শেখ তৈয়বুর রহমান
শেখ তৈয়েবুর রহমান (২১ অক্টোবর ১৯৩৬ — ১ জানুয়ারি ২০১৬)[১] ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ও আইনজ্ঞ ব্যক্তি, সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র। তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।[২]
শেখ তৈয়েবুর রহমান | |
---|---|
মেয়র, খুলনা সিটি কর্পোরেশন | |
কাজের মেয়াদ ২২ মে ১৯৯১ – ২৯ নভেম্বর ২০০৭ | |
পূর্বসূরী | এ কে এম ফজলুল হক মিয়াঁ |
উত্তরসূরী | মনিরুজ্জামান মনি |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | বাগেরহাট, পূর্ব বাংলা, ব্রিটিশ রাজ | ২১ অক্টোবর ১৯৩৬
মৃত্যু | ১ জানুয়ারি ২০১৬ খুলনা, বাংলাদেশ | (বয়স ৭৯)
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল |
দাম্পত্য সঙ্গী | লায়লা রহমান |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাশেখ তৈয়েবুর রহমান ১৯৩৬ সালের ২১ অক্টোবর বাগেরহাট সদরের কররী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ মতিউর রহমান ও মাতার নাম সাহিদা খাতুন। তিনি বাগেরহাট জেলা সদরের মধুদিয়া ইচ্ছাময়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ, বাগেরহাট পি.সি. কলেজ থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে এল.এল.বি. ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্ম জীবন
সম্পাদনা১৯৫৮ সাল থেকে তিনি নিজ গ্রামের মধুদিয়া ইচ্ছাময়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই বছর বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে উক্ত বিদ্যালয়ের কখনও সম্পাদক, সহ-সভাপতি ছিলেন। পরে সভাপতি হন এবং আমৃত্যু পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
১৯৬৩ সালে তিনি খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি গ্রামীণ কৃষকের উন্নতির জন্য কররী কৃষি ও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি গঠন করেন এবং এই সমিতির তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৩৪তম অধিবেশনে যোগদান করেন। ১৯৮০ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূত হিসেবে সেনেগাল ও তৎসহ মালি, মৌরতানিয়া, আইভরিকোষ্ট, সিয়েরালিয়ন, গিনি কোনাক্রী এবং গাম্বিয়ার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রদূত থাকাকালীন তিন বছর কূটনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সেনেগালের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক স্বীকৃতি স্বরূপ স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। তিনি বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত ও মেয়র হিসেবে যোগদান করেন।
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাশেখ তৈয়েবুর রহমান ১৯৬৫ সালে ন্যাপের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং খুলনা জেলার সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি খুলনা জেলা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি ছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পূর্বে তিনি সংগঠিত ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি টানা তিনবার খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে (১৭ বছর ১০ মাস) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের ২২শে মে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ২ বছর ৭ মাস দায়িত্ব পালন করেন। পুনরায় তিনি সরাসরি ভোটে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন এবং ১০ মার্চ ১৯৯৪ সালে তারিখে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন। ৫ মে ২০০২ তারিখে তিনি তৃতীয়বারের মত খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাশেখ তৈয়বুর রহমান লায়লা রহমানের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাদের তিন মেয়ে এবং এক ছেলে হয়।
মৃত্যু
সম্পাদনাশেখ তৈয়বুর রহমান ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে খুলনার নার্গিস মেমোরিয়াল ক্লিনিকে ভর্তি হন। সেখানে প্রায় ১০ মিনিট থাকার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।[৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "খুলনার সাবেক মেয়র তৈয়েবুর রহমান আর নেই"। বাংলা ট্রিবিউন। ২০২৩-০২-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-২১।
- ↑ "তৈয়বুর রহমানের কর্মজীবনে সফলতা ছিল বেশি"। সমকাল। ২০২১-০৭-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-১৭।
- ↑ "খুলনা সিটির সাবেক মেয়র তৈয়বুর রহমান মারা গেছেন"। জাগো নিউজ। ১ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০২৩।