হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর
হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৪–-১৮৮৪) হলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র; তাঁর আরো এক পরিচয় হল ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্মানো ২১ জন প্রকৃত ব্রাহ্ম সন্তানদের মধ্যে তিনিই প্রথম ছিলেন, যাঁদের পরিবার ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর কলকাতায় প্রথম ব্রাহ্ম আদর্শে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর এক নিবিড় ব্যক্তিগত কর্মপদ্ধতি ছিল; তাঁর বহুল পরিচিতি ছিল তিনি কঠোর অনুশাসনে দায়িত্ব সহকারে ছোটো ভাইদের পড়াশোনায় নজর দিতেন; তৎসহ বিশাল পারিবারিক সম্পত্তির প্রশাসকও ছিলেন ।
তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন; আর তিনি তাঁর পিতার নিয়মিত আধ্যাত্মিক সহযোগীও ছিলেন এবং বয়সে তরুণ হওয়া সত্ত্বেও তিনি তাঁর পিতা এবং তত্ত্ববোধিনী সভার প্রবীণদের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মেদর প্রথম মতবিরোধের সময় কলকাতা ব্রাহ্ম সমাজ থেকে অ-ব্রাহ্মণ কর্মীদের বহিষ্কার করার ব্যাপারে তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আদি ধর্ম নামে এক ধর্ম কেবলমাত্র তাঁর দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ব্রাহ্মধর্ম থেকে বৃহত্তর উন্নয়ন হয়ে আজ শুধুমাত্র ভারতেই ৮০ লক্ষেরও বেশি অনুগামী তৈরি হয়েছে।
হেমেন্দ্রনাথের অন্যান্য ভাইবোনদের মতো তাঁর নিজেরও বিবিধ বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল যা একটা পলিম্যাথ এবং 'এই পরিবারের বৈজ্ঞানিক' হিসেবে বিবেচিত হতে পারত। তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন এবং ভৌত বিজ্ঞান বিষয়ে নিবন্ধসমূহ রচনা করেছিলেন যেটা বিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রদের জন্যে একটা পাঠ্যপুস্তকরূপে তাঁর সংকলন এবং সম্পাদনা করার পরিকল্পনা ছিল। যদি তাঁর অকাল মৃত্যু প্রকল্পটি শেষ করতে বাধা হয়ে না-থাকত, তাহলে এটাই বাংলা ভাষায় প্রথম বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তক হতে পারত।
১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর বেতার তরঙ্গ এবং বিদ্যুৎচুম্বকীয় প্রসারের ক্ষেত্রে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছিলেন। ১৮৭২-৭৩ সময়কালে তিনি তাঁর গবেষণার ফলাফলের ওপর বিভিন্ন নিবন্ধ লিখেছিলেন; আর একজন ব্রাহ্মণ রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদি তাঁর ওই বিষয়গুলোর প্রতিলিপি লিখেছিলেন। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁর সংকলিত পাণ্ডিত্যপূর্ণ প্রথম এশীয় পদার্থবিজ্ঞানের বই 'প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের স্থূলমর্ম' নামে প্রকাশিত হয়েছিল, ১৮৭৮-৭৯ খ্রিস্টাব্দে যার নতুন সংস্করণ হয়েছিল। যদিও এই বিষয়ে থাকা জ্ঞান সম্ভাব্যভাবে বিস্ফোরক ছিল, এগুলোর প্রচার আদি ব্রাহ্ম সমাজের ব্রাহ্মণদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীকালে হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর ঠাকুরদা দ্বারকানাথ ঠাকুরের আদি ব্রাহ্ম সমাজের রেকর্ডের মধ্যে থাকা যাবতীয় কাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।[১]
হেমেন্দ্রনাথ তাঁর অসাধারণ শারীরিক শক্তি এবং মল্লযুদ্ধে পারদর্শিতার জন্যে পরিচিত ছিলেন - তাঁকে বলা হোত একজন 'প্রখ্যাত মল্লযোদ্ধা',[২] তিনি জুডো এবং নিনজৎসু ধরনের যুদ্ধ কলাতেও অভিজ্ঞ ছিলেন। সময় ও জায়গা বিশেষে অতীতের রাজ যোগ পর্যায়ে তাঁর উচ্চতর স্তরে নিয়ন্ত্রণ ছিল। সেযুগের ব্যতিক্রমী ব্যক্তি হিসেবে তিনি তিন পুত্রসন্তানের জন্মদানের পর শুধুমাত্র কন্যাদের জন্ম দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে তাঁদের প্রথাগত শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি শুধুমাত্র তাঁদের বিদ্যালয়েই ভর্তি করেননি বরঞ্চ তাঁদেরকে সংগীত, শিল্পকলা এবং ফরাসি ও জার্মানের মতো ইউরোপীয় ভাষায় প্রশিক্ষিত করে তুলেছিলেন। তাঁর দূরদূষ্টিসম্পন্ন মানসিকতার আর একটা নিদর্শন হল যে, তিনি কার্যকরভাবে হাঁকডাক করে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে তাঁর কন্যাদের জন্যে যথোপযুক্ত পাত্রের খোঁজ করেছিলেন এব্য সুদূর উত্তর প্রদেশ ও অসম রাজ্যের মতো স্থানে কন্যাদের বিবাহ দিয়েছিলেন। একজন কট্টর আধুনিকতাবাদী হিসেবে তিনি ঠাকুর পরিবারেরে নারীদের (বিশেষত তাঁর কন্যাদের) জন্যে বিভিন্ন আর্থিক টাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং যার ফলশ্রুতিতে বোলপুর লাগোয়া শান্তিনিকেতন সংস্থাপন হয় এবং পরবর্তীতে যেটা বিশ্বভারতী হিসেবে গঠিত হয়েছিল।
একজন বাস্তবিক এবং বৈজ্ঞানিক মানবতাবাদী হিসেবে বাংলায় তাঁর ভূসম্পত্তির চাষিদের তিনি গভীরভাবে ভালোবাসতেন।
হেমেন্দ্রনাথ ও তত্ত্ববোধিনী
সম্পাদনা১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা ব্রাহ্ম সমাজের সঙ্গে একীকরণের পর তত্ত্ববোধিনী সভার ধারাবাহিক উন্নতির ফলে তত্ত্ববোধিনীর বাছাই করা এক ব্রাহ্মণ গোষ্ঠীর একটা সংস্কারক আকর তৈরি হয়, যেটা কলকাতা ব্রাহ্ম সমাজের একাংশ বাদে ১৮৫৮ থেকে ১৮৬৫ সময়কালের পর আদি ধর্ম নামে উদ্ভূত হয়েছিল। এই আকর প্রাথমিকভাবে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসগরের অধীনে ছিল যিনি পরবর্তীকালে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে একে হেমেন্দ্রনাথের ওপর অর্পণ করেছিলেন। পরিশেষে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে হেমেন্দ্রনাথ দায়িত্ব নিয়ে এই ধর্মে অ-ব্রাহ্মণদের ধর্ম প্রচারকের পদ থেকে বিতাড়িত করেন। এর পর তিনি ব্রাহ্ম অনুগামীদের জন্যে প্রথাগত ধর্মচর্চা, ধর্মানুষ্ঠান এবং পর্যবেক্ষণের গবেষণা সংগঠিত করেন যা ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে গোপনীয়ভাবে ব্রাহ্ম 'অনুষ্ঠান' হিসেবে প্রচারিত হয়েছিল। এই 'অনুষ্ঠান' ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ পরিবারগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ প্রথম চুক্তি ছিল এবং এটা তাঁর দ্বিতীয়া কন্যা সুকুমারীর বিবাহের জন্যে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। এই 'অনুষ্ঠান' ব্রাহ্মণদের পবিত্র পৈতে বর্জনে যুক্ত থাকায় যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল এবং পরবর্তী সময়ে পৈতে গ্রহণ না-করা অ-ব্রাহ্মণদের জন্যেও সামান্য কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল।
ব্রাহ্ম দর্শন
সম্পাদনা১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্ম দর্শনের বিবরণ:
তখন আমি বাইরে এলাম এবং একটা অশ্বত্থ গাছের তলায় বসলাম এবং সাধুদের শিক্ষা অনুযায়ী আমার আত্মার মধ্যে অধিষ্ঠিত ঈশ্বরের শক্তির ওপর ধ্যান করতে শুরু করলাম। আমার মন আবেগে ভরে গেল, আমার চোখদুটো জলে ভরে গেল। আচমকা আমার হৃদকমলে ব্রহ্মের ঔজ্জ্বল্য দর্শন করলাম। আমার সারা শরীর জুড়ে একটা শিহরণ হয়ে গেল, আমি ধরাছোঁয়ার বাইরে একটা আনন্দ অনুভব করলাম। কিন্তু পরমুহূর্তে আমি তাকে আর দেখতে পেলামনা। ওই আনন্দঘন দর্শনের পর সকল দুঃখ ঘুচে যায়, আমি হঠাৎ ভূমি থেকে উত্থিত হলাম। আমার শক্তির ওপর একটা বিরাট বিষণ্ণতা এসেছিল। চিন্তাশক্তির দ্বারা আমি পুনরায় তাকে দেখার চেষ্টা করেছিলাম, এবং দেখতে পাইনি। আমি রোগগ্রস্তের মতো হয়ে গিয়েছিলাম এবং তা থেকে নিবৃত্ত হইনি। ইতিমধ্যে আমি হঠাৎ এক আকাশবাণী শুনলাম, 'এই জীবনে তুমি আমাকে আর দেখতে পাবে না। যাদের হৃদয় পবিত্র হয়নি, যারা উচ্চতম যোগ অর্জন করেনি, তারা আমাকে দেখতে পাবে না। কেবলমাত্র তোমার ভালোবাসা আমাকে উদ্দীপিত করলে আমি একবারের জন্যে তোমার সামনে বিরাজমান হব।'[৩]
পুত্রকন্যাগণ
সম্পাদনাহিতেন্দ্রনাথ (পুত্র), ক্ষিতীন্দ্রনাথ (পুত্র), ঋতেন্দ্রনাথ (পুত্র) প্রতিভা (কন্যা), প্রজ্ঞা (কন্যা), অধি (কন্যা), মনীষা (কন্যা), শোভনা (কন্যা), সুষমা (কন্যা), সুনরিতা (কন্যা), সুদক্ষিণা (কন্যা)
ক্ষিতীন্দ্রনাথ আদি ব্রাহ্ম সমাজের সরকারি ঐতিহাসিক এবং তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন, পৌত্র কমান্ডার অমৃতময় মুখার্জি আইএন দ্বারা এক কর্তব্য পালিত হয়েছিল। যখন দেবেন্দ্রনাথের সময়ে, যিনি সমস্ত সম্পত্তি পুনর্বণ্টন করেছিলেন এবং ওই প্রক্রিয়ায় ঠাকুর পরিবারের অন্যান্য নবীন বংশধরদের ন্যায্য অংশ দিতে অস্বীকার করেছিলেন তিনি নিরলসভাবে সেই সময় ঠাকুর পরিবারের হারানো নথি উদ্ধারের চেষ্টা করেন।
প্রতিভা দেবী আশুতোষ চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের পুত্র আর্য চৌধুরী ইংল্যান্ডে স্থাপত্য শিল্প অধ্যয়ন করেছিলেন।[৪]
প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী প্রখ্যাত অসম লেখক সাহিত্যার্থী লক্ষ্মীনাথ বেজবড়ুয়ার (১৮৬৮-১৯৩৮) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন (যার পিতা আসামের শেষ রাজার চিকিৎসক ছিলেন)। "বেজবড়ুয়ার আবিষ্কারমূলক প্রতিভা এক উচ্চস্তরের কৌতুকপূর্ণ গ্রহণযোগ্য ক্ষমতা ... ও আপুনার দেশ হল সর্বকালের ভীষণ জনপ্রিয় অসমীয়া দেশাত্মবোধক গান"[৫] এবং কার্যত অসমের সঙ্গীত। প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী (ঠাকুর) নিজগুণে একজন লেখিকা ছিলেন, তার রান্নার বই আমিষ ও নিরামিষ আহার (১৯০০, পুনঃমুদ্রণ ১৯৫৫) কনের সাজে বধূদের একটা গুণমান দিয়েছিল, এবং তাঁর "ইন্ডিয়ান মিসেস বীটান" খেতাব অর্জন হয়েছিল। ১৮৯৭-১৯০২ সময়কালে প্রজ্ঞাসুন্দরী ঠাকুর-বাড়ি থেকে প্রথম প্রকাশিত অভ্যন্তরীণ পুণ্য পত্রিকার সম্পাদিকা ছিলেন। প্রকাশনার বিষয় ছিল কল্পবিজ্ঞান, কবিতা ও গৃহবিজ্ঞান এবং রান্না, পরবর্তীকালে হিতেন্দ্রনাথ এবং রিথেন্দ্রনাথ এর সম্পাদনা করেছিলেন।
মনীষা দেবী কলকাতার প্রখ্যাত সার্জন ডি এন চ্যাটার্জির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি এডিনবরাতে শিক্ষা নিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে অসমে বসবাস করতেন। তাদের কন্যা দীপ্তি চৌধুরী পাঞ্জাবের প্রখ্যাত আদি ধর্ম সমাজ সংস্কারক পণ্ডিত নবীন চন্দ্র রায়ের পরিবারে বিবাহ করেন। সুষমা দেবী ব্যারিস্টার দ্বারিকানাথ মুখার্জির সঙ্গে বিবাহ করেন, তাঁদের চার পুত্র এবং দুই কন্যা: জ্যেষ্ঠ সন্তান (সন্ন্যাসী হয়েছিলেন), লোকেন্দ্রনাথ মুখার্জি (কখনো বিবাহ করেননি) একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, তৃতীয় পুত্র (সন্ন্যাসী হয়েছিলেন), ডা. ভার্গনাথ মুখার্জি গৌরী দেবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, কন্যা ভারতী জনক প্রকাশ গাঙ্গুলিকে (চিত্রশিল্পী জামিনী প্রকাশ গাঙ্গুলির সন্তান) বিবাহ করেন, কন্যা (শৈশবে মৃত), ভাস্করনাথ মুখার্জি ঊষা দেবীকে বিবাহ করেন।
হেমেন্দ্রনাথের কনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন একজন কন্যা সুদক্ষিণা ওরফে পূর্ণিমা দেবী (পরবর্তীকালে শ্রীমতী জ্বালা প্রসাদ) যিনি কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ৬ নম্বর দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনে ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে জন্মগ্রহণ করেন। পূর্ণিমা দেবী কলকাতায় পার্ক স্টিটের লরেটো কনভেন্টে (ইউরোপীয়দের জন্যে এক বিদ্যালয়) শিক্ষালাভ করেছিলেন; একজন অনাবাসী ছাত্রী হিসেবে ইংরেজির অতিরিক্ত তিনি বাংলা, সংস্কৃত, উর্দু, হিন্দি, ফরাসি ভাষা, পিয়ানো এবং বেহালা বাজানো জানতেন। তিনি কেম্ব্রিজ ট্রিনিটি কলেজ থেকে সংগীত পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। তিনিই যুক্ত প্রদেশে বিবাহ করা প্রথম বাঙালি মহিলা, তাঁর স্বামী ছিলেন প্রয়াত সম্মাননীয় পণ্ডিত জ্বালা প্রসাদ, এমএ, ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের হারদইয়ের ডেপুটি কমিশনার, (ইম্পিরিয়াল সিভিল সার্ভিসের একজন আধিকারিক, এক অভিজ্ঞ কংগ্রেস নেতা, প্রয়াত কানোয়ার জিতেন্দ্র প্রসাদের মহান পিতামহ ছিলেন। তিনি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়র জন্যে ডায়না ম্যাচে বিপিআরএ পদক জিতেছিলেন। তিনি একজন কুশলী ঘোড়সওয়ার হয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে তাঁর গ্রামের চারিদিকে ঘুরতেন এবং এক বিশেষজ্ঞ শিকারি হয়ে তাঁর স্বামীর সঙ্গে বড়ো ধরনের শুটিংয়ে অংশ নিতেন। ভারতে নারীদের শিক্ষা এবং উন্নতিতে তিনি একান্তভাবে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর স্বামীর স্মৃতিতে উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরে তিনি 'দ্য পণ্ডিত জ্বালা প্রসাদ কন্যা পাঠশালা' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যুক্ত প্রদেশের মজফফরনগরে হিউয়েট মডেল গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি সাহায্য করেছিলেন, এবং শাহজাহানপুর ও মজফফরনগরে পর্দানসীন মহিলাদের উন্নয়নকল্পে পর্দা ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি শাহজাহানপুর জেলার বিভিন্ন গ্রাম এবং উত্তরাখণ্ডের নৈনিতালে একটা সুন্দর পাহাড়ি সম্পত্তির (যাকে বলা হয় অ্যাবটসফোর্ড, প্রসাদ ভবন) মালকিন ছিলেন [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে (এখন সেখানে তাঁর চতুর্থ প্রজন্মের প্রসাদেরা তাঁদের পূর্বসুরিদের ঐতিহ্য নিয়ে আজ পর্যন্ত অবস্থান করছেন), এবং একটা বাড়ি বাদামি বাগ, কাশ্মীরের শ্রীনগরে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে সেনাবাহিনী দখল করেছিল, বর্তমানে সেই জগন্নাথ পুরীতে সেনাপ্রধানের আবাস এবং বাড়ি সৈকত। তিনি হিন্দি প্রকাশন 'উনকি বুনত কি প্রথাইজি শিক্ষা' বইয়ের লেখিকা যেটা যুক্ত প্রদেশের এডুকেশনাল টেক্সটবুক কমিটি বিদ্যালয়ের পাঠ্য বই হিসেবে নির্বাচন করেছে। 'দ্য লাস্ট ল্যাম্প আউট' নামে এক ইংরেজি বইয়ের লেখায় তিনি ব্যস্ত ছিলেন। তিনি কেসর-ই-হিন্দ পদকের প্রাপক এবং প্রথম ভারতীয় নারী যিনি সেনা আইন প্রয়োগের থেকে মুক্ত ছিলেন।[৬]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ History of Adi Brahmo Samaj, vol 1, 1897
- ↑ "Gurudev Rabindranath Tagore - A Biography", Author Rekha Sigi. Page 15, আইএসবিএন ৮১-৮৯১৮২-৯০-০
- ↑ p.27 "Devendranath Tagore" - "A Source Book of Modern Hinduism" Glyn Richards 1996, আইএসবিএন ০-৭০০৭-০৩১৭-৯
- ↑ Selected letter of Rabindranath Tagore, 1997, আইএসবিএন ০-৫২১-৫৯০১৮-৩, edited Krishna Dutta, pagina 141,142
- ↑ "Encyclopedia of Indian Literature Volume 1, 1989, pagina 416-418.
- ↑ WHO'S WHO IN INDIA - SECOND SUPPLEMENT. https://archive.org/details/secondsupplement00luckrich