শৈবাল সাগর
শৈবাল সাগর বা Sargasso Sea হলো সমুদ্রের মাঝে স্রোতহীন অঞ্চল, যেখানে শৈবাল ও অন্যান্য আগাছা জন্মায়। এটা পৃথিবীর একমাত্র 'সাগর' যার কোনো উপকূল নেই। এটা ১,১০৭ কিমি প্রশস্ত এবং ৩,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ।[১]
ব্যুৎপত্তিসম্পাদনা
"সারগাসো" (Sargasso) শব্দটি পর্তুগিজ শব্দ "সারগাসাম" (Sargassum) থেকে এসেছে, যার অর্থ সামুদ্রিক আগাছা।
সৃষ্টির কারণসম্পাদনা
কয়েকটি সমুদ্রস্রোত পরস্পর মিলনের ফলে চক্রাকার জলাবর্ত সৃষ্টি হয়। আয়ন বায়ু ও পশ্চিমা বায়ুর সন্ধিস্থলে মৃদু বায়ুর প্রাদুর্ভাবের কারণে জলাবর্ত-এর মাঝের স্থান স্রোতহীন ও শান্ত হয়। এরই প্রভাবে শৈবাল সাগরের সৃষ্টি হয়েছে।
- উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যভাগে উপসাগরীয় স্রোত, ক্যানারি স্রোত, উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ঘড়ির কাটার দিকে চক্রাকারে আবর্তিত হওয়ায় শৈবাল সাগরের সৃষ্টি হয়েছে।
- এছাড়া উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের জাপান স্রোত,ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত এবং উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত মিলিত হয়ে শৈবাল সাগর সৃষ্টি হয়েছে।
- স্রোতহীন পানিতে ভাসমান শৈবাল, আগাছা সঞ্চিত হয় এবং সামুদ্রিক উদ্ভিদ জন্মে। এ কারণে একে শৈবাল সাগর বলা হয়।
ইতিহাসসম্পাদনা
সারগাসো নামটি মূলত সমুদ্রে জন্মানো শৈবাল বা "সারগাসাম" শব্দ থেকে এসেছে। পর্তুগিজ ভাষায় "সারগাসাম" অর্থ শৈবাল। ধারণা করা হয় ১৫ শতাব্দীতে পর্তুগীজ নাবিকদের আজোরেস দ্বীপ ভ্রমনের সময় এ সাগর মানুষের মাঝে পরিচিতি পায়। তবে কারো কারো মতে ১৫ শতকের পূর্বের নাবিকরাও হয়তোবা এ সাগর সম্পর্কে জানতো। কেননা ৪র্থ শতাব্দীর জনপ্রিয় কবি রুফুস ফেসটুস আভিয়েনুস তার কবিতায় আটলান্টিক মহাসাগরের কিছু অংশ শৈবালে ডাকা ছিল বলে ধারণা দেয়।
বৈশিষ্ট্যসম্পাদনা
- শৈবাল সাগর পৃথিবীর একমাত্র সাগর যার কোনো উপকূল নেই।
- এই সাগরের মধ্যে দিয়ে জাহাজ চলাচলে অসুবিধা হয়।
- এই সাগরের জলের ঘনত্ব ও লবণতা অন্যান্য সাগর অপেক্ষা বেশি হয়।
- এই সাগর স্রোতহীন, শান্ত প্রকৃতির হয়।
- উচ্চ তাপমাত্রা ও অধিক বাষ্পীভবনের কারণে শৈবাল সাগর আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে সবচেয়ে লবণাক্ত অঞ্চল (লবণাক্ততা ৩৭‰)।
- এ সাগরে আগাছার উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। কারো কারো মতে অ্যাজোর ও বাহামার তীরে এগুলোর উৎপত্তি হয় এবং ঢেউ ও বায়ু দ্বারা অন্যত্র বাহিত হয়। অন্যদের মতে, এসব আগাছা মেক্সিকো উপসাগরে সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে উপসাগরীয় স্রোত এগুলো শৈবাল সাগরে নিয়ে জমা করে।-২
- এই সাগরেই অবস্থিত বারমুদা ট্রায়াঙ্গাল।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ Administration, US Department of Commerce, National Oceanic and Atmospheric। "What is the Sargasso Sea?"। oceanservice.noaa.gov (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-১৯।
আরও পড়ুনসম্পাদনা
- আলম, কে. আশরাফুল (২০১৪), বৈশ্বিক পরিবেশের প্রাকৃতিক ভূগোল, পারফেক্ট পাবলিকেশন্স, ঢাকা, বাংলাদেশ, পৃ. ৯১৬।