-এর মাধ্যমে।
- ↑ Brown, W. N. (১৯২১)। "Vyaghramari, or the Lady Tiger-Killer: A Study of the Motif of Bluff in Hindu Fiction": 139 – GoogleBooks-এর মাধ্যমে।
- ↑ Bruce, James Douglas (১৯২৩)। The Evolution of Arthurian Romance from the Beginnings Down to the Year 1300 (ইংরেজি ভাষায়)। Johns Hopkins Press। পৃষ্ঠা 22।
- ↑ Davidson, Hilda Ellis; Davidson, Hilda Roderick Ellis (২০০৬)। A Companion to the Fairy Tale (ইংরেজি ভাষায়)। DS Brewer। পৃষ্ঠা 245। আইএসবিএন 978-1-84384-081-7।
- ↑ Colby, B. N.; Collier, George A. (১৯৬৩)। "Comparison of Themes in Folktales by the General Inquirer System": 318–323। আইএসএসএন 0021-8715। জেস্টোর 537928। ডিওআই:10.2307/537928।
- ↑ Souza, Eunice de; Pereira, Lindsay (২০০৪)। Women's Voices: Selections from Nineteenth and Early Twentieth Century Indian Writing in English (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press India। পৃষ্ঠা 380। আইএসবিএন 978-0-19-566785-1।
- ↑ Prasad, Leela (২০০৩)। "The Authorial Other in Folktale Collections in Colonial India: Tracing Narration and its Dis/Continuities": 7। ডিওআই:10.1177/a033107।
- ↑ K., Naik, M. (১৯৮৭)। "Chapter 3: The Winds of Change: 1857 to 1920"। Studies in Indian English literature। Sterling Publishers। আইএসবিএন 81-207-0657-9। ওসিএলসি 17208758।
- ↑ Islam, Mazharul (১৯৮৫)। Folklore, the Pulse of the People: In the Context of Indic Folklore (ইংরেজি ভাষায়)। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 117।
- ↑ Roy, Sarani (২০২১-০৭-৩১)। "Defining the Rupkatha: Tracing the Generic Tradition of the Bengali Fairy Tale": 488–506। আইএসএসএন 0045-6713। ডিওআই:10.1007/s10583-021-09457-6।
- ↑ Shovona, Devi (১৯১৯)। Indian Fables and Folk-lore (ইংরেজি ভাষায়)। Macmillan।